০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ৮ শাবান ১৪৪৬
`

রোমাঞ্চ ছড়িয়ে বরিশালের শিরোপা অক্ষুণ্ণ

-


শিরোপা ধরে রাখতে হলে ফরচুন বরিশালকে টপকাতে হবে রান পাহাড়, গড়তে হবে রান তাড়ার রেকর্ড। বিপিএলের ফাইনালে দুই শ’ রান তাড়া করে জেতার কীর্তি নেই একটিও। ২০২৩ সালে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ১৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতে শিরোপা ঘরে তুলেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএল দ্বিতীয় আসরে প্রথমবার ফাইনালে উঠলেও হতাশা নিয়ে ফিরেছিল চিটাগাং কিংস। এবারের আসর দিয়ে তারা টুর্নামেন্টটিতে প্রত্যাবর্তন করেছে। মাঝে ছন্দপতন হলেও দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে দারুণ ব্যাটিং উপহার দিয়েছে চিটাগাং। বিপিএল ইতিহাসে রেকর্ডগড়া উদ্বোধনী জুটি গড়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন ও খাজা নাফি। দু’জনের ফিফটিতে ভর করে চিটাগাং কিংস ১৯৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ফরচুন বরিশালকে। জবাবে ১৯.৩ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলে তামিমের বরিশাল। আর তৃতীয় শিরোপার দেখা পেল তামিম ইকবাল। একটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে, দু’টি বরিশালের হয়ে।

রান তাড়ায় বরিশালকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। অধিনায়কের একের পর এক বাউন্ডারিতে ৩ ওভার শেষে ৩২ রান করেছে বর্তমান শিরোপাধারীরা। প্রথম ওভারে ১৪ রান নেয় তারা। আরাফাত সানিকে ৪ মেরে রানের খাতা খোলেন তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু পরের পাঁচ বলে কেবল ২ রান নিতে পারেন। তৃতীয় ওভারে শরিফুল ইসলামকে টানা তিনটি চার মারেন তামিম। তার ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পাওয়া ফরচুন বরিশাল পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৭ রান করে। চিটাগাং কিংসও পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৭ রানই করেছিল!
তামিম ও তৌহিদ জুটি পঞ্চাশ স্পর্শ করেছে ৩৪ বলে। আরাফাত সানির বলে ছক্কা হাঁকালেন তামিম, হাফ সেঞ্চুরি করেন ২৪ বলে। এক পর্যায়ে নিজের জোনেই বল পেয়ে পার করতে পারলেন না সীমানা। শরিফুল ইসলামের বলে ধরা পড়লেন লং অফে খালেদের হাতে। ভাঙে ৪৯ বল স্থায়ী ৭৬ রানের জুটি। এক ছক্কা ও ৯ চারে ২৯ বলে ৫৪ রান করেন তামিম। ৯.১ ওভারে ফরচুন বরিশালের স্কোর ১ উইকেটে ৭৬।

বোলার ও ফিল্ডারদের সাথে কথা বলে রিভিউ নিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। সেটা কাজেও লেগে গেল! তামিম ইকবালের পর একই ওভারে ডেভিড মালানের দামি উইকেটও পেল চিটাগাং কিংস। স্টাম্পে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি মালান। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন চিটাগাং অধিনায়ক মিথুন। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেছে, বল আঘাত হানত লেগ স্টাম্পের উপরের দিকে। এরপর হৃদয় স্লগ সুইপে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি। সীমানায় আরাফাত সানির হাতে ধরা পড়ার আগে করেন ২৮ বলে তিন চারে ৩২ রান।
১১ ওভারে ফরচুন বরিশালের রান ৩ উইকেটে ১০৩। ক্রিজে কাইল মায়ার্সের সঙ্গী মুশফিকুর রহীম। ২ বলে ১ রান করে ফিরেন মালান। এরপরই নাঈমের বলে ফিরেন মুশফিক ৯ বলে ১৬ রান করে। ১২.৪ ওভারে বরিশালের রান ১৩০। কাইল মায়ার্স মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ঝড় উঠান ক্রিজে। ১৬ ওভারের ১৬৩ রান। যখন ১৬ বলে ২৩ রান দরকার তখন শরিফুলের বলে সীমানায় সাবস্টিটিউট মার্শাল আইয়ুবকে ক্যাচ দিলেন মায়ার্স। ২৮ বলে তিনটি করে চার ছক্কায় করেন ৪৬। পরের বলেই মাহমুদুল্লাহকে (৭) ফেরালেন শরিফুল। ৩৪ রানে ৪ উইকেট পেলেন তিনি।

বরিশালের জয়ের জন্য দরকার ১২ বলে ২০ রান। ক্রিজে নবী ও রিশাদ। নবী আউট হন ৪ রানে। শেষ ওভারে দরকার ৮ রান। তানভির এলেন ক্রিজে। বোলার তালাত হোসেন। স্ট্রাইকিংয়ে রিশাদ। প্রথম বলে ছক্কা। দ্বিতীয় বলে এক রান। তৃতীয় বল তানভির শূন্য। চতুর্থ বল ওয়াইড। তাতে ১৯.৩ ওভারে বরিশালের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১৯৫। ৩ উইকেটের জয় নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জয়ে উচ্ছ্বাসের ফেটে পড়ে বরিশালের সমর্থক, কর্মকর্তা ও ভক্তরা। রিশাদ ৬ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন। শরিফুল ৪টি, নাঈম দু’টি ও বিনুরা ফার্নান্দো একটি উইকেট নেন।
মিরপর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টানা ম্যাচ হওয়ায় ফাইনালের পিচ কেমন থাকে সেই আলোচনা উঠেছিল। শঙ্কা উড়িয়ে মহারণী ম্যাচে স্পোর্টিং উইকেটেরই দেখা মিলেছে। যেখানে ব্যাট হাতে চিটাগাংকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার। বিপিএল ফাইনালের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো উদ্বোধনী জুটিতে তারা দলীয় সেঞ্চুরি এনে দেন। যদিও তাদের চূড়ান্ত পুঁজিটা আরো বড় হতে পারত। শেষদিকে বরিশালের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চিটাগাং থেমেছে বিপিএল ফাইনালের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯৪ রানে। এর আগে বিপিএলের ফাইনালে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল ২০১৭ আসরে। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে মাত্র ১ উইকেট হারিয়েই রংপুর রাইডার্স ২০৬ রান তুলেছিল। তাদের সেই রেকর্ডটি গতকাল ইমন-নাফিরা ভেঙে দেবেন মনে হচ্ছিল। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও তাদের ভাঙা হয়নি। ২০১৯ আসরের ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১৯৯ রান সংগ্রহ করেছিল। এরপরই অবস্থান চিটাগাংয়ের।

বিপিএলের ফাইনালে এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের কোনো নজির দেখা যায়নি। গত বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বরিশালের হয়ে তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৭৬ রানের জুটি গড়েছিলেন। গতকাল সেটিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটিতে পরিণত করেছেন ইমন-নাফি। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে চিটাগাংয়ের এই দুই ওপেনার ৭৬ বলে ১২১ রান তুলেছেন। দুর্দান্ত এই জুটি ভাঙে নাফির বিদায়ে। পাকিস্তানি এই তরুণ ব্যাটার ৪৪ বলে তিন ছক্কা ও সাত চারে ৬৬ রান করেছেন। এর আগে ৩৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাফি।
দ্বিতীয় উইকেটে গ্রাহাম ক্লার্ককে সাথে নিয়ে ইমন গড়েন ৭০ রানের জুটি। টুর্নামেন্ট জুড়ে চিটাগাংয়ের ব্যাটিংয়ে প্রধান স্তম্ভে পরিণত হওয়া ক্লার্ক ফাইনালেও ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন। তবে অপর প্রান্তে বিপরীত মেজাজে ব্যাটিং করেছেন ইমন। ৩০ বলে ব্যক্তিগত ফিফটি পেলেও তিনি পরের ১৯ বলে করেছেন ২৮ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৪৯ বলে ৬টি চার ও ৪ ছক্কায় ৭৮ রান করেন ইমন। গ্রাহাম ক্লার্কও ফিফটির পথেই ছিলেন। কিন্তু তার উইকেটটি কাটা পড়েছে রানআউটের ফাঁদে পড়ে। এর আগে ২৩ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রান করেছেন ইংল্যান্ডের এই ডানহাতি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে চিটাগাংয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৯৪ রান। বরিশালের হয়ে একটি করে উইকেট শিকার করেন এবাদত ও মোহাম্মদ আলি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
চিটাগাং কিংস : ২০ ওভারে ১৯৪/৩ (নাফে ৬৬, পারভেজ ৭৮*, ক্লার্ক ৪৪, শামীম ২, তালাত ০*; আলি ১/২১, ইবাদত ১/৩৫)।
ফরচুন বরিশাল : ১৯.৩ ওভারে ১৯৫/৭ (তামিম ৫২, হৃদয় ৩২, মালান ১, মুশফিক ১৬, মায়ার্স ৪৬, মাহমুদুল্লাহ ৭, নবী ৪, রিশাদ ১৮, শরিফুল ৪/৩৪, নাঈম ২/১৮, বিনুরা ১/৪২)।
ফল : বরিশাল ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : তামিম ইকবাল।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল