০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ৮ শাবান ১৪৪৬
`

বিশৃঙ্খলা সমর্থন করবে না বিএনপি

-

- সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ
- বিশৃঙ্খলায় না জড়াতে তৃণমূলে কঠোর নির্দেশনা

দেশজুড়ে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সমর্থন করছে না বিএনপি। দলটি মনে করে, গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরে এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। এটা নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র। বিএনপি নেতাদের অভিমত, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তাই সরকারকেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। এ ইস্যুতে আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে নিজেদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে বিএনপি। তবে এসব ঘটনায় কাউকে সরাসরি দোষারোপ করবে না বিএনপি। এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচিও দেবে না। কিন্তু বিষয়টিকে যে তারা সমর্থন করে না, সেটি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবে দলটি।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুরের ঘটনাগুলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করে। একই সাথে এটাকে এক ধরনের ফাঁদ হিসেবেও মনে করছে তারা। তাই নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা-হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা তৃণমূলে দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন কোনো প্রকার জড়িত না হয়। আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং দলের বৃহত্তর সাথে এই নির্দেশনা দলের প্রতিটি নেতাকর্মী অক্ষর অক্ষরে পালন করবে। বিএনপি নেতারা সর্বোপরি মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের এতদিন পর দেশজুড়ে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে টার্গেট হচ্ছে বিএনপি ও নির্বাচন। একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ছাত্ররা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। উদ্দেশ্য, নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা, যাতে দ্রুত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হয়। কারণ ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে সারা দেশে সংগঠনকে সুসংহত করতে যথেষ্ট সময় চায়। অন্য দিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেশী-বিদেশী চাপও বাড়ছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।

বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, একটি দেশে বিপ্লব, গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার পর পরই নানান ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এতদিন পরে এসে কেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটবে। দেশ কি স্থিতিশীল হবে না? জানা গেছে, বৈঠকে দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে আছে বিভাগীয় সমাবেশ ও জেলায় জেলায় সমাবেশ। এই ইস্যুতে রমজানের আগেই কর্মসূচি পালিত হবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে। তবে আগামী জুলাই-আগস্টেও নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে দলটি। মূলত নির্বাচন দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বিএনপি।
বিএনপি মনে করে, চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের যে লক্ষ্য সেটি পূরণ হবে না। ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই এই সরকারের লক্ষ্য; গত এক দশক ধরে যে ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশ হয়নি। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দেশে ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারেনি কিংবা দেয়নি।
পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন : বিএনপি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি বলেছে, এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। দলটি আরো বলেছে, কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলে বিএনপি। বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য-মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলে গত বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকগুলো ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।

বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশী-বিদেশী অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে। ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নানান ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে যখন-তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে, যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুনশিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
দলটির বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নিন্দিত-ঘৃণিত পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরি অগ্রাধিকার; অথচ এসব বিষয়ে দৃশ্যমান ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুলাই ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশিগগির সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাক্সক্ষা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

সাতক্ষীরার সব আসন দলকে উপহার দিতে চান হাবিব : আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার আশা প্রকাশ করে সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসন বিএনপিকে উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তিনি বলেছেন, আমরা অঙ্গীকার করছি, তারেক রহমানের নেতৃত্বে সুন্দরকে সুন্দর বলব, কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলব। এ অঙ্গীকার নিয়ে আমরা আগামীতে সাতক্ষীরা জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করব।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতারা শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমতুল্লাহ পলাশ, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান হাদী, তাসকিন আহমেদ চিশতী, মনিরুজ্জামান, মো: আখতারুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল