১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ শাবান ১৪৪৬
`

পশ্চিমতীরে হামলা বিস্তৃত করছে ইসরাইল

-

- গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো ২২ লাশ উদ্ধার
- নেটজারিম করিডোর থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার

পশ্চিমতীরের নুর শামসেও সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র রোববার দখলকৃত ভূখণ্ডটিতে হামলার আওতা বাড়ানোর এ ঘোষণা দেন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত ২১ জানুয়ারি পশ্চিমতীরের জেনিনে অভিযানে নামে, যাকে কর্মকর্তারা ‘বৃহৎ পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান’ নামে দাবি করেছিলেন। আলজাজিরা ও রয়টার্স।
নুর শামসে অভিযানে একাধিক যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং পলাতক অনেক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। এমন একসময়ে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে, যখন গাজায় হামাসের সাথে তাদের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় চলছে। যুদ্ধবিরতির শর্তানুযায়ী, হামাস এরই মধ্যে প্রায় দুই ডজন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে কয়েক শ’ ফিলিস্তিনিও। এ দিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, নূর শামস ক্যাম্পে হামলার সময় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে ২১ বছর বয়সী রাহাফ ফুয়াদ আবদুল্লাহ আল-আশকার নিহত হয়েছেন। এর আগে মন্ত্রণালয় ইসরাইলি অভিযানের সময় ২৩ বছর বয়সী এক গর্ভবতী মহিলা এবং তার আট মাস বয়সী ভ্রƒণকে হত্যার কথা জানিয়েছিল।
গাজায় ২২ লাশ উদ্ধার : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরো ২২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এ উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ২০০ জনে পৌঁছেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এর পর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা।
বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরো ২২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৮ হাজার ১৮১ জনে পৌঁছেছে বলে শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি গোলাবর্ষণে গত ৪৮ ঘণ্টায় চারজন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন এবং তারাও প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আরো ছয়জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৬৩৮ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে ৫৭২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। তিন পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দিবিনিময়, স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল।
জাতিসঙ্ঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
নেটজারিম থেকে সেনা প্রত্যাহার : ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার নেটজারিম করিডোর থেকে রোববার তাদের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সাথে অস্ত্রবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে নেটজারিম থেকে এই সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ইসরাইলের পাবলিক সম্প্রচার সংস্থা কেএএন রোববার বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া আজকের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তর অংশ থেকে দক্ষিণ অংশকে আলাদা করতেই এই নেটজারিম করিডোর তৈরি করেছিল, যাতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আর নিজেদের ঘরে ফিরতে না পারে। ফিলিস্তিনিদের জন্য বিপর্যয়কর ফাঁদ সেই নেটজারিম করিডোর থেকে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহারের খবরটি এমন একসময়ে এলো, যখন ইসরাইল ও হামাস তাদের পঞ্চম দফা বন্দিবিনিময় সম্পন্ন করেছে। এ দফায় তিনজন ইসরাইলি বন্দীর বিনিময়ে ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
শনিবারের এই বন্দিবিনিময় সম্পন্ন হওয়ার পর এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ জোট ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ‘নিরঙ্কুশ বিজয়ের’ স্বপ্নকে ‘ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে’ পরিণত করেছে। বিবৃতিতে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলা হয়, এ ঘটনায় ইসরাইলের ‘অপরাজেয়’ থাকার মিথ্যা স্বপ্ন ধুলায় মিশে গেছে।

এর আগে ইসরাইলি বন্দীদের হস্তান্তরের প্ল্যাটফর্মে লেখা বার্তায় বলা হয়, ‘আমরাই ঝড়, আমরাই আগামী দিন’। এর মাধ্যমে হামাস তেলআবিবকে এই বার্তা দিয়েছে যে, গাজা আজও যেমন হামাসের নিয়ন্ত্রণে আছে, ভবিষ্যতেও তেমনি তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। অন্য দিকে তিন ইসরাইলি বন্দীর মুক্তির পর হামাসকে আবারো ‘নির্মূল’ করার হুমকি দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সেই সাথে হামাসের হাতে থাকা সব বন্দীকে ফিরিয়ে নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
এক ভিডিওবার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা হামাসকে নির্মূল করব এবং আমাদের বন্দীদের ফিরিয়ে আনব।’ এ ছাড়াও বিবৃতিতে হামাসকে ‘দানব’ বলে আখ্যা দিয়ে তিনি জানান, শনিবার ভোরে মুক্তি দেয়া তিন বন্দীকে ক্ষীণকায় দেখাচ্ছিল এবং তাদের মঞ্চে বক্তৃতা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement