০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১, ৩ শাবান ১৪৪৬
`
গাজাবাসীকে মিসর ও জর্দানে স্থানান্তর

ট্রাম্পের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আরব কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতি

-

গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে মিসর ও জর্দানে পাঠানোর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের গ্রহণের জন্য মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরেছেন তারা। মিসরের রাজধানী কায়রোতে গত শনিবার এক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন আরব কূটনীতিকরা। আরব নিউজ।
যৌথ বিবৃতিতে সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং সঙ্ঘাত ছড়িয়ে দেবে। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকেও নস্যাৎ করবে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি স্থাপন এবং ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরসহ তাদের অধিকার খর্ব করার যেকোনো ষড়যন্ত্র বা অপচেষ্টা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
তারা আরো বলেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কাজ করতে তারা প্রস্তুত। জাতিসঙ্ঘের সাথে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের মিসরের পরিকল্পনাকেও স্বাগত জানিয়েছেন আরব মন্ত্রীরা। সম্মেলনে গাজা পুনর্নির্মাণের ওপর আলোকপাত করা হবে। তবে সম্মেলনের জন্য এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, ছয়-পক্ষীয় মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং বন্দীদের বিনিময়কে স্বাগত জানানো হয়েছে।
একই সাথে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার এবং গাজা উপত্যকায় কোনো বাধা ছাড়াই মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। বৈঠকে গাজা যুদ্ধবিরতির পূর্ণ বাস্তবায়নকে সমর্থন করে গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানান আরব মন্ত্রীরা। এ ছাড়া গাজা বিভক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান এবং পশ্চিমতীর এবং পূর্ব জেরুসালেম পরিচালনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন।

তারা গাজার পুনর্গঠনের জন্য বিশ্বব্যাপী সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করা যায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। একই সাথে জোর করে ফিলিস্তিনিদের ভূমি অধিগ্রহণ এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ স্থানচ্যুতি নীতির নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতায় গাজা পুনর্গঠন সম্মেলন আয়োজনের জন্য মিসরের পরিকল্পনাকেও সমর্থন করেছে। আবারো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রের মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন আরব মন্ত্রীরা।
ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের জন্য ২০২৫ সালের জুনে সৌদি-ফ্রান্সের নেতৃত্বে আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সমর্থন করেছে তারা। গত সপ্তাহে মিসর ও জর্দানের মতো আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রতি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দাবি, ইসরাইলি বোমাবর্ষণে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের স্থানান্তর করে অঞ্চলটি পরিষ্কার করা উচিত। তবে সমালোচকরা ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
২৯ জানুয়ারি মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, গাজাবাসীর জন্য সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত তার দেশ। ৩০ জানুয়ারি ট্রাম্প পুনরায় তার প্রস্তাবের পক্ষে সাফাই গেয়ে মিসর ও জর্দানের প্রতি মার্কিন সামরিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, জর্ডানে ইতোমধ্যেই লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী বসবাস করছে। মিসর ও জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement