০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১, ৪ শাবান ১৪৪৬
`

বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট তৈরি করছে সরকার

কাল প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বাজেটের খসড়া রূপরেখা উত্থাপন
-


উচ্চাভিলাষী বাজেট নয়, একটি বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। আগামী বাজেটকে কোনোভাবে ‘ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে’ বড় না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাজেটে অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প কোনোভাবে যেন না থাকে তারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই সব নির্দেশনার আলোকে অর্থ বিভাগ আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বাজেটের এক খসড়া রূপরেখা তৈরি করে কাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কাল বুধবার বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টার সামনে আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি সম্ভাব্য সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন অর্থ সচিব। এ সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহেদ উদ্দিন মাহমুদও উপস্থিত থাকবেন।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সম্পদ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটের খসড়া তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার ধরা হয় দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাজেটের আকার আরও খানিকটা কমানোর জন্য। এ জন্য এডিপির আকারও কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এরই আলোকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বাজেটের একটি খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার আট লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে। এ জন্য এডিপির আকারও কমানোর প্রয়োজন হবে। এর ফলে এডিপির আকার ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করা হতে পারে। তিনি বলেন, এবারকার উন্নয়ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন বেশি করা হবে। এ ক্ষেত্রে রেশিও (অনুপাত) হবে ৬৩:৩৭। অর্থাৎ, অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন হবে ৬৩ শতাংশ এবং বিদেশী অর্থায়ন ধরা হবে ৩৭ শতাংশ। অন্যান্যবার দেশীয় অর্থায়নের হার হয় ৬০ শতাংশ এবং বিদেশী অর্থায়ন ধরা হয় ৪০ শতাংশ।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। এবারই প্রথম করজাল সম্প্রসারণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য আয়কর দাতাদের চিহ্নিত করা হবে। বাজেটে আয়কর খাত থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করা হবে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জন্য এনবিআরকে পাঁচ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করার প্রাথমিক টার্গেট দেয়ার চিন্তা ছিল। কিন্তু এখন তা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের এই টার্গেট কোনোভাবেই পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ আগামী অর্থবছরের শেষ ভাগে একটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। আর আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের বাড়ানোর জন্য যে ব্যাপক করজাল সম্প্রসারণ করা দরকার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে তাও করা সম্ভব হবে না। এসব কারণে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পাঁচ লাখ কোটি টাকার নিচে রাখাই সমীচীন হবে।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা রয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য আদায় লক্ষ্য রয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বছরের মাঝ পথে এসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য কমানো হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ কম। পাশাপাশি গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের চেয়েও প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কম। ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।
এ দিকে, আগামী অর্থবছরে জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে দ্ইু লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে যা রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী সংশোধন করে তা কমিয়ে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement