১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ শাবান ১৪৪৬
`

হাসিনার বিরুদ্ধে তিন-চারটি মামলার রায় অক্টোবরের মধ্যে

জুলাই-আগস্টে গণহত্যা-মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা
-


জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে তিন-চারটির রায় অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। গতকাল সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ আশাবাদের কথা জানান। এসব মামলায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা, শীর্ষস্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা আসামি হিসেবে রয়েছেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের যে বিচার, সেই বিচারের অগ্রগতি কী হয়েছে সেটা জানতে চান অনেকে। একটি কমন (সাধারণ) অভিযোগ হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এ ধরনের অসন্তুষ্টির কথাও অনেকে বলেন। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর এরই মধ্যে এ আদালতে বিচারের যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আদালত পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করেছেন চার মাস আগে। এর মধ্যে আদালতে ৩০০টির বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমাদের প্রসিকিউশন টিম যাচাই-বাছাই করে ১৬টি মামলা দায়ের করেছে আনুষ্ঠানিকভাবে। এই ১৬টি মামলার মধ্যে চারটির তদন্ত কাজ এ মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আমরা আশা করি। এরপর চার্জশিট গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, আইন অনুযায়ী বিচারকাজ শুরু হওয়ার আগে তিন সপ্তাহ সময় প্রস্তুতির জন্য ডিফেন্স আইনজীবীদের দিতে হয়। আমরা আশা করছি, এই তিন সপ্তাহ সময় অতিবাহিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্যগ্রহণের যে প্রক্রিয়া, সেটি আপনারা খুব ঘন ঘন দেখবেন। এই তিন সপ্তাহ সময় শেষ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে ঈদের পরপর অর্থাৎ এপ্রিল মাস থেকে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, আদালতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) অব্যাহতভাবে শুনানি হয় বলে সব মামলার রায় পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে শুরু করে পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে হবে বলে আশা করি। সেই হিসাবে অক্টোবরের মধ্যে তিন থেকে চারটি মামলার রায় পেতে যাচ্ছি বলে আশা রয়েছে। তিনি বলেন, এটা বিচারিক প্রক্রিয়ার ব্যাপার। কিন্তু তদন্ত টিম বিশেষ করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের সাথে কথা বলে আমার এই ধারণা হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে জাতিসঙ্ঘের তদন্ত টিমের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি এই রিপোর্টের ব্যাপারে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলব না। তবে একটা জিনিস বলে রাখি, তাদের এই রিপোর্ট আমাদের তদন্ত কাজ ও বিচার কাজকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার পাশাপাশি স্বচ্ছ ও সহজ করতে অবদান রাখবে।
শেখ হাসিনাকে কি ভারত ফেরত দিবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই আইনে যারা পলাতক আছেন, তাদের বিচারের বিধান রয়েছে। আমরা তাকে (শেখ হাসিনাকে) আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে ভারতের মনোভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে নানান অজুহাতে তারা এটাকে নাকচ করার চেষ্টা করবে। এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল জানান, পুরো বিচার শেষ হতে ট্রাইব্যুনালের এক থেকে দেড় বছর সময় লাগছে।

আইন উপদেষ্টা আরো বলেন আওয়ামী লীগের আমলে ট্রাইব্যুনালে একেকটি মামলার বিচারে আড়াই বছর সময় লেগেছিল। তবে বর্তমানে এত সময় লাগবে না। অনেক কম সময়ের মধ্যে রায় দেয়া সম্ভব হবে। গণহত্যার দ্রুত বিচারের জন্য প্রসিকিউশন টিম দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।
সাইবার সিকিউরিটি আইনের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসংক্রান্ত ৩৯৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে ৩৩২টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি ৬১টি মামলা ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রত্যাহার হয়ে যাবে। আর ৩টি মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় প্রত্যাহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলা : গায়েবি মামলা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগের আমলের ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলার মধ্যে এক হাজার ২১৪টি মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। এর মধ্যে ৫৩টি মামলা আজকালের মধ্যে প্রত্যাহার হবে। মামলা প্রত্যাহারের ইস্যুতে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ওনাদের সঙ্গে কাজ করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, গায়েবি মামলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ আমলে নিপীড়নের উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলা।
পাসপোর্ট ছাড়াই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে পারবেন প্রবাসীরা : আইন উপদেষ্টা বলেন ২০১৫ সালের পাওয়ার অব এটর্নি বিধিমালা নিয়ে প্রবাসীরা প্রচুর অভিযোগ করত। এই বিধিমালা অনুযায়ী কেউ যদি পাওয়ার দিতে চাইতো তবে তার পাসপোর্ট থাকতে হতো, বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে তাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হতো। প্রবাসীদের সন্তানরা অনেকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নেন না। তাই ওনাদের পক্ষ থেকে পাওয়ার অফ এটর্নি হতে গেলে অনেক জটিলতা হতো।
আইন উপদেষ্টা বলেন সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে আমরা এই বিধিমালায় সংশোধন এনেছি। সংশোধন অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশীদের যদি বাংলাদেশী পাসপোর্ট নাও থাকে তাহলেও তারা তাদের পাওয়ার অব এটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার স্টিকার থাকলে, কিংবা তার জন্ম সনদ থাকলে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব এটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন। আমি মনে করি এটি আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকের ভোগান্তি লাঘবে বিরাট ভূমিকা রাখবে।


আরো সংবাদ



premium cement
টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙার খবরে স্বস্তি বাংলাদেশে আদানিকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহের আহ্বান আবরার হত্যা মামলায় হাইকোর্টে তৃতীয় দিনের শুনানি সাবেক মেয়র আতিকসহ ৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম সরাসরি বিমান চলাচল নিয়ে আলোচনা রাজবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা সদস্য নিহত মানিকগঞ্জে থানায় দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যের মৃত্যু সোনারগাঁওয়ে ধরা পড়ল ৮ মণ ওজনের শাপলাপাতা মাছ তরুণদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হবে : যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সাড়ে ১৬ হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে : আইন উপদেষ্টা তৌহিদী জনতাকে হুমকি নয়, সতর্ক করেছি : উপদেষ্টা মাহফুজ

সকল