০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

পশ্চিমতীরে ধ্বংসলীলা ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য দোহায় ইসরাইলি দল
-

গাজা উপত্যকার পর এবার ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের জেনিন শহরটি ধ্বংস করতে শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই পশ্চিমতীরে বড় ধরনের হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। গত রোববার জেনিনে একসাথে ২৩টি ভবন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়। একই দিনে সত্তরোর্ধ্ব এক ফিলিস্তিনিসহ দু’জনকে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। আল জাজিরা ও রয়টার্স।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ তৈরি ঠেকাতে জেনিন শরণার্থীশিবিরের আদ-দামজ এলাকায় অন্তত ২৩টি ভবন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এমনকি, জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে পশ্চিমতীরে শুরু হওয়া এই হামলায় ৫০ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করারও দাবি করেছে আইডিএফ। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেনিনে আবাসিক এলাকা গুঁড়িয়ে দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ৭৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। পৃথক ঘটনায় পশ্চিমতীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় আররোব এলাকায় মোহাম্মদ আমজাদ হাদোশ নামের ২৭ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। জেনিনে এভাবে ধ্বংসলীলা চালানোর এই ঘটনাকে ‘নৃশংস’ বলে আখ্যা দিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জেনিন ও তুলকারম শরণার্থীশিবিরে গোটা আবাসিক এলাকা ধ্বংস ঠেকাতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশন ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। প্রায় ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পরপরই অধিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন শহরে ‘আয়রন ওয়াল’ নামে বড় ধরনের হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।
ইসরাইলের উসকানি সত্ত্বেও বন্দিবিনিময় অব্যাহত রয়েছে : এরদোগান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান বলেছেন, ইসরাইলের শত উসকানি সত্ত্বেও, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বন্দিবিনিময় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আনাদোলু এজেন্সি জানায়, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর দেয়া এক বক্তৃতায় তিনি এই কথা বলেছেন। এরদোগান বলেন, আমি গত সপ্তাহে হামাসের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেছি। সে সময় আমি তাদের জানিয়েছি, যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্থায়ী করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে প্রস্তুত আছে তুরস্ক। তিনি ইসরাইলি বন্দীদের সাথে ফিলিস্তিনি বন্দীদের শারীরিক অবস্থার তুলনা করেন। তুর্কিয়ে নেতা বলেন, ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দী এবং হামাসের মুক্তি দেয়া ইসরাইলি বন্দীদের শারীরিক অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এর মাধ্যমেই হামাস এবং ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মানসিকতা বুঝা যায়।
তিনি আরো বলেন, ইসরাইলি বন্দীদের অত্যন্ত সমাদরে রেখেছে হামাস। অথচ ফিলিস্তিনি বন্দীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার ছিল। এরদোগান গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখের বেশি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ইসরাইলি বোমা হামলায় অবরুদ্ধ এই ছিটমহলের বেশির ভাগ ভবনই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, এই কঠিন সময়ে গাজা উপত্যকায় আমাদের ভাই ও বোনদের একা ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসের আগে গাজার নির্যাতিত মানুষকে আরো সহায়তা দেয়ার জন্য আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। এই চুক্তির আওতায় হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দীদের বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এই বন্দিবিনিময় কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য দোহায় ইসরাইলি দল : যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করতে একটি উচ্চস্তরের প্রতিনিধিদল কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। গতকাল মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। মূল চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ে গাজায় আটক ইসরাইলিদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয়েছে, যা যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তির পথে একটি পদক্ষেপ হতে পারে
গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো ১৮ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার : এ দিকে গাজার ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরো ১৮ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৭ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এর পর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু। বার্তা সংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরো ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরো ২০ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৬১২ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
এবার গাজার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা জাপানের : জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবার গাজার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা এবং গাজার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় জাপান নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান তিনি। কিয়োডো নিউজ এজেন্সির বরাতে আনাদোলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবরে বলা হয়েছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন- তার সরকার গাজার ফিলিস্তিনিদের জাপানে চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার কথা বিবেচনা করছে। ইশিবা আরো বলেন, গাজায় অসুস্থ বা আহত ব্যক্তিদের জাপানে আনার উপায় খুঁজে বের করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি চালু করার চেষ্টা করবে জাপান। এ ছাড়া গত মাসে মালয়েশিয়া সফর করেন ইশিবা। তখন তিনি বলেছিলেন, তার দেশ ফিলিস্তিনের উন্নয়নে সহায়তা করবে।


আরো সংবাদ



premium cement