১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ শাবান ১৪৪৬
`
ইসির প্রতি জামায়াতের বক্তব্য

প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন নয়

ইসি ভবনে নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা : নয়া দিগন্ত -

আমরা ২৩টি পয়েন্টে ইসির কাছে আমাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি। সংস্কার ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যাবে না। নির্বাচন করার জন্য যে সংস্কার লাগে সেটুকুর জন্য জামায়াতে ইসলাম সময় দিতে প্রস্তুত। তবে আমরা পুরো সংস্কারের কথা বলছি না বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, আমরা বলেছি নো ইলেকশন উইদাউট রিফর্ম। অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে রাষ্ট্রের যেসব বিভাগ ও অর্গান জড়িত সেগুলো সংস্কার করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে এই নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। অবাধ হবে না। পূর্বের যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এ দেশের জনগণ ২ হাজার ছাত্রজনতার জীবণ এবং প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রজনতার রক্ত বৃথা যাবে।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল ইসির সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। এর আগে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবের সাথে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক করেন। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিমউদ্দিন সরকার, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ০ডভোকেট ইউসুফ আলী, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আলোচনায় প্রতিনিধি দলে ছিলেন। উল্লেখ্য, দীর্ঘ এক যুগ পরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে বৈঠক করল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। আমরা লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছি। আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছি। তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা করেছি। ২৩টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করার সক্ষমতা জামায়াতের আছে। আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী প্রস্তুত করে ফেলেছি। প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। অফিসিয়ালি ঘোষণা হয়নি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, এই জন্যই আমরা বলেছি নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করতে যতটা সংস্কার লাগে, আমরা পুরো রাষ্ট্রের সংস্কার বলিনি। এখানে অনেকে ভুল বোঝার চেষ্টা করেন। এটা করতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এটা নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এটা দায়িত্ব নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার প্রয়োজনে যে সংস্কারটুকু ন্যূনতম প্রয়োজন তার জন্য যতটুকু সময়ের যৌক্তিক প্রয়োজন হবে জামায়াতে ইসলামী দিতে প্রস্তুত। আমরা কোনো দিন মাস ক্ষণ বেঁধে দেইনি। জামায়াতে ইসলামীর পূর্বের যে অবস্থান, জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান প্রথম থেকেই নির্বাচনের দিন ক্ষণের ব্যাপারে যে অবস্থানের কথা জাতির সামনে ব্যক্ত করেছেন, আমরা আজকেও সে অবস্থান ব্যক্ত করেছি।
নিবন্ধনের ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে গোলাম পরওয়ার বলেন, এ প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি। এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমাদের নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতে পেন্ডিং আছে। আদালতে সেটার শুনানি চলছে। আমরা আশা করছি, আদালতে ইনশাআল্লাহ ন্যায়বিচার পাব।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে জামায়াত নেতা বলেন, আমরা ইসিকে পরামর্শ দিয়েছি জনগণ চায় স্থানীয় সরকার কাঠামোকে সচল ও সক্রিয় করতে। স্থানীয় সরকারের ও গ্রামীণ অবকাঠামোতে উন্নয়ন। আইনশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ কমাতে। জনগণের আকাক্সক্ষাই হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা আগে হোক। আমরা জনগণের এই আকাক্সক্ষার সাথে সমর্থন ও সম্মান ব্যক্ত করেছি। তিনি বলেন, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সরকারে যে কমিশন গঠন করেছিল তারা আমাদের কাছে লিখিত প্রস্তাবনা চেয়েছিলেন। আমরা তাদের লিখিতভাবে তা দিয়েছি। তার থেকে কিছু কিছু বিষয় আজ আমরা এখানে পেশ করেছি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রস্তাবনায় আমরা বলেছি, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হারে যে নির্বাচন ব্যবস্থা আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের ৬০র বেশি দেশে প্রচলিত আছে, নির্বাচনকে কালো টাকা ও পেশিশুক্তির হাত থেকে মুক্ত করে অবাধ ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন, দক্ষ সাংসদের বা আইন প্রণেতাদের দ্বারা যদি সংসদ পরিচালিত করতে হয় তাহলে এই পদ্ধতিটা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী। তিনি বলেন, আমরা বলেছি আরপিওতে ৯১(এ) যে অনুচ্ছেদ আছে সেটা গত সরকার বেআইনিভাবে নির্বাচন কমিশনের অধিকারকে খর্ব করেছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারা খর্ব করেছিল। আমরা বলেছি ওটাকে পুনর্বহাল করতে হবে। যেকোনো নির্বাচনে অনিয়ম হলে ওই আইনে এখতিয়ার হয়েছিল তারা আংশিক বা পুরো নির্বাচন বাতিল করতে পারে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গত সরকার এটাকে বাতিল করেছিল।
প্রবাসীদের ভোটের ব্যাপারে জামায়াতের প্রস্তাবনা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রবাসী ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় এক কোটিরও বেশি ভোটার আমাদের প্রবাসে। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে যে প্রক্রিয়া চলছে সেখানে প্রশাসনিক অফিস, ইউএনও, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে অনেক ফাইল পেইন্ডিং পড়ে আছে, নানান ইস্যুতে। সেগুলোকে নিরসন করার জন্য আমরা বলেছি। তিনি বলেন, আরেকটি মৌলিক ব্যাপারে কথা বলেছি, সেটা হলো সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের রাজনীতি করার এবং রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার আছে। নিবন্ধন আইন যেটা করা হয়েছে, যার ভিত্তিকে ২০০৮ সালের পর থেকৈ রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতো কঠিন শর্ত দিয়ে এই আইন করা হয়েছে যে, এতো শর্ত দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। এই জন্য আমরা বলেছি এই আইন বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এটা বাতিল করা উচিত। রাজনীতি ও দল করার অধিকার সকলেরই আছে।
দলের প্রতীকের বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, আমাদের দলীয় প্রতীক তো আছেই। আশা করি আমরা আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাব। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত যারা তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি বা অবসরের কমপক্ষে তিন বছর পূর্ণ না হলে নির্বাচনের যোগ্য করা যাবে না।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে একমত কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার একটা সম্ভাব্য ধারণা দিয়েছে। তারা যদি তাদের ঘোষিত সময়ে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণ শেষ করে ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন দিতে পারেন তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তিনি বলেন, মাস আমাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়। সংস্কার পূর্ণ করে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা সেটার জন্য যে মাস লাগে আমরা তাতে প্রস্তুত আছি।
জাতিসফঙ্ঘর মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা গুম, খুন নিয়ে যে তদন্ত করেছে সেখানে জামায়াতের পক্ষ থেকে তারা কোনো সহযোগিতা পায়নি। এই বিষয়ে আপনাদের দলের অবস্থান কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি নিয়ে গতকালকে আমরা গণমাধ্যমে কথা বলেছি। এই তথ্য সঠিক নয়। আমরা চেক করে দেখেছি। আমরা জাতিসঙ্ঘ হিউম্যান রাইটস কমিশনের সাথে তথ্য, যত ফ্যাক্স, যত মেইল সব আমরা রেসপন্স করেছি। এই তথ্যটা কিভাবে এসেছে আমরা চেক করব। আমরা তথ্য যাচাই করেছি, তথ্যটা সঠিক নয়।
নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সাথে বোঝাপড়া আছে কি না, তারা আগে জাতীয় নির্বাচন চান আপনারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চান, প্রেেশ্নর জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একটা গণতান্ত্রিক দেশে নানা বিষয়ে তো ভিন্ন মত তো থাকতেই পারে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য নাই। আমরা একটা মত দিয়েছি, তার সাথে আরেকটা রাজনৈতিক দলের ভিন্ন মত তো থাকতেই পারে। এটা হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন বাতিলের আগে নির্বাচন কমিশনে দলটির সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর। সে সময় নিবন্ধন বাঁচাতে দলটি গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে জমা দিয়েছিল। ওই দিন তৎকালীন আইনবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার সংশোধিত গঠনতন্ত্রের মুদ্রিত কপি কমিশনে জমা দেন।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট আদালত জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির সাথে বর্জন করে। ২০১৫ সালে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দিলে স্থানীয় নির্বাচনেও জামায়াতের ভোটে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালের এসে সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকেও দলটির প্রতীক বাদ দেয় ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নূরুল হুদার কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তৎকালীন ইসি সচিব মো: হেলালুদ্দীন আহমদের ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement
হাসিনার কলরেকর্ড ট্রাইব্যুনালে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে উত্তাল তিস্তা অববাহিকা বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকার পাবে : তারেক রহমান গাজায় ২৬৬ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন ইসরাইলের সৌদি থেকে আউট পাসে ফেরত আসছেন শত শত বাংলাদেশী জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এ টি এম আজহারকে মুক্ত করে আনবে : ডা: শফিক তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিতে চায় চীন : রাষ্ট্রদূত ওয়েন পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কে চলতে হবে ভারতের উচিত হাসিনাকে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয়ায় ‘নিষেধ’ করা সব চাপ উপেক্ষা করে জন-আকাক্সক্ষা পূরণের বার্তা নিয়ে ফিরলেন ডিসিরা

সকল