০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ৯ শাবান ১৪৪৬
`

মুক্তি পেল আরো ৩ ইসরাইলি ও ১৮৩ ফিলিস্তিনি বন্দী

-


ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রক ও স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আরো তিন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। অন্য দিকে ইসরাইলি কারাগার থেকে মোট ১৮৩ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ১৫ মাসের গাজা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে গত মাসে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার পঞ্চম দফায় এই বিনিময় হয়েছে। খবর : আলজাজিরা ও বিবিসি।
এ দিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীরা পশ্চিমতীরের রামাল্লায় পৌঁছেছেন। রামাল্লা থেকে বিবিসির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বাস থেকে বন্দীরা বের হতে শুরু করলে লোকজন গাড়ি ঘিরে ধরে ছবি তুলছে এবং ভিডিও করছে। কেউ কেউ হাত দিয়ে ভি বিজয় চিহ্নও দেখিয়েছেন। বন্দীরা বাস থেকে নামতে সাহায্যকারী লোকদের সাথে হাত মেলাচ্ছে এবং ভিড়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) ক্রুরা আলজাজিরা আরবিকে জানিয়েছেন, রামাল্লায় আসা একটি বাস থেকে চারজন মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীকে শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা দাতব্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে তাদের অবস্থা গুরুতর।
এর আগে হামাসের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া ইসরাইলি বন্দীদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন- ইলাই শরাবি (৫২), অর লেভি (৩৪) এবং ওহাদ বেন এমি (৫৬)। শনিবার গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দিয়ের এল-বালা থেকে তাদের মুক্তি দেয়া হয় বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। হামাস এই বন্দীদের মুক্তি দেয়ার পর রেড ক্রসের সদস্যরা তাদের নিয়ে যায়। রেড ক্রসের কাছে তাদের হস্তান্তরের জন্য হামাস দিয়ের আল-বালায় একটি মঞ্চ স্থাপন করে। মঞ্চে ও এর আশপাশে মুখোশ পরা হামাসের বহু সশস্ত্র যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তি পাওয়ার পর এই তিন বন্দীকে রেড ক্রস গাজায় অবস্থান করা ইসরাইলি বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। তাদের বিনিময়ে ইসরাইল যে ১৮৩ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিচ্ছে তাদের মধ্যে ১৮ জন আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। অপর ১১১ জনকে গাজা যুদ্ধ চলার সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে হামাস জানিয়েছে।

গাজা আমাদের নয়, ফিলিস্তিনিদের : মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারো এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছেছে, যখন ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই প্রস্তাবটি ট্রাম্পের ‘শতাব্দী চুক্তি’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উঠে আসে, যা মূলত ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার অংশ ছিল। কিন্তু এ পরিকল্পনাটি তীব্রভাবে বিতর্কিত এবং ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলমার্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে যে, ইসরাইল গাজা উপত্যকা তাদের হাতে তুলে দেবে, কিন্তু আমরা তা করতে পারি না, কারণ গাজা আমাদের নয়। গাজা ফিলিস্তিনিদের। তিনি আরো উল্লেখ করেন, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা তিনি স্বাগত জানাবেন, তবে তার শর্ত একটাই- গাজা অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের দ্বারা এবং ফিলিস্তিনিদের জন্যই পুনর্নিমাণ করতে হবে। এর মাধ্যমে তিনি স্পষ্টতই ইসরাইলের অবস্থান তুলে ধরেছেন, যা গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
ধ্বংসস্তূপে চাপা ১২ হাজার : এ দিকে ইসরাইলের গণহত্যা অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির নিচে অন্তত ১২ হাজার লাশ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গাজার সরকারি গণমাধ্যম অধিদফতর। তেলআবিব যখন এসব ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য গাজায় ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশে বাধা দিচ্ছে তখন এ ঘোষণা দেয়া হলো। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অধিদফতরের প্রধান সালামা মারুফ গত শুক্রবার গাজা সিটির ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজায় ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশ করতে না দেয়ায় বিধ্বস্ত ভবনগুলোর নিচ থেকে লাশ বের করার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ইসরাইল যদি এভাবে বাধা দিয়ে যায়, তাহলে হামাসের হাতে আটক যেসব পণবন্দী ইহুদিবাদীদের বিমান হামলায় ঘরবাড়ি চাপা পড়ে নিহত হয়েছে তাদের লাশ উদ্ধার করে তেলআবিবের কাছে হস্তান্তর করাও সম্ভব হবে না। গাজায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলের চালানো গণহত্যায় ৪৭ হাজার ৫৮৩ ব্যক্তির নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩৩ ফিলিস্তিনি। হতাহতদের প্রায় ৭০ ভাগ নারী ও শিশু।
গাজার খুলছে রেস্তোরাঁ : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের চলমান সঙ্কটের মধ্যে কিছু রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে খুলে স্থানীয়দের জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে। যদিও গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ৯০ শতাংশের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, তবুও গাজাবাসীরা তাদের জীবনকে কিছুটা স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধের ফলে বেকারত্ব এবং খাদ্য সঙ্কট সত্ত্বেও, কিছু ছোট ব্যবসা যেমন- রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে স্থানীয়দের জীবনে কিছু শান্তি এবং আনন্দ ফিরিয়ে এনেছে।
গাজা শহরের খান ইউনুসে, ‘আল-সাওফিরি’ নামে একটি রেস্তোরাঁ সম্প্রতি পুনরায় খোলা হয়েছে। এখানকার মালিক রায়েদ আল-সাওফিরি ২৩ বছর বয়সী যুবক, যিনি এর আগে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। যুদ্ধের কারণে তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত খান ইউনুসে তার ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন, যদিও যুদ্ধের মধ্যে থাকা কঠিন ছিল, আমি থেমে থাকিনি। মানুষদের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছি তা অসাধারণ।
বিপুল ধ্বংস সত্ত্বেও, গাজাবাসীরা আবার তাদের জীবন চালিয়ে নিতে চায়। রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেগুলো খুলে তাদের মাঝে কিছু সময়ের জন্য শান্তি ফিরিয়ে এসেছে। নিভিন কাদেহ, একজন স্থানীয় বাসিন্দা, জানান যে তারা গত বছর যুদ্ধ শুরুর আগে পরিবারের সাথে শেষবারের মতো বাইরে গিয়েছিলেন। যদিও এখন তাদের বাড়ি এবং সঞ্চয় সব হারিয়েছে, তবুও তারা এই এক রাতের জন্য নিজেদের দুঃখ ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement