০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

ইউকের আদলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার বিএনপির

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : নয়া দিগন্ত -

বাংলাদেশে ‘যুক্তরাজ্যের (ইউকে) ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এনএইচএসের আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই রূপরেখা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা যেমন আজো নিশ্চিত হয়নি, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষাও পরিকল্পিত নয়। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাক্সিক্ষত প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করেনি। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা সর্বজনীন ও জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি। চিকিৎসা পাওয়া জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার কথাটির বাস্তব প্রতিফলন আজো প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছেনি।’
তিনি বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার আলোকে বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার ২৬তম ধারায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে উন্নত কল্যাণকামী রাষ্ট্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার আলোকে সবার জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হবে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এই জাতীয় সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার আলোকে সবার সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তাবনা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্যবিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরো সম্প্রসারিত করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপি ৫%-এর কম হবে না। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ, পল্লী স্বাস্থ্য কর্মীর ব্যবস্থা করা হবে। সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে কুক্ষিগত করার ফলে চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্কের অবনতি, বিদেশমুখী চিকিৎসার বিস্তার ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ছাত্র-জনতা বিপ্লবে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ওই আন্দোলন আহতদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার দ্রুত ব্যবস্থার দাবিও জানান খন্দকার মোশাররফ।
বিএনপির প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক উন্নয়নে তিন ধাপে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় স্বল্প মেয়াদি (এক থেকে তিন বছর) পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ‘মধ্য মেয়াদি’ (এক থেকে পাঁচ বছর) এবং ‘দীর্ঘ মেয়াদি’ (১০ বছর পর্যন্ত) পরিকল্পনার মাধ্যমে গোটা স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য খাতে নেয়া সংস্কারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি। তবে আমরা আশা করি না যে, তারা এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা রাখে বা সেই সময় পর্যন্ত তারা থাকবে। আমরা জাতির জন্য এই প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি এসব প্রস্তাবনা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে জনগণের যে সরকার আসবে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। আর যদি বিএনপি ক্ষমতা পেলে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে আমাদের উপস্থাপিত সব কিছু বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাব। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবার মতামতকে পূর্ণ মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিগত সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল আমাদের স্বাস্থ্য খাত নষ্ট করে পার্শ্ববর্তী দেশে আমাদের লোকদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো। এজন্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে চলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশে।
খালেদা জিয়ার ২০০১-০৬ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত ক্যান্সার হাসপাতালের ওই সময়ের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম বলেন, ‘আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। আজ আমি সেখানে গিয়েছিলাম একটা কাজে। এখন ক্যান্সার শনাক্ত ও চিকিৎসার প্রধান যে যন্ত্র তার চারটাই এখন নষ্ট। অর্থাৎ সম্পূর্ণ চিকিৎসাই বন্ধ। ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য যে মেশিন দরকার সেই এনালাই মেশিন-সিটি স্ক্যান মেশিন সেটাও নষ্ট। আমরা যেসব চিকিৎসকদের জার্মানি থেকে ট্রেনিং করিয়ে নিয়ে এসেছিলাম তারা কেউ এখন সেই হাসপাতালে নেই। ওদেরকে এমন জায়গায় বদলি করা হয়েছিল যে তারা পদত্যাগ করে এখন বড় বড় হাসপাতালে চলে গেছে। ২০০৬ সালে ক্যান্সার হাসপাতালটি ছিল তিন শ’ বেডের। সেখানে যে জনবল ছিল বর্তমানে হাসপাতাল পাঁচ শ’ বেডে উন্নীত হলেও জনবল রয়ে গেছে সেই রকমই।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম এবং মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement