বিকৃত বিচারের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিয়েছে
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫২, আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৯
দীর্ঘ ৮ বছর গুমের শিকার বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম আরমান বলেছেন, আমার বাবাকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রক্রিয়ার পুরোটাই রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার বিবেচনায় নিয়েছেন যে কারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, এরপর তাদের বিকৃত বিচারের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনের সাজানো বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়ের ১৩ দিন আগে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কনিষ্ঠ ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম আরমানকে। এরপর ৮ বছর তাকে কোথায় কিভাবে রাখা হয়েছে তার কোনো খোঁজ কেউ পায়নি। তিনি জীবিত না মৃত তা-ও ছিল অজানা। ব্যারিস্টার আরমান আয়নাঘরে তার আট বছরের ভয়াবহ বন্দী জীবনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া এডিটর যুবরাজ ফয়সল। সাথে ছিলেন নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী। সাক্ষাৎকারটির শেষ পর্ব আজ পাঠকদের জন্য দেয়া হলো।
নয়া দিগন্ত : আট বছরে এমন কোনো দিন আছে কি যা আপনাকে এখনো স্মৃতির পাতায় বারবার ফিরিয়ে নিয়ে আসে?
ব্যারিস্টার আরমান : গুম জীবনে আমি তাদের বারবার বলতাম যে আমি মেনে নিলাম আমাকে ছাড়বেন না আপনারা, আমি মেনে নিলাম যে আমাকে নামাজের সময়টাও জানতে দেবেন না; কিন্তু আমি একজন মুসলমান, আপনারাও হয়তো তাই, ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে, আমি আমার সৃষ্টিকর্তাকে যেন বুঝতে পারি, ইবাদত করতে পারি, নামাজটা পড়তে পারি, আমাকে অন্তত কুরআন শরীফটা দেন। কিন্তু তাদের একই কথা আপনাকে কিছুই দেয়া যাবে না। উপরের আদেশ। এক থেকে দেড় বছরের মাথায় আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। খিঁচুনি উঠে যায়। মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাই। ডাক্তারদের অ্যানালাইসিস ছিল খুব সম্ভবত আমি ট্রমা থেকে মারা যাবো। কিন্তু ওপরের নির্দেশ ছিল আমাকে মরতে দেয়া যাবে না। আবার বাঁচতেও দেয়া যাবে না। কিন্তু আমি মরে যেতে পারি এ আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত আমাকে একটি কুরআন শরিফ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেদিন আমি কুরআন শরীফ হাতে পাই সেদিন আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন ছিল। কুরআন শরীফটি বুকে জড়িয়ে ধরে আমি সারা দিন কেঁদেছিলাম, আমার মনে আছে। আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। বাকিটা সময় আমি কুরআন শরীফ পড়িয়ে দিন কাটাতাম। যতটুকু সুস্থ আছি কুরআনের বদৌলতে আছি। যতটুকু সুস্থ আছি আল্লাহর স্মরণের কারণে আছি। ওটাই আমার সবচেয়ে স্মরণীয় দিন যেদিন আমাকে কুরআন শরীফ দেয়া হয়।
নয়া দিগন্ত : তারুণ্যের বাংলাদেশে এখন। গত ৫ আগস্টের পর যখন আপনি মুক্তি পেলেন তারপর থেকে তরুণদের নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ব্যারিস্টার আরমান : প্রথমত নতুন জেনারেশন নিয়ে আমার ও আমার মুরব্বিদের মধ্যে যে ভুল ধারণা ছিল, বিশেষ করে জেন জি যারা, তারা সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে বসে থাকে, ট্যাব নিয়ে বসে থাকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বিচরণ, বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করে আমরা শুনেছি, তাদের বলা হয় ফার্মের মুরগি। সবাইকে অবাক করে তারা দেখিয়ে দিলো যে পুলিশের সামনে তারা দাঁড়িয়ে গেছে। আমি তো চিন্তাও করতে পারিনি বাইরে কি হচ্ছে? আমি যখন বের হয়ে আসি তখন জানি না যে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। মনে আছে যখন জানতে পারলাম, কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসলাম, ভিডিও দেখছি, গুলি চলছে তারা দাঁড়িয়ে আছে। চিন্তাও করতে পারি না কোথা থেকে তারা সাহস পেল। শিশুদের মা-বাবারা, তারা সন্তানদের গুলির সামনে এগিয়ে দিচ্ছে। চিন্তা করতে পারিনি যে বাংলাদেশের মাটিতে এটা দেখতে পাবো। যখন আমি অন্ধকার কোটরে বন্দী ছিলাম তখন দেশের ব্যাপারে খুব অভিমান কাজ করত। আমি দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছি, সুযোগ ছিল দেশের বাইরে থেকে যাওয়ার, আমরা দেশের জন্য কাজ করতে দেশে ফিরে এসেছি। আমাদের সাথে এই আচরণ হলো। আমাদের সাথে এ ধরনের অন্যায় করা হলো। কিন্তু সব অভিমান ভেঙে গেছে এই তরুণ-তরুণীদের আত্মত্যাগ দেখে। আজও তরুণ প্রজন্ম জেন জি’কে দেখে আবার আশায় বুক বাঁধছি। এরা যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কর্ণধার হয় তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ইনশাআল্লাহ। এই তরুণ প্রজন্ম দেখিয়ে দিলো এরা দেশের জন্যে আবার রক্ত দিতে পারে। কোনো স্বৈরশাসকের হুঙ্কার, বুলেট, বোমা তারা তোয়াক্কা করে না। এই সাহসী তরুণ-তরুণীদেরকে দেখে আমি আবার সাহস পাই। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এরা যখন নেতৃত্বে আসবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।
নয়া দিগন্ত : আপনি একজন নামকরা ব্যারিস্টার। আইনজীবী হিসেবে ফের আপনি আইন নিয়ে কাজ করবেন কি?
ব্যারিস্টার আরমান : ইনশাআল্লাহ। দীর্ঘ আট বছর ট্রমার কারণে আমি এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছি। আমাকে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা আমাকে অ্যাডভাইস করেছেন ধীরে ধীরে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসার জন্য। আমার শারীরিক যে ক্ষতি হয়েছে, পাশাপাশি মানসিক যে ট্রমা গিয়েছে এটার জন্য সময় নিতে হবে। ইনশাআল্লাহ চিকিৎসকরা আমাকে যখন ছাড়পত্র দেবেন তখন আমি আইন অঙ্গনে ফের ফেরত আসতে চাই। আমার মনে আছে যখন ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসি তখন আমার বন্ধুরা বলেছিল, তুমি কেনো এখানে প্র্যাকটিস ছেড়ে ফেরত যাচ্ছ, তুমি তো এখানে কোটি কোটি টাকা ফি পাবো। কেনো তুমি গরিব দেশে ফেরত যাচ্ছি। আমি বলতাম যে মানুষের অধিকার ফেরত দেয়ার জন্য ফেরত যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষ তাদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার পাচ্ছে না। এই অধিকার পাওয়ার জায়গা হচ্ছে আইন বিভাগ। অধিকার ফিরে পাওয়ার জায়গা হচ্ছে আদালত, বিশেষ করে উচ্চ আদালত। এখানে মানবাধিকার রক্ষা করার আইনি ম্যান্ডেট তাদের হাতে আছে। আমি বাংলাদেশের মানুষকে তাদের অধিকার ফেরত দেয়ার জন্য দেশে ফেরত এসেছিলাম। দুঃখজনক হলেও সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার আমি হয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে বেঁচে ফেরত আসার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আবার সেই অধিকার প্রয়োগের জায়গায় ফেরত যেতে চাই। আমি কাজ করতে চাই বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে। বাংলাদেশের তরুণ আইনজীবীদের নিয়ে। এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক জানে তাদের আইনি অধিকার কি? তারা যখন দেখবে যে আইনের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, তারা যেন সোচ্চার হয়, জুলাই বিপ্লবের মতো তারা যেন আবার প্রয়োজনে ভবিষ্যতে তাদের অধিকার কখনো লঙ্ঘন হয়, তারা যেন ফের সক্রিয় হতে পারে। এ জন্য আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি করা আমার একটা স্বপ্ন। বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণ তরুণী প্রাথমিক শিক্ষার পর এটাও জানবে কোনটা তার সাংবিধানিক অধিকার। এবং যে পর্যায় থেকে তাদের ব্যক্তিগত অধিকার, পারিবারিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাদের সামজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে কেউ কখনো বঞ্চিত করতে চায়, তারা সেটা রুখে দাঁড়াবে। তাদের শৈশব থেকে এ চেতনা তাদের মধ্যে জাগরুক থাকবে যে আমার অধিকার কেড়ে নেয়ার অধিকার কারো নাই। এটা আমার স্বপ্ন, আমার বিশ্বাস, আমি এটা নিয়ে কাজ করতে চাই।
নয়া দিগন্ত : আপনার বাবা বাংলাদেশের একজন নামকরা ব্যক্তিত্ব, একেবারে শেষ সময়ে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে আপনার বাবার সাথে কি কথা হয়েছিল?
ব্যারিস্টার আরমান : মজার ব্যাপার হচ্ছে যে আমার পিতা যেহেতু একজন উদ্যোক্তা ছিলেন, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, সেই কারণে অনেক বড় ব্যবসায়ীদের সাথে ওনার পরিচিতি ছিল। এ রকম যারা ব্যবসায়ী বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তারা আমার গুম হওয়ার আগে বারবার আমাকে বলেছিলেন তুমি দেশের বাইরে চলে যাও। আমার মনে আছে আমার পিতার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, সর্বশেষ, আমার গুম হওয়ার তিন থেকে চার দিন আগে। তখন আমার পিতা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কি মনে হয়, তুমি কি করতে চাও? আমি তখন বলেছিলাম, আমার পক্ষে তোমাকে এভাবে রেখে যাওয়া সম্ভব নয়। একটা সন্তানের পক্ষে পিতাকে ফাঁসির কাষ্ঠের সামনে রেখে নিজেকে সেফ হওয়ার কোনো উপায় নেই। সম্ভব বলে আমি মনে করিনি। কিন্তু উনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে থাকে। আল্লাহ রক্ষাকারী, আল্লাহই হেফাজতকারী। শেষ মুহূর্তে ওনাকে আমি আল্লাহর ওপর অবিচল বিশ্বাস রাখতে দেখেছি। উনি তকদিরে বিশ্বাসী ছিলেন। জীবন মৃত্যু আল্লাহ হাতে। যখন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় তখন উনি বিদেশে অবস্থান করছিলেন। উনি ইচ্ছা করলে বিদেশে থেকে যেতে পারতেন। আর যাই হোক ওনাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হতো না। উনি ফিরে এসেছিলেন।
কেন ফিরে এসেছেন উনি সে ব্যাপারে দুটো কথা বলতেন। প্রথমত, বলতেন আমি যদি ফিরে না আসতাম তখন সবাই মনে করত যে আমি দোষী, আল্লাহ সাক্ষী যে আমার হাত দিয়ে কোনো মানুষের প্রতি অন্যায় হয়নি। কোনো মানুষের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমি যে নির্দোষ এটা প্রমাণ করার জন্য আমি ফেরত এসেছি। দ্বিতীয়ত, উনি খুব অশান্ত ছিলেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পর মানুষ এত নির্দয় হবে উনি বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু আমরা দেখলাম সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা উপেক্ষা করে, রীতিমতো গায়ের জোরে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারবহিভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন উনি। আমরা যারা এই প্রক্রিয়ায় আমাদের পিতাকে হারিয়েছে, আমাদের একটা দাবি থাকবে যে, এই আইনটাকে এমনভাবে পুনর্বিবেচনা করা হোক, এই অন্যায়ে যাদের বিচার হয়েছে, সেই বিচারগুলোর পুনর্বিচার করার একটা সুযোগ যেন তৈরি হয়। রিট্রায়াল অথবা জুডিশিয়াল রিভিউ যাতে করা হয়, যেন এটা ঠিক হয়েছিল কি না তা আবার নিরূপিত হয়। এখন বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের কাছে এটা পরিষ্কার যে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে কাজ করতে পারেনি। প্রধান বিচারপতিকে জীবনের হুমকি দিয়ে দেশ থেকে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যদি উনি না যেতেন তাহলে ওনাকে হত্যা করা হতো। এই প্রক্রিয়ায়, এই পরিস্থিতিতে যেসব বিচার হয়েছে- সেটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে ন্যায়বিচার হয়নি। আমার পিতার সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে এটার পুনর্বিচার করা উচিত। এমনকি আইনি সংশোধন করা উচিত যাতে আবার বিচার বিভাগ এসবকে পর্যালোচনা করতে পারে যে বিচার সঠিকভাবে হয়েছিল কি না।
নয়া দিগন্ত : মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায়ের জন্য কারা কিভাবে কাজ করেছে বলে আপনার ধারণা?
ব্যারিস্টার আরমান : আমি প্রাথমিকভাবে মনে করি পুরোটাই রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার বিবেচনায় নিয়েছেন যে কারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। আর এই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাদেরকে ঘায়েল করলে অনির্দিষ্টকাল তারা রাজনৈতিক ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারবে। এই ভীতিতেই তারা বাছাই করেছিল কাদেরকে এই বিচারের নামে প্রহসনের সম্মুখীন করা হবে। তারা একাত্তরে কী ছিল, কী করেছিল তা একেবারেই বিবেচ্য বিষয় ছিল না। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার ব্যাপারে বাধা হতে পারে, তারাই ছিল এই বিচারবিভাগের টার্গেট। আর আমার পিতা একজন সফল উদ্যোক্তা, একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, একাধিক গণমাধ্যম তিনি পরিচালনা করতেন, একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে সত্য, সত্য প্রকাশ পেলে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার টিকে থাকতে পারে না। সারা বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রথম টার্গেট হয় গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীরা। আমরা এটাই দেখেছি এখানে। যেহেতু তিনি উদ্যোক্তার পাশাপাশি গণমাধ্যমে তার অবস্থান ছিল এ জন্য উনি টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন। তাকে হত্যার করার মাধ্যমে তিনি যেসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন, সেগুলোকে অবৈধভাবে দখল করে ফেলা তাদের জন্য সহজ হবে বলে তারা মনে করেছিল। আমি মনে করি ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তাদের রাজনৈতিক দোসররাই আমার পিতার হত্যার জন্য দায়ী।
নয়া দিগন্ত : শহীদ মীর কাসেম আলীর কোন আদর্শ সবচেয়ে বেশি আপনার কাছে অনুসরণীয়?
ব্যারিস্টার আরমান : তিনি সবচেয়ে বেশি যেটা মনে করতেন, আমাদের বলতেন যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি সরাসরি আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্ত একটি রাষ্ট্র। বিচারের শেষ দিকে যখন খুব হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি, দেখি যে আইনকানুন না মেনে গায়ের জোরে কোনো এভিডেন্স না দেখে যা খুশি তাই করা হচ্ছে। তখন তিনি আমাদের দুষ্টুমি করে বলতেন, ‘বাবা বাংলাদেশের ফাইলটা না আল্লাহ নিজে দেখেন’। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তার কাছে থাকতে পারিনি। কিন্তু পরিবারের সবার মুখে শুনেছি তিনি হাসিমুখে সবাইকে বিদায় জানিয়েছেন। বাংলাদেশ নিয়ে তিনি খুব আশাবাদী ছিলেন। যখন বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে ফাঁসি দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে তিনি তার আশাকে ছেড়ে দেননি। হাসিমুখে তিনি ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। আর আমাদের আশা দিয়ে গেছেন যে বাংলাদেশের ভাগ্য আল্লাহ নিজে দেখছেন। বাংলাদেশের ফাইল আল্লাহ নিজে দেখছেন। এই যে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার আশাবাদ এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় আদর্শ। বাংলাদেশ একটি উজ্জ¦ল সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থান উল্লেখযোগ্য। আর অর্থনৈতিকভাবে যে বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এটাও কিন্তু বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি সম্ভাবনাময় দিক। তিনি বিভিন্ন সময় বলতেন যে, রাষ্ট্র যত বেশি অন্যায় করুক, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ¦ল। তার এই আদর্শই বুকে লালন করি সব সময়।
নয়া দিগন্ত : শহীদ মীর কাসেম আলীর স্মৃতিবিজড়িত হয়ে তার আদর্শের অনুসারীদের জন্য কিছু বলবেন?
ব্যারিস্টার আরমান : তার খুব স্বপ্নের একটি প্রজেক্ট ছিল নয়া দিগন্ত। তিনি বলতেন এমন একটা জায়গা থাকবে যেখানে মানুষ নির্ভয়ে কথা বলবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশের গণমাধ্যম এমন কিছু লোকদের দ্বারা ডমিনেটেড যারা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের ও প্রাণের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির যে মূল্যবোধ সেটাকে গণমাধ্যমের বড় একটা অংশ অনৈতিকভাবে চাপিয়ে রেখেছিল। নয়া দিগন্ত হচ্ছে সেই মূল্যবোধের ঝাণ্ডাবাহী, যেখানে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের যে চিন্তা তার প্রকাশ ঘটে। আলহামদুলিল্লাহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের মধ্যে নয়া দিগন্ত টিকে আছে এটা আল্লাহর একটা অশেষ নেয়ামত। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে নয়া দিগন্ত আছে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন নয়া দিগন্তের মাধ্যমে হবে। আমি আশা করি নতুন প্রজন্ম নয়া দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা