বিএনপির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ নেতাসহ সবাই খালাস
- নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঈশ্বরদী সংবাদদাতা
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪০
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯জনসহ ৪৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি মো: হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ শেষে রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- পাবনা জেলা বিএনপি নেতা কে এম আখতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, তার ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, অপর ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ, বিএনপি নেতা মো: অটল, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি শ্যামল (নূরে মোস্তফা), স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন ও বিএনপির সাবেক নেতা শামসুল আলম।
এর আগে এর আগে ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর গত ৩১ জানুয়ারি শুনানি শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সাথে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মাকসুদ উল্লাহ। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিল আক্তার এলাহী ও মো: কামরুজ্জামান মামুন শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই এ মামলার রায় দেন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: রুস্তম আলী। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সবাই বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী। মামলায় বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথি ২০১৯ সালে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ২০১৯ সালে তড়িঘড়ি করে দুই-আড়াই দিনের শুনানি করে এই মামলার রায় দেয়া হয়েছিল। সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই পাবনা ও ঈশ^রদীর বিএনপি নেতাকর্মী। তিনি আরো বলেন, ওই এলাকায় বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপির যারা দায়িত্বশীল নেতা তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এ মামলায় দণ্ড প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, আমরা শুনানিতে বলেছি একটা পলিটিক্যাল স্কিম বাস্তবায়নের জন্য এই মামলাটা দায়ের করা হয়েছিল। পুরো মামলাটাই ছিল বিদ্বেষপূর্ণ প্রসিকিউশন। অসৎ ও অসুস্থ মামলার প্রমাণ ঘটিয়েছে। এই মামলার রায় ঘোষণায় একটা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। এখানে বিচারিক মানসিকতা প্রয়োগ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য এবং বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য এই রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
রায় শোনার সাথে সাথে ঈশ্বরদী শহরে বিএনপি নেতা কর্মীরা আনন্দে রাস্তায় উল্লাস করতে থাকে। সেই সাথে শহরের রেলগেট, আলহাজ মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা। পরে বেলা দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে সাবেক উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি জাকারিয়া পিন্টুর সমর্থকরা একটি আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকরা আলহাজ মোড় থেকে পৃথক আরেকটি মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
আইনজীবীরা জানান, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ঈশ্বরদীর জিআরপি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আদালত সে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিক তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃতদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে আবার অভিযোগপত্র জমা দেয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মুক্তি পেলেন যে ২৫ জন : বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান, আক্কেল আলী, মোহাম্মদ রবি, মোহাম্মদ এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মো: মামুন, মামুন-২, সেলিম হোসেন, মো: কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম ওরফে লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম, আলমগীর হোসেন, এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও আবুল কালাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা