‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু
দেশব্যাপী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩১
দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের পাশাপাশি লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারসহ সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে সারা দেশে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। গতরাত থেকেই অভিযান চালানো শুরু করেছে যৌথবাহিনীর বিশেষায়িত টিমগুলো। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে চলবে এ অভিযান। গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বৈঠকে অপারেশন ডেভিল হান্টের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়; যার অপারেশনাল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আজ রোববার ব্রিফিং করে জানানো হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় শনিবার মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অভিযানের ব্যাপারে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে পতিত স্বৈরাচারের সন্ত্রাসীদের হামলায় কয়েকজন ছাত্র-জনতা গুরুতর আহত হয়েছেন।
এ দিকে অপারেশনের বিষয়ে একাধিক সূত্র বলছে, দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ কিছু ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে। বর্তমান সরকার নমনীয়ভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও অপরাধীরা তা করতে দিচ্ছে না। তারা দেশ-বিদেশে বসে একের পর এক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তারা বেশ কিছু ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাদের ষড়যন্ত্র থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে এই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই মনে করেন, সরকারের নমনীয়তার সুযোগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। দেশ-বিদেশে বসে চালানো এসব ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হত্যা-ছিনতাই, হামলা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব বিষয় আগে থেকে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে পড়েছিল। তারা এ ব্যপারে একাধিক রিপোর্ট দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে নমনীয় আচরণ করে সব কিছু সমাধান করতে চাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি পাওয়া গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের সময় লুট হওয়া অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশী অস্ত্র এনে দেশকে অস্থিতিশীল করতে বড় ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যার কারণে শনিবার রাত থেকে সারা দেশে শুরু হচ্ছে অপারেশন ডেভিল হান্ট। যৌথবাহিনী পরিচালিত এ অপারেশনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি লুট হওয়া ও দেশে প্রবেশ করানো অস্ত্র উদ্ধার করা হবে।
জানা গেছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্প্রতি কলকাতায় একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়। নেতারা সেগুলোর দিকনির্দেশনা দেশে থাকা অনুসারীদের বুঝিয়ে দেন। ওই সব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে হত্যা, বিভিন্ন পয়েন্টে ছিনতাই, মুখে মুখোশ পরে ডাকাতি, বিএনপি কর্মীদের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, অহেতুক ঝামেলা পাকানো। এ ছাড়া কোথাও কোনো সাধারণ ঝগড়া-কথাকাটাকাটি দেখলে সেখানে কৌশলে ঢুকে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। তথ্য রয়েছে, সম্প্রতি তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের আন্দোলনের পেছনেও ছিল ওই নির্দেশনার কারসাজি।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর পুলিশবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়েছিল এটি সত্যি, তবে তা কাটিয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি। গোয়েন্দা রিপোর্টে বর্তমানে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা মোকাবেলা করতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত পুলিশ। তবে এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট কঠোর অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছোট হবে না। কারণ প্রতিটি সেক্টরেই তাদের দোসররা ঘাপটি মেরে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলে কঠোর হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এত দিন সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর হওয়ার কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তারা শুধুই নমনীয় থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নির্দেশনা দিয়েছেন। যার সুযোগ নিয়ে গার্মেন্টগুলো অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে। বাজার সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজধানীজুড়ে বেড়েছে ছিনতাই, হামলা, মারধরসহ নানা ঘটনা। এসব অন্যায় কঠোরতার সাথে দমন করা প্রয়োজন।
এ দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভার্চুয়াল কনভারসেশনের একটি অডিও ক্লিপ ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায় ‘রাজধানীবাসীকে শান্তিতে ঘুমোতে দেয়া হবে না। তার জন্য কী কী করতে হবে, তা আমরা জানি। এ জন্য দেশে থাকা নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারাই এগুলো বাস্তবায়ন করছে।’
এর আগে গোয়েন্দা রিপোর্টেও এমন কিছু তথ্য উঠে আসে। যেখানে বলা হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলতে আওয়ামী লীগের ১০ নেতাকর্মীকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপর একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে যে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল তার পেছনেও কাজ করে রাজনৈতিক অভিলাষ। আর এ আন্দোলনের ইন্ধনদাতা হিসেবে ৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি শনাক্ত করা হয়েছে মূল নেতৃত্ব দেয়া ১৩ জনকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিমকে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে আন্দোলন ও ধ্বংসাত্মক কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। ছাত্রলীগ নেতা রুবেলকে গণভবন কোয়ার্টার, আদাবর এলাকা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। বিদেশ থাকা লেদার লিটনকে দেশে ফিরে হাজারীবাগ ও ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতার দায়িত্ব দেয়া হয়। সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেকুজ্জামান এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাগনে আসিফকে মোহাম্মদপুর ও এর আশপাশের এলাকার দায়িত্ব দেয়া হয়। আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন হোসেন খান নিখিলকে দেয়া হয় পুরান ঢাকা, চানখাঁরপুল ও উত্তরাসহ সমগ্র ঢাকার দায়িত্ব। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাবেক এমপি ওয়াকিল উদ্দিনের লোকজনকে বাড্ডা ও ভাটারা এলাকার দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চুকে দায়িত্ব দেয়া হয় বনানী ও মিরপুর এলাকার।
এ ব্যাপারে জানতে পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর নয়া দিগন্তকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনাকে বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত পুলিশের প্রতিটি বিভাগের সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টে নিরাপত্তা জোরদার : দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওই এলাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে।
পুলিশ ও সুপ্রিম কোর্ট সংশ্লিষ্টদের থেকে জানা গেছে, দেশের চলমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সামনের গেটসহ আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাজারগেটেও পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
প্রবেশে পরিচয়পত্র সাথে রাখার অনুরোধ : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশকালে আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী, বিচারপ্রার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্র সাথে রাখতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা