১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ শাবান ১৪৪৬
`
এনআইডি প্রসঙ্গে ইসি সচিব

তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য ফাঁস করেছে ৫ প্রতিষ্ঠান

-


জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা গ্রহণকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য ফাঁস করেছে। প্রাথমিক তদন্তে এর প্রমাণ মিলেছে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ইসি সচিব। অভিযুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো- স্বাস্থ্য অধিদফতর, ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, মহিলাবিষয়ক অধিদফতর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিবি) থেকে নাগরিকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয় সারা দেশে। সেই সময় প্রতিষ্ঠানটি দায় এড়ালেও আবার যাচাই-বাছাই করে বর্তমান নাসির উদ্দিন কমিশন। নিবন্ধনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের চুক্তি লঙ্ঘন করার বিষয় প্রমাণ হলে ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সাথে চুক্তি বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। বিসিসির পর এবার পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তথ্য পাচারের প্রমাণ পেল ইসি।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর অসতর্কতায় নাকি ইচ্ছেকৃত এটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ স্বপ্রণোদিতভাবে এটা করে থাকে তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি বলেন, এনআইডি অনুবিভাগ থেকে ১৮২টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা নেয়। ডাটা ইউজের ক্ষেত্রে একটা সীমা রাখা উচিত। ওপেন রেখে চোরকে দোষ দেয়া যাবে না। সচিব বলেন, ১৮২টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডির তথ্য যাচাই করে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে সেবা নিচ্ছে, যা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে অংশীজনদের সাথে।

আখতার আহমেদ বলেন, দেখা যাচ্ছে যাদের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছি তারা আমাদের অগোচরেই অন্য অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য দিচ্ছে। যেটা কাম্য নয়। এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা ও ব্যবস্থাপনাটাকে উন্নত করার জন্য আমাদের যেসব গ্রাহকেরা আছে তাদের সাথে আলোচনা করেছি। যে তথ্য যার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ওই প্রতিষ্ঠান ততটুকু তথ্য নেবেন এবং তার গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করবেন বলে জানিয়েছেন এই ইসি সচিব। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে। কী করে এই তথ্য লিক বা পাচার হয়েছে এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়। এগুলো যাচাই বাছাই করা হবে।

আখতার আহমেদ ব্যাখ্যা করে বলেন, একেক জনের চাহিদা একেক রকম। বাংলাদেশ পুলিশের যে ধরনের তথ্য দরকার, হয়তো পাসপোর্টের সে ধরনের নয়, আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্যরকম তথ্য প্রয়োজন। তিনি বলেন, কাজেই ভেরিফিকেশনের একটি স্বাভাবিক প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে যে আমাদের জানাবেন এই তথ্যগুলো সঠিক আছে কি না, আমরা বলব হ্যাঁ বা না। এর বাইরেও যদি তথ্য প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে আরো আলোচনা হবে। আজকে আলোচনাটা শুরু হলো। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের খবর প্রকাশ করেছিল আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ ২০২৩ সালের ৬ জুলাই। টেকক্রাঞ্চের ওই খবরে বলা হয়েছিল, এর আগে বাংলাদেশী নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে।

ওই ঘটনার তিন দিন পর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার ‘সুরক্ষিত আছে’। বিভাগটি দাবি করেছিল, তাদের সার্ভার থেকে কোনো রকম তথ্য কোথায় যায়নি। তারপরও এই বিষয়ে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি পেলে, চুক্তিপত্র বরখেলাপ হলে তা বাতিল করা হবে।
সরকার পতনের পর এনআইডির তথ্য ‘বিক্রির’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়। সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এ মামলায় জয় ও পলকসহ মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে কাফরুল থানার ওসি কাজী গোলাম মোস্তফা জানান।


আরো সংবাদ



premium cement