ছয় মাসেও আপিলে নিষ্পত্তি হয়নি তত্ত্বাবধায়কসহ ৩ মামলা
- হাবিবুর রহমান
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ছয় মাস পার হলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়নি বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন (রিভিউ), জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা এবং মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আবেদন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রিভিউ আবেদনের শুনানি দুই সপ্তাহ মুলতবি করা হয়। অন্যদিকে এ টি এম আজহারুল ইসলামের রিভিউ আবেদনের শুনানি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি। আর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে আপিলের ওপর দুই দিন শুনানি হওয়ার পর মুলতবি রয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রিভিউ শুনানি: তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদনের ওপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তির করা চারটি আবেদনের শুনানি দুই সপ্তাহ পিছিয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেন।
ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মো: রুহুল কুদ্দুস উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ আবেদনগুলো শুনবেন। তাই আবেদনগুলোর শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আবেদনকারীর পক্ষে সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় পুনর্বিবেচনার আবেদনগুলো গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।
গত ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৩ অক্টোবর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিকও রিভিউ চেয়ে আরেকটি আবেদন করেছিলেন। তারা হলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ আপিল মঞ্জুর করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন।
এ টি এম আজহারের রিভিউ শুনানি : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আবেদন শুনানি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ধার্য রয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। রিভিউ আবেদনের বিষয়টি শুনানির জন্য উত্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তখন আদালত বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য রাখা হলো। সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের সাথে ছিলেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, ইমরান এ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগের বেঞ্চের একজন বিচারপতি না থাকায় শুনানির তারিখ পিছিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে ৯ জানুয়ারি আদালতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, তিনি ১০ বছর ধরে মৃত্যুর সেলে আছেন। জরুরি ভিত্তিতে উনার রিভিউ আবেদন শুনানি করা দরকার। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ২৩ জানুয়ারি এ টি এম আজহারুল ইসলামের আবেদন শুনানির জন্য তালিকার শীর্ষে থাকবে বলে আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১৯ জুলাই খালাস চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করেছিলেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে উনার খালাস চাওয়া হয়।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের শুনানি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ওপর দুই দিন শুনানি হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ১৪ জানুয়ারি শুনানি শেষে ২১ জানুয়ারি পরবর্তী দিন রাখা হলেও এরপর আর শুনানি হয়নি।
আদালতে আপিল আবেদনের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও অ্যাভোকেট আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
শুনানির বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, নিবন্ধন দিলে তো কারো প্রতি কোনো অন্যায় করা হচ্ছে না। বরং নিবন্ধন না দিলে হাজার হাজার মানুষ ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে যদি নিবন্ধন না দেয়া হয় দেশের কয়েক কোটি লোক ভোট দেয়ার কোনো অধিকার পাবে না। এই লোকগুলো কথায় ভোট দেবে। তাদের ভোটাধিকার কি হবে। তাদের যে সমর্থন আছে, সেটা ১০ শতাংশ বলি বা যেটাই বলি তাদের লোক কি তাদের ভোট দেবে না। ভোট দেবে কি করে?
গত ২২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেন।
অপরদিকে গত বছরের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় জামায়াতে আপিল খারিজ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) করে আদেশ দেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা