০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ৮ শাবান ১৪৪৬
`

পূর্বাচলে ৩২০ কিলোমিটার পানির লাইনের কাজ হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ

-

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পানির লাইনের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। প্রকল্পটির ছয় হাজার ২১৩ একর আয়তনে মোট ৩২০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ৪১.৬৭ কিলোমিটার পানির লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রকল্পে মোট ২৬ হাজার আবাসিক প্লট বরাদ্দ আছে। এ প্লটগুলোতে পানি সরবরাহের জন্য ১৫টি গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০০৫ সালে অফিশিয়ালি শুরু হওয়ার পর এ প্রকল্পটি দু’বার সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনীর মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রকল্পটি এ সময়ের মধ্যেও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আবারো চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটিকে টেনে নেয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বোর্ড সভায় আবারো চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া। এ সুপারিশ ইতোমধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের বাকি উন্নয়নমূলক কাজের ডিপিপি প্রণয়ন করে ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে অনুমোদনের জন্য বলা হলেও তা জানুয়ারিতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য কাজ শেষ হবে কিন্তু পানির সরবরাহের লাইন এর মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ মুহূর্তে পূর্বাচল প্রকল্পের সব সেক্টরের কিছু কিছু রোডের পাশে ইমারত নির্মাণ করে বসবাস শুরু হলে মানুষ পানি পাবে না।
পূর্বাচল প্রকল্প-সূত্রে জানা গেছে, তারা পরিকল্পনা নিয়েছে ৪টি পর্যায়ে পূর্বাচলের পুরো এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করবে। প্রথম পর্যায়ে ৪১.৬৭ কিলোমিটার পানির লাইন স্থাপন করা হলো। সেই অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ৪টি সেক্টরের কিছু কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ শুরু করেছে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ১ থেকে ৪ নং সেক্টরের আবাসিক প্লটগুলোতে। অন্য দিকে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ নং সেক্টর (আংশিক), ৫ নং, ৬ নং (আংশিক), ৭ নং, ৮ নং (আংশিক) এবং ৯ থেকে ১৫ নং সেক্টরের কিছু কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া আংশিক পানি সরবরাহ করা হবে ১৮ ও ২০ নং সেক্টরেও। এসব সেক্টরে নির্বাচিত অংশে পানির পাইপ বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। তবে পূর্বাচল প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের মধ্যেই সমগ্র পূর্বাচলে পানি সরবরাহ লাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে।
পানি সরবরাহ লাইন দেখাশোনার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষ পূর্বাচলে একটি প্রশাসনিক ভবন ও একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসনিক ভবন ও ওয়ার্কশপ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটি যথা সময়ে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময় অন্যান্য প্রকল্পের মতো পূর্বাচল প্রকল্পের মেয়াদ দু’বার সংশোধিত হয়েছে। প্রতিবারই সংশোধনের সাথে ব্যয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। দ্বিগুণ ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও প্রকল্পটি শেষ হয়নি।
অন্য দিকে পূর্বাচল প্রকল্পটি বসবাসের যোগ্য করার জন্য যে প্রকল্পগুলো আগে নেয়া উচিত তা করা হয়নি। এ ব্যাপারে পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদির মুহাম্মদ খান বলেন, পূর্বাচলের মতো নতুন শহর প্রকল্প চালু করতে হলে প্রথমেই বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো এগিয়ে নেয়া দরকার ছিল। একই সাথে এখানে কম খরচ থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হলে মানুষ সেখানে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশে পরিবারপরিজন নিয়ে থেকে কাজ করবে। ফলে ধীরে ধীরে অন্যরাও আসতে শুরু করবে এবং আরো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠবে। এভাবে প্রকল্পটি বসবাসের যোগ্য হয়ে ওঠবে। কিন্তু পূর্বাচলে এর কিছুই করা হয়নি। পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ আছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্বাচলে নেয়া যায়নি। অন্য দিকে পূর্বাচলের সাথে মূল ঢাকার সহজ যোগাযোগের জন্য বাস সার্ভিস ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য কমিউটার সার্ভিস চালু করারও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সে কারণে পূর্বাচলে বসবাসে আগ্রহী নয় মানুষ।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল