বাজেট ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন
এডিপি’র অর্থায়নে বিদেশী ঋণ ৬০ ভাগ, দেশীয় ৪০ ভাগ- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৫
বাজেট ব্যবস্থাপনা আর আগের মতো থাকছে না। এতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এবার উন্নয়ন বাজেটে (এডিপি) সংশোধনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, দেশীয় অর্থায়নের চেয়ে বৈদেশিক অর্থায়ন বেশি হবে। যেমন- উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৬০ ভাগ হবে বৈদেশিক ঋণ। আর দেশীয় অর্থায়ন হবে ৪০ ভাগ। ড. ওয়াহিদ বলেন, রাজস্ব আয় না বাড়ার কারণে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে রাজস্ব বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, চীনা প্রকল্পের ঠিকাদাররা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন। আমরা সে অবস্থার পরিবর্তনে কাজ করছি। অন্য দিকে একনেক সভায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পরিকল্পনা সচিবসহ অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিদেশী ঋণ যদি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ তৈরি করে তাহলে ভালো। বৈদেশিক ঋণ বেশি নিলেও সেটি উৎপাদনশীল কাজে লাগানো হবে। রফতানিমুখী খাতে বৈদেশিক ঋণ ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, গত সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ বাড়ছে এবং তা চলতি অর্থবছর থেকেই। আগামী অর্থবছরগুলোতে আসল পরিশোধের ব্যাপক চাপ বাড়বে। এরপরও বলব বৈদেশিক ঋণ আমাদের জন্য খারাপ নয়। যেমন- ভিয়েতনাম অনেক বৈদেশিক ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু তারা তো কোনো সমস্যায় পড়েনি।
ড. ওয়াহিদ বলেন, মংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণ প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন আছে। আমরা খতিয়ে দেখেছি এই ঋণের ক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতা বা ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটি হয়নি। গুরুত্ব বিবেচনা করেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প আমাদের সরকারের নয়, গত সরকারের ছিল। তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পই চলছে। সেগুলো তো মাঝপথে বন্ধ করা যাবে না। তবে অবকাঠামো অংশ বাদ দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হবে। যেমন- শুধু মেডিক্যাল কলেজ বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোতে যন্ত্রপাতি পরিচালনা এবং শিক্ষা দেয়ার মতো দক্ষ শিক্ষক নেই। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যার ৮০ শতাংশ শিক্ষক নেই। সেজন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন করা হবে।
একনেক সভায় চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন মংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণ প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, গত সরকারের আমলে চীনা প্রকল্পের ঠিকাদাররা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা সে অবস্থার পরিবর্তনে কাজ করছি।
চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই হার ছিল ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
তিনি জানান, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছর খরচ হয়েছিল ৬১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। তবে আগের অর্থবছরের হিসাবগুলো হলো সংশোধিত এডিপির। আর চলতি অর্থবছরের হিসাব হচ্ছে মূল এডিপির। সুতরাং এডিপি সংশোধন করা হলে আকার ছোট হবে। ফলে বাস্তবায়ন হার বেড়ে যাবে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশ সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি : প্রধান উপদেষ্টা
বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশ সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে গতকাল এ কথা বলেন। এতে প্রধান উপদেষ্টা সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এ দেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে আসছেন। এ দেশ আমাদের সবার। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার ভাগ্যোন্নয়ন এবং সমান অধিকার সুনিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি দেবী সরস্বতীর পূজা-অর্চনা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবার প্রতি জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান। এতে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সব নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা