থাইল্যান্ডে ড. ইউনূস ও মোদির দেখা হবে
ওমানে বৈঠক হবে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০, আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:৪১
![](https://www.dailynayadiganta.com/resources/img/article/202502/19691810_148.jpg)
সাত জাতি বে অব বেঙ্গল ইনিসিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলন আগামী ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে সাতটি দেশের সরকার প্রধানরা তাদের উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেখা হবে। তবে সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এরপর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, ভারতের আশ্রয়ে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার বক্তব্য ও নির্দেশনা এবং সর্বশেষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতাদের বাড়িঘরে ছাত্র-জনতার হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কে বড় ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের কূটনীতিকদের তলব-পাল্টা তলবের মাধ্যমে পরিস্থিতির জন্য পরস্পরকে দায়ী করা হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় আট মাসের মাথায় বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ নেতাদের দেখা করার সুযোগ করে দেবে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনের সাইডলাইন বৈঠক হলে দুই নেতা উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করে উত্তেজনা প্রশমনের একটা চেষ্টা করতে পারেন।
এদিকে অষ্টম ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানের রাজধানী মাস্কাটে অনুষ্ঠিত হবে। এতে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে গত মাসেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। একই সাথে সম্মেলনের সাইডলাইনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে তিনি বৈঠকেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে সম্মতি জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। এ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ককে পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সবকিছু ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হলে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়েও আলাপ হতে পারে।
বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে তৌহিদ হোসেনের সাথে জয়শঙ্করের বৈঠক হয়েছিল। এ সময় নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে বাংলাদেশ সফরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রস্তাব গ্রহণ করে গত ৯ ডিসেম্বর মিশ্রিকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলেন। যদিও তার সফরের কিছুদিন আগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগারতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ব্যানারে ভাঙচুর এবং জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়। এ ছাড়া কলকাতা ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনেও বিক্ষোভ করে ক্ষমতাসীন বিজেপির ছত্রছায়ায় থাকা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দেয়া বিবৃতিতে বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, আজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছা আমি প্রকাশ করেছি। আজকের বৈঠকে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও ইস্যুগুলো আমরা আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের বিষয়ে আমি উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। সংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক মিশনগুলোতে হামলার দুঃখজনক ঘটনগুলো নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। আমরা এ সব ইস্যুতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক অবস্থান প্রত্যাশা করেছি। আমরা সম্পর্ককে গঠনমূলক, ইতিবাচক ও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।
অন্যদিকে জসীম উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর বয়ান নিয়ে আমরা ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা জোর দিয়ে বলেছি, বাংলাদেশে বসবাসরত সব মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করে আসছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরেজমিন বাস্তব অবস্থা দেখার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিদেশী সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়েছে। সেই সাথে আমরা এও বলেছি, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য করা সমীচীন নয়। আমি স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। অন্যান্য দেশেরও একই ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আমাদের প্রতি দেখানো উচিত।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা কামনা প্রধান উপদেষ্টার : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও সংস্কারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেছেন। গতকাল ঢাকায় মার্কিন চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসনের সাথে সাক্ষাতে তিনি এ সহায়তা চেয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির কাজ স্থগিত করার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার অ্যাজেন্ডা, রোহিঙ্গা সঙ্কট, অভিবাসন ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং এর তত্ত্বাবধানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করার জন্য তার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর রাজনৈতিক দলগুলো সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে।”
চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স জ্যাকবসন জোর দিয়ে বলেছেন, নতুন সরকারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। তিনি সম্প্রতি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কেও প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞাসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বাংলাদেশী সমাজে পুনর্মিলনের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিশোধের চক্র ভেঙে দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তি তৈরি করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এই দেশের সন্তান। তাই আমাদের মাঝে প্রতিশোধের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।’ তিনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের অভিযানের সময় যেকোনো মূল্যে মানবাধিকার বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মার্কিন সহায়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবির জীবন রক্ষাকারী প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহায়তা স্থগিত করার মার্কিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিসমটেক শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে মহাসচিবের বক্তব্য : বিসমটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে গতকাল রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময় করেছে সংস্থার মহাসচিব ইন্দ্র মণি পান্ডে। তিনি জানিয়েছেন, আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় শীর্ষ সম্মেলনের আগে দুই দেশের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনে সামুদ্রিক যোগাযোগ সহযোগিতাবিষয়ক বিমসটেক চুক্তি সই হবে। বিমসটেকের রুলস অব প্রসিডিউর অনুমোদন হবে। এ ছাড়া বিমসটেকের অংশীদারদের সাথে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। বিমসটেক ব্যাংকক ভিশন-২০৩০ এর অনুমোদন দেয়া হবে। ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে এ শীর্ষ সম্মেলন শেষ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পান্ডে বলেন, বিমসটেক ও সার্কের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। একটি দেশ একই সাথে একাধিক আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে পারে। বেশ কয়েকটি দেশ সার্ক এবং বিমসটেক উভয় সংস্থার সদস্য। মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্য। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগকারী বিমসটেক অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে। অন্যদিকে সার্ক ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর মনোনিবেশ করেছে। উভয় সংস্থা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কিন্তু পরিপূরক ভূমিকা পালন করে।
শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সরকার প্রধানদের মধ্যে বৈঠক সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের সময় আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। এর পাশাপাশি সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হতে পারেন। শীর্ষ সম্মেলন এক্ষেত্রে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
পান্ডে বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং সংগঠনটিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করেন। তিনি বিমসটেকের এজেন্ডা এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বা নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির সাথে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সম্পর্ক নেই। এটি একটি আঞ্চলিক ফোরাম, যাতে সহযোগিতাই মুখ্য বিষয়। সদস্যভুক্ত সব শীর্ষ নেতাই বিমসটেকের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
ডিকাবের সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনসহ অন্য সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা