২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ শাবান ১৪৪৬
`

ভিজিট ভিসার নামে মালয়েশিয়া আমিরাতে লোক যাওয়ার হিড়িক

নজরদারির অভাব, হুমকির মুখে বিদেশের শ্রমবাজার
-


দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিক যাওয়া বন্ধ হয়ে আছে। কবে নাগাদ খুলবে তারও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। শ্রমবাজার খোলার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও নেই। এই সুযোগে গ্রাম থেকে ঢাকায় আস্তানা গেড়ে বসা আদম ব্যাপারী চক্রের চিহ্নিত দালালরা নানা কৌশলে অবৈধপথে লোক পাঠাতে ‘বডি কন্ট্রাক্টে’ দেদার লোক পাঠানো শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর পুরো মিশন সাকসেস করতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পয়েন্টকে তারা ব্যবহারের চেষ্টা করছে। এই ক্ষেত্রে চক্রের সদস্যরা কখনো সফল হচ্ছে, আবার কখনো ব্যর্থ হচ্ছে। তবে দু’ দেশেই তাদের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের কারণে বাংলাদেশের বৈধ শ্রমবাজার এখন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
শুধু যে বৈধ শ্রমবাজারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা কিন্তু নয়, এসব প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া, আমিরাত, লিবিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পর চাকরি না পেয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। আবার অনেকেই পুলিশের হাতে আটক হয়ে রয়েছেন কারাগারে। আবার অনেকে উন্নত স্বপ্ন দেখতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে।

অভিবাসন ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিজিট ভিসার নামে মানবপাচার চক্রের উৎপাত এখনই থামানো উচিত। আর এই চক্রের তৎপরতা থামাতে হলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। অভিযোগ আছে, দালাল চক্রের সদস্যরা এসব বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীকে ম্যানেজ করেই ভিজিট ভিসার যাত্রীদের ‘বডিকন্ট্রাটে’ মালয়েশিয়া এবং দুবাইয়ে যাওয়ার জন্য ফ্লাইটে উঠার সুযোগ করে দিচ্ছেন যদিও ইমিগ্রেশন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, যাত্রীদের পাসপোর্ট, ভিসা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে তাদের যাত্রা বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মালয়েশিয়া থেকে ছেড়ে আসা একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে থেকে অন্তত ৩৫-৪০ যাত্রী ছিলেন যাদেরকে মালয়েশিয়ার শিপাং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ঢুকতেই দেননি। ঢাকা থেকে ভিজিট ভিসায় পাড়ি জমানো এসব যাত্রীদেরকে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ দেখেই সন্দেহ করেন, এরপর তাদের ঢোকার অনুমতি না দিয়ে ফিরতি ফ্লাইটে তুলে দেন। এর আগে তাদের এয়ারপোর্টে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। শুধু শুক্রবার রাতে নয়, প্রায় এক সপ্তাহ আগেও মালয়েশিয়ার ফ্লাইটে উঠতে যাওয়ার আগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক দেখে যাত্রা বাতিল করেন বলে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নিজেদের নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রতিদিন ভিজিট ভিসার নামে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, আমিরাত, কম্বোডিয়া রুটে লোক যাচ্ছে। বডি কন্টাক্টের মাধ্যমে এদের অনেকে চলে যাচ্ছে। আবার অনেকে আটকা পড়ছে। আবার কোনো ফ্লাইটের যাত্রীরা মালয়েশিয়া-দুবাই এয়ারপোর্ট গিয়ে সেখান থেকেও ফেরত আসছেন। গত শুক্রবার রাতে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ৩৮ জন যাত্রী ঢাকায় ফেরত এসেছেন। তাদেরকে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ঢুকতেই দেয়নি। অভিযোগ আছে, ভিজিট ভিসার নামে যারা মালয়েশিয়া, দুবাই যাচ্ছে তাদের নিরাপদে ফ্লাইটে উঠতে জনপ্রতি খরচ করতে হচ্ছে নগদ টাকা। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার জন্য ৩০-৪০ হাজার টাকা আর দুবাইয়ের ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। মালয়েশিয়াগামীদের ক্ষেত্রে স্টাফ গেট ব্যবহারের অভিযোগ আছে। অপরদিকে দুবাইয়ের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ভিআইপি গেট দিয়ে চুরি চামারি করে ঢুকানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। তাদের দেখা মতে, প্রতিদিন ভিজিট ভিসার নামে লোক যাচ্ছেই।

গতকাল রাত সোয়া ৭টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। এর আগে শাহিনুর চৌধুরীর নম্বরে কল দেয়া হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওসির মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেন, এসব বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে পারবেন না। তবে গতরাতে ঢাকার বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের কিছু কর্মকর্তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে ভিজিট ভিসা নিয়ে কেউ বিদেশে যেতে চাইলে আমরা আইন অনুযায়ী তাদের যাত্রা বাতিল করতে পারি না। কারণ তাদের পাসপোর্টে ভেলিড ভিসা আছে। যদি ওই যাত্রীর বিষয়ে ওপর থেকে কোন নির্দেশনা থাকে তাহলেই কেবল আমরা তার যাত্রা বাতিল করতে পারি, অন্যথায় না। গতকাল সোমবার রাতে কুয়ালালামপুর থেকে বাংলা প্রেস ক্লাব মালয়েশিয়ার সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক আহমাদুল কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার ভ্রমণ পিপাসুদের আমন্ত্রণ জানাতে সব সময় প্রস্তুত। তবে ভিজিট ভিসার নামে মালয়েশিয়ায় এসে যারা ফিরে যাবে না তাদের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট খুবই কঠোর। তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যেকোনো যাত্রীকে দেখলেই বুঝতে পারেন, সে কি ট্র্যাভেলার নাকি কাজ করতে এসেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার মতে, মালয়েশিয়ার বৈধ শ্রমবাজার খোলার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসন। এটি বন্ধ করতে হলে অবশ্যই ঢাকার এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তব্যরত ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নজরদারি আরো বাড়ানো উচিত। তাহলেই অবৈধ অভিবাসন কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার শুধুমাত্র সিন্ডিকেট করে শুরু করায় শ্রমবাজারটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল পর্যন্ত নতুন করে আবার শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে দুই দেশের যৌথ ওয়াক্র্ংি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও সেটি কবে নাগাদ হবে সেই ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কেউ কোনো কথা বলছেন না। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে আছে। এই শ্রমবাজারটিও বন্ধের অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপো-২০তে ইউএই এর পক্ষে ভোট না দিয়ে রাশিয়াকে ভোট দিয়েছিলেন। এরপরই দেশটির সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আর এই ভোট না দেয়ার বিষয়টিও ওপেন সিক্রেট ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement
হৃদয়ের সেঞ্চুরি, লড়াই করার পুঁজি পেল বাংলাদেশ টিকটক ভিডিও বানাতে নিষেধ করায় অভিমান করে স্ত্রীর আত্মহত্যা নাসিরনগরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নারীসহ আহত শতাধিক চাকরিচ্যুত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিষয়ে রায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউরোপকে জেগে ওঠার আহ্বান গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শিল্পসচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর মুন্সীগঞ্জে আবারো ৪ কঙ্কাল চুরি গ্রিনল্যান্ড অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা উচিত : ট্রাম্প তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা ইসরাইলের লাগাতার হামলার কারণে তোমাদের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি সাভারে গোডাউনে আগুন, আড়াই ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে

সকল