০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১, ৪ শাবান ১৪৪৬
`
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি

সড়ক-রেলপথ আটকে দাবি আদায়ের চেষ্টা শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর মহাখালীতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ : নয়া দিগন্ত -


বিশ্ববিদ্যালয় করণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা এবার সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন। এর আগে গতকাল সকাল থেকে মহাখালী-গুলশান রোড বন্ধ করে অবরোধ করে। পরে বিকেল ৩টায় মহাখালী রেলগেটের সামনে রেললাইনের উভয় পাশে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে এই লাইনে ট্রেন চলাচল। অবরোধের মুখে নোয়াখালী অভিমুখের উপকূল এক্সপ্রেস ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের দিকে ফেরত গেছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া মহাখালীর আমতলী মোড়ে জলকামান রাখা হয়েছে। অপরদিকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এটা সব মানুষকে বোঝাতে হবে। তিতুমীর আন্দোলনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, আমরাও এই ভোগান্তি পোহাচ্ছি।
গতকাল বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, রেললাইনের ওপর ও পাশে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। আর তাদের চারপাশ ঘিরে পুলিশ, ডিবি, বিজিবি এবং এবিবিএন সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। এর পেছনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে জলকামান। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত একই স্থানে অবরোধ করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ওপরের নির্দেশের অপেক্ষায় পুলিশ ও বিজিবি কোনো অ্যাকশনে যায়নি।

বিকেল থেকে রেললাইনে অবস্থান : বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন। তাৎক্ষণিক উপস্থিত রেলকর্মীরা লাল পতাকা দেখিয়ে রেললাইন ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যান। পরে ট্রেনের চালক লাল পতাকা দেখে ধীরে ধীরে ট্রেনের গতি থামিয়ে মহাখালী রেলগেটের কাছাকাছি এসে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন।
এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছিলেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ চালিয়ে যাবেন।
এর আগে সকালের দিকে তিতুমীর কলেজের উভয় পাশে বাঁশ দিয়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। দিনভর মহাখালী-গুলশান রোডে যানচলাচল বন্ধ থাকার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট লেগেছিল। এসময় সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অবরোধের কারণে ভোগান্তি থেকে বাদ যায়নি নারী-শিশুসহ রোগীরাও।
ট্রেন শিডিউলে লণ্ডভণ্ড : বিকেল থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে যেতে পারেনি অন্তত ১৭টি ট্রেন। একই পরিস্থিতি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন। ফলে ট্রেনের শিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন গত রাতে বলেন, এখনো দিনের ১৮টি আন্তঃনগর ট্রেনের ঢাকা থেকে ছাড়ার শিডিউল রয়েছে। এসব ট্রেনের মধ্যে ১৭টি ঢাকা থেকে ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। শিডিউলে থাকা ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জগামী সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৭৬), চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস (৭০২), তারাকান্দিগামী যমুনা এক্সপ্রেস (৭৪৫), চিলাহাটিগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস (৮০৫), দেওয়ানগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস (৭৪৩), কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্ধুর গোধূলি (৭৪৯), খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস (৭৬৪), পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস (৭৫৭), কুড়িগ্রামগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস (৭৯৭), চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২), লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস (৭৫১), সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস (৭৪০), মোহনগঞ্জগামী হাওর এক্সপ্রেস (৭৭৭), কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস (৮১৪), রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস (৭৫৯), চট্টগ্রামগামী তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২) এবং পঞ্চগড়গামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩)। এ ছাড়া বেনাপোলগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৬) ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে যাবে বলে ট্রেনটি বিলম্ব নাও হতে পারে।
তিতুমীর আন্দোলনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, আমারও : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভোগান্তি হচ্ছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এটা সব মানুষকে বোঝাতে হবে। গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারাই বলেন, আমাদের কী করা উচিত। মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, আমারও নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এটা এখন সবারই দায়িত্ব। সচিব মহোদয় যেটা বলেছেন সেটা প্রচার করেন- জনগণই তাদের উঠিয়ে দেবে।

তিতুমীর আন্দোলন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় দাবির যৌক্তিকতা দেখা যাচ্ছে না।’
উল্লেখ্য, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন বিকেল থেকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আর বৃহস্পতিবার থেকে বিরতি দিয়ে চলছে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি।
জনভোগান্তি করা যাবে না : এদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্যধারণ করতে হবে। তাদের শিক্ষাজীবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এ সরকার দায়িত্বশীল। এ মুহূর্তে হয়তো অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। এজন্য জনভোগান্তি যেন না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আশা করি ভালো কিছু হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, সাত কলেজের সমস্যাটা দীর্ঘদিনের জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম থেকেই সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট। সেখানে থাকা প্রত্যেকটি কলেজকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। হয়তো শিগগিরই একটি ইতিবাচক সমাধানের পথে তৈরি হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement