ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষা আন্দোলনের উৎস পুরুষ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৫
অনেকেই মনে করেন, ১৯৫২ সালে বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়টি আন্দোলনে পরিণত হওয়ার আগে জনমানসে এর প্রভাব সীমিত ছিল। ৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে আকস্মিকভাবেই গণবিস্ফোরণ ঘটে এবং ছাত্র-যুবকরা রাজপথে প্রাণ বিসর্জন দেন। কিন্তু ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই এখানকার রাষ্ট্রভাষা নিয়ে একটি ধূমায়িত ক্ষোভ চলতে থাকে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাখতে চায়নি। তারা উর্দুর প্রাধান্য নিয়েই ভাবনাচিন্তা করতে থাকেন। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এরপর যখনই সে ঘোষণা চূড়ান্ত রূপ নেয়, তখনই জনবিস্ফোরণ দেখা দেয়।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিলগ্নে জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. জিয়াউদ্দীন আহমদ হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের অনুরূপ পদক্ষেপ অনুযায়ী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করে বক্তৃতা দেন। জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ‘পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা’ নামে একটি নিবন্ধ রচনা করেন। এতে তিনি বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে তা রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তর হবে বলে মতপ্রকাশ করেন। এটিকে তিনি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের নীতিবহির্ভূত বলেও অভিমত দেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এ বক্তব্যে তৎকালীন বাঙালি সমাজ উদ্দীপ্ত হয়। উপমহাদেশের সমকালীন শিক্ষিত সমাজকে উদ্দীপ্ত করার জন্য তিনি নিবন্ধটি ভারতের সাপ্তাহিক ‘কমরেড’ পত্রিকায় ইংরেজিতেও প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। কমরেড পত্রিকায় ‘দ্য ল্যাংগুয়েজ প্রবলেমস অব পাকিস্তান’ নামে নিবন্ধটি ১৯৪৭ সালের ৩ আগস্ট প্রকাশিত হয়। এভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কুফল সম্পর্কে শিক্ষিত সমাজের একটি গ্রুপকে উদ্বেলিত করে তোলা সম্ভব হয়। সে কারণে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষা আন্দোলনের উৎসপুরুষ হিসেবে পরিচিত হন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিষয়টি যখন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে, সে সময়ই সরকারি সব কাজকর্ম ইংরেজি ও উর্দুতে শুরু হয়ে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করা হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব এটি শুরুতেই উপলব্ধি করেন এবং প্রতিবাদে সবার আগে এগিয়ে আসেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা