বিনিয়োগ ব্যয় কমাতে লাগাম টানা হবে সুদহারে
মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ- আশরাফুল ইসলাম
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৫
বিনিয়োগ ব্যয় কমাতে সুদহারে লাগাম টানা হচ্ছে। এজন্য কমানো হচ্ছে নীতিনির্ধারণী সুদহার। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বাজারেও শিথিলতা আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আজ সোমবার চলতি অর্থবছরের শেষ ৬ মাসের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। এ মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা, বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বাড়িয়ে রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে এনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করাসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা থাকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিছু রাঘব বোয়াল ব্যবসায়ী ও ব্যাংক ডাকাত দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে অর্থ বের করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে একমাত্র এস আলমই ইসলামী ব্যাংকসহ দেশের ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা। আরো প্রায় ডজনখানেক ব্যাংকে এস আলমের বেনামি ঋণের খোঁজে তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার, বেক্সিম গ্রুপের সালমান এফ রহমানসহ ১১ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ব্যাংক খাত থেকে শুধু অর্থই বের করা হয়নি, এর বেশির ভাগ অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে এমন তথ্য পেয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। এমনি পরিস্থিতিতে এসব ব্যাংক ডাকাতদের হাত থেকে ব্যাংকগুলো পুনরুদ্ধার করে পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে তীব্র নগদ টাকার সঙ্কট শুরু হয়েছে। এতে বেড়ে গেছে আমানতের সুদহারসহ ঋণের সুদহার। একই সাথে বেড়েছে নীতিনির্ধারণী সুদহারও। এসব ব্যাংকের বেশির ভাগই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের এলসি খুলতে পারছে না। একদিকে ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট, অপর দিকে নীতি নির্ধারণী সুদহার বৃদ্ধি সব মিলেই বিনিয়োগকারীদেরও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নীতি নির্ধারণী সুদহার ১০ শতাংশে উঠে গেছে। এর জের হিসেবে ব্যাংক ঋণের সুদহারও ব্যাংকভেদে ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মতে, দেশের চলমান অবস্থায় বিনিয়োগ থেকে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে ১০০ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ১৬ টাকা মুনাফা দেয়া মোটেও সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই ব্যবসা সঙ্কুচিত করে ফেলছেন। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যবসা ব্যয় কমাতে সুদহারের লাগাম টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদের হার আর বাড়ানো হবে না। বরং শূন্য দশমিক ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হতে পারে। বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর প্রবৃদ্ধিতেও লাগাম টানা হবে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখা ও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে দেশী বিদেশী উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা থাকছে আগামী ৬ মাসের মুদ্রানীতিতে। এজন্য এবারের মুদ্রানীতিতে আইএমএফের অনেক পরামর্শ থেকে বেরিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে সরকারও আইএমএফের বেশ কিছু পরামর্শ বাস্তবায়ন করেনি। আইএমএফ মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত মুদ্রানীতিকে আরো কঠোর করার পরামর্শ দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার সে পথে হাঁটছে না। মুদ্রানীতিকে কঠোর করছে না। আবার শিথিলও করছে না। আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে। নীতি সুদের হার আর বাড়ানো হবে না। এর আগে এ সরকার ক্ষমতায় এসে তিন দফায় নীতি সুদের হার বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর সাথে অন্যান্য নীতি সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর খরচ বেড়েছে। এতে ব্যাংকগুলোও ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে টাকার প্রবাহ বেশি বাড়ানো হবে না। ফলে চাহিদায় লাগাম পড়ে মূল্যস্ফীতির হার কমবে। ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলে ডলারের প্রবাহ বেড়ে এর দাম স্থিতিশীল থাকবে। এতেও মূল্যস্ফীতিতে চাপ কমবে। বর্তমানে ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি ডলার ১২২ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। গত সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দর ১১৮ টাকা হলেও ব্যাংকে বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা। এখন এর দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পরও স্থিতিশীল রয়েছে। গত সরকারের আমলে বাজারে ছাড়া ছাপানো টাকা ধীরে ধীরে তুলে নেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে ছাপানো টাকার স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এতেও মূল্যস্ফীতিতে চাপ কমছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী জুনের মধ্যে এ হার ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামানো সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা