উভয় সঙ্কটে আটকা পড়েছে রোহিঙ্গারা
গার্ডিয়ানের পর্যবেক্ষণ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩০
মিয়ানমারে জান্তার বর্বরতা গৃহযুদ্ধে তাদের জয় নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, বরং দেশটিকে ধ্বংস করছে। দ্য গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয়তে বলা হচ্ছে, মতবিরোধ দমনের দীর্ঘ রেকর্ডের কারণে মিয়ানমারের অভ্যুত্থান জেনারেলদের কাছে একটি সহজ জয় বলে মনে হয়েছিল। সীমিত গণতন্ত্রের সাথে তাদের বিরক্তিকর পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় যখন অং সান সু চির দল দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে। যার ফলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নেত্রী এবং তার সহকর্মীদের ক্ষমতাচ্যুত ও কারাদণ্ড দেয়া হয়।
চার বছর পর প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। বিবিসির একটি গবেষণা বলছে, জান্তা মিয়ানমারের মাত্র ২১ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে; কারণ তারা এনএলডির অবশিষ্টাংশ থেকে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স ইউনিটগুলো, সেই সাথে দীর্ঘকাল ধরে নেইপিদোতে লড়াই করা জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে লড়াই করে ক্রমেই পিছু হটছে। ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং জনসংখ্যার অর্ধেক দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে গেছে। অর্ধেকেরও বেশি লোক বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ বলছে, রাখাইন রাজ্য তীব্র দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমরা বিশেষভাবে দুর্বল, যাদের সেনাবাহিনী জোরপূর্বক ধরে নিয়ে সেনা হিসেবে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের পর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে। একই সাথে আরাকান সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জান্তার পক্ষ নেয়ার অভিযোগ করছে। কার্যত উভয় সঙ্কটে আটকা পড়েছে রোহিঙ্গারা।
সেনাবাহিনী এখনো প্রধান শহরগুলো এবং দেশের রাজধানী দখল করে আছে। সেখানে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা স্পষ্ট, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হচ্ছে। তার সামরিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার দায় হিসেবে বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে ৯৫টি শহর, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট, শত শত সামরিক ঘাঁটি এবং দু’টি আঞ্চলিক কমান্ড। জান্তার নৃশংস কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে যৌন সহিংসতা, গণহত্যা এবং নির্যাতন, পাশাপাশি বেসামরিক স্থানে অবিরাম বোমাবর্ষণ। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিমান জ্বালানি সরবরাহ আরো সীমিত করার যেকোনো সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করছে গার্ডিয়ান।
২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে বিদ্রোহীদের বিস্ময়কর অগ্রগতি সম্ভব হয়েছিল কারণ চীন সীমান্তে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের ব্যর্থতার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোটকে অনুমোদন দিয়েছিল। এখন তারা অস্ত্র সরবরাহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে, জান্তার মিয়ানমারের ক্ষমতায় টিকে থাকাকে তাদের আকাক্সিক্ষত সম্পদ ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখার সর্বোত্তম আশা হিসেবে দেখছে। স্পষ্টতই বেইজিং এই বছর মিয়ানমারে নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বেশি চাপ দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ২১ হাজার রাজনৈতিক বন্দীকে আটকে রেখে এ ধরনের নির্বাচন কেবল একটি প্রহসনই হবে না; বরং যদি তা অর্জন করা সম্ভব হয় তবে তা প্রহসনও হবে; বিরোধী শক্তিগুলো তাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মিয়ানমারের অনেকেই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে সামরিক শাসন আর অনিবার্য নয় এবং তারা জান্তার সাথে আপস করতে পারে না, কারণ জান্তাও তাদের সাথে আপস করবে না। এমনকি আশাবাদীরাও স্বীকার করেছেন যে জান্তাকে পরাজিত করতে বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে। উদ্বেগ রয়েছে, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অনেক সঙ্কটের সাথে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জান্তার প্রতীকী ছাড়গুলো গ্রহণ করতে পারে এবং একটি চুক্তির জন্য চাপ দিতে পারে।
ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আক্রমণ সেই নাগরিক গোষ্ঠীগুলোর জন্য খারাপ খবর যারা এখন জনগণকে সহায়তা করছে এবং এটি একটি উন্নত মিয়ানমার গড়ে তোলার মূল চাবিকাঠি হবে। ইউএসএইডের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় ইতোমধ্যেই থাইল্যান্ডে এক লাখ শরণার্থীর চিকিৎসাসেবা প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা তহবিলে যুক্তরাজ্যের সামান্য বৃদ্ধি স্বাগত, ইইউ ও অন্যদের উচিত সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া অঞ্চলগুলোতে উদীয়মান প্রশাসনের সাথে কাজ করে সাহায্য বৃদ্ধি করা। জান্তা-পরবর্তী মিয়ানমার সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়তে পারে, আরো বেসামরিক মূল্যে, এ আশঙ্কা ভিত্তিহীন নয়। বিরোধী দলগুলোও গুরুতর অধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা গভীরভাবে বিভক্ত, বিভিন্ন এবং কখনো কখনো পরস্পরবিরোধী স্বার্থের সাথে। তবুও তারা গত চার বছরে আশ্চর্যজনকভাবে সহযোগিতা করতে সক্ষম হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা