ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য সরকার কাজ করছে
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে জানালেন মির্জা ফখরুল- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার জানিয়েছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা কাজ করছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সাথে যারা ছিলেন তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, অতি দ্রুত তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন।’ তিনি বলেন, তারা আমাদের এটাও বলেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা কাজ করছেন। আমরা আশা করব, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তারা অতি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন খুব সহজ হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে একমত হবো না। আগেও বলেছি এখনো বলছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হবে না।
অন্তর্র্বর্তী সরকার আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে কিছু জানাতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আজ প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে সরকারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। আরো বলেছি যে এটা অন্তর্র্বর্তী সরকার। সুতরাং দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের আবারো তাগাদা দিয়েছি। ন্যূনতম যে সংস্কার সেটা যেন করে। ইতোমধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে কথা বলেছি, বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত ১৫-১৬ বছরে যে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে, সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করার ব্যাপারে আমরা বলেছি। তারা একমত হয়েছেন। আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছি। তিনি বলেন, আমরা বলেছি অপারেশন ডেভিল হান্ট অপারেশনে যেন আগের কিছু পুনরাবৃত্তি না হয়, নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়, এটা আমরা জোরের সাথে বলেছি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলের বৈঠক : আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম বৈঠক করতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা হবে।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপষ্টোর প্রেসসচিব শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। তিনি জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল এদিন প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছেন। তারা সংস্কারকার্যক্রমে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। দেশব্যাপী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে তারা কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ আছে, অপারেশন ডেভিল হান্টে কেবল তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে না। এ ছাড়াও সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে।
প্রসঙ্গত দায়িত্ব নেয়ার পর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ছয়টি খাত সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কমিশনের ঘোষণা দেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয় সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্রসচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন স্টেট বিশ^বিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এর মধ্যে কমিশনগুলো রিপোর্ট দিয়েছে। আবার কমিশনগুলোর প্রধানদের নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশনের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করবে।
ব্রিফিংকালে প্রেসসচিব বলেন, সরকার গঠিত সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে রিপোর্ট দিয়েছে। সেই রিপোর্ট নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথম মিটিং করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সোমবার বিএনপির তিনজন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছেন। তারা হলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এবং মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এ সময়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সংস্কার কার্যক্রমে পূর্ণসমর্থন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। মূলত বিএনপি নেতারা দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় জোর দিয়েছেন। এ ছাড়াও গত ১৫ বছরে যারা দেশের মানুষের ওপর অন্যায় এবং অত্যাচার করেছে, তাদের বিচারকাজ যাতে খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়, সে ব্যাপারে বিএনপি নেতারা কথা বলেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, বিগত সময়ে বিএনপি এবং বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ২৫ হাজার মামলা দেয়া হয়েছিল। এই মামলাগুলো হয়রানিমূলক। তাই এগুলো প্রত্যাহার করার কথা বলেছেন। অপারেশন ডেভিল হান্টে যেন কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, সে ব্যাপারে কথা বলেছেন বিএনপি। এ ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেয়া হবে না। যাদের ব্যাপারে সুনির্র্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধেই ডেভিল হান্টে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বিষয়টি সরকার সিরিয়াসলি নজরদারি করছে।
শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকার দ্রুত পক্ষেপ নেবে। এগুলো এতদিন বিলম্ব হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, ওই সময়ে যারা পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন, তাদের অনেকে পালিয়েছে। ফলে মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা যায়নি।
শফিকুল আলম বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, যেন তাড়াতাড়ি জাতীয় নির্বাচন হয়। জবাবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজটাই হচ্ছে, এ বিষয়টি (নির্বাচনের কাজ) এগিয়ে নেয়া। এর আগে আমরা বলেছিলাম, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন। আগামীতে হয়তো এ বিষয়ে আপনারা আরো কিছু (বিস্তারিত) শুনতে পাবেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কী ধরনের সংস্কার চায়, তার ওপর নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে। বিএনপি স্থিতিশীলতায় জোর েিয়ছে। সরকারও এটা চায়। ড. ইউনূস স্ট্রং (শক্তিশালী) বিবৃতি দিয়েছেন। এরপর আপনারা দেখেছেন শান্তি ফিরেছে। গত দুইদিন কোনো সমস্যা দেখছি না। বিএনপিও কিন্তু এর জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছে। অস্থিতিশীলতায় তারই (শেখ হাসিনা) মুখ্য ভুমিকা। প্রেস সচিব বলেন, সরকার যথাযথ পক্ষেপ নেয়ার কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বইমেলায় ভাঙচুরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। এ নিয়ে বাংলা একাডেমির সাথে কথা হয়েছে। বিষয়টি তাদেরকে দ্রুত জানাতে বলা হয়েছে। এখনো আমরা পুরো বিষয়টি জানি না। আমরা মনে করি, বইমেলা পবিত্র জায়গা এবং এর পবিত্রতা আমরা রাখতে চাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা