১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ শাবান ১৪৪৬
`
অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন

আ’লীগ সরকারের অব্যবস্থাপনায় দেশের ১০ ব্যাংক তীব্র ঝুঁকির মুখে

ব্যাংকিং - প্রতীকী ছবি

খেলাপি ঋণের কারণে দেশের আর্থিক খাত উল্লেখযোগ্য মাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১১ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেখানে ছিল ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, সেখানে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই খেলাপি ঋণ বেড়েই হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আর্থিক কাজের অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ১০টি ব্যাংক তীব্র ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা ও ত্রুটির কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির আওতায় চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা ও কাঠামোগত ত্রুটির কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। গত ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে এটি কমে ১০.৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের জুনে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ সালের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি, জুনে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি, ডিসেম্বরে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি, জুনে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি ও ডিসেম্বরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।

২০২৪ সালের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি, জুনে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি ও সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংকের ঝুঁকি ও প্রকৃত অবস্থা সঠিকভাবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিরূপণের লক্ষ্যে অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বমানের অ্যাকাউন্টিং ফার্ম এবং কে পি এম জি মোট ছয়টি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ সম্পাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স নিশ্চিত করার জন্য একটি ফার্ম ডিলইটিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধারে ব্যাংকের আইন বিভাগ শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সঙ্কট উত্তরণে এবং গ্রাহকদের আস্থা অটুট রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে : সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা ও কাঠামোগত ত্রুটির কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। গত ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে এটি কমে ১০.৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং গত জুলাইয়ে ছিল ১১ শতাংশের বেশি।
অন্য দিকে বর্তমানে গড় মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের ওপরে। গত জানুয়ারি শেষে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং গত জুনে গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে সরকারের গৃহীত ৯টি পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের প্রধান আমদানির উৎস চীন ও ভারতে মূল্যস্ফীতির হার ৪ শতাংশের কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে টাকার বিনিময় হার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে আমদানিজনিত কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সম্ভাবনা কম।
সরবরাহ ব্যবস্থার কাঠামোগত ত্রুটি নিরসনে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে অধিকতর করণীয় চারটি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পণ্য সরবরাহ চেইনের সর্বস্তরের প্রতিবন্ধকতা কঠোরভাবে প্রতিহত করা, এ ক্ষেত্রে ডেমন্সট্রেশন ইফেক্ট হিসেবে বিভাগীয়/ জেলাপর্যায়ে আগামী এক মাসে বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা;

হিমাগারসহ সর্বপ্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের (চাল, পেঁয়াজ, আলু ও তেল ইত্যাদি) গুদাম নিবিড় পরিবীক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা; অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা; কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সার, বীজ ও পরামর্শ সেবা নিশ্চিত করা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ও সহায়ক রাজস্ব নীতি গ্রহণ; নীতি সুদের হার ধাপে ধাপে বাড়িয়ে গত ডিসেম্বরে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে (গত জুলাইয়ে ছিল ৮ শতাংশ) এবং সুদহারের করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা হচ্ছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ; সর্বপ্রকার টাকা ছাপানো বন্ধ রাখা; কম গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলসহ সরকারি খরচ কমানোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা; চাল-আলু-পেঁয়াজ-ভোজ্যতেল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক অব্যাহতি/কমানো; ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা শহরে ওএমএসের মাধ্যমে গত ডিসেম্বরে সুলভে সবজি বিক্রয় করা; দেশের ১ কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা; ট্রাকের মাধ্যমে বিভাগীয় শহরগুলোতে তেল-চিনি-ডাল বিক্রি এবং রমজানে এর সাথে সরবরাহ করা হবে খেজুর ও ছোলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর প্রতি জেলায় ১০ সদস্য বিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলা : মুক্তি পেলেন বিএনপির ৪৭ নেতা বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করলেন সেনাপ্রধান কাল থেকে যাত্রা শুরু করছে দেশের নতুন ইকমার্স বেবিচক চেয়ারম্যানের সাথে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ খান নাইন মার্ডার মামলায় কারাগারে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে সাংবাদিকতা : ইউনেস্কো-নিউজ নেটওয়ার্ক কর্মশালায় বক্তারা ফরিদপুরে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার ৯ বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি বিশ্বব্যাংকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত নোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় প্রতিবন্ধী নারী নিহত সাবেক এমপি নিখিলের সহযোগী সন্ত্রাসী রিংকু গ্রেফতার বরিশালে আওয়ামী আমলের ৫৯ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার

সকল