০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১, ৩ শাবান ১৪৪৬
`

গাজায় যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্বের আজ আলোচনা শুরু

-

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সাথে সাক্ষাতে গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল রোববার ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ইসরাইল ছেড়ে যাওয়া নেতানিয়াহু আজ সোমবার উইটকফের সাথে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছে নেতানিয়াহুর অফিস। যুক্তরাষ্ট্র সফরে নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ করে গাজা ও ইসরাইলি বন্দীদের নিয়ে আলোচনা করবেন। নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, উইটকফের সাথে বৈঠকে নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইলের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করবেন। এরপর উইটকফ মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের সাথে ইসরাইলের অবস্থান নিয়ে কথা বলবেন। মিসর ও কাতারের এসব কর্মকর্তাই গত ১৫ মাস ধরে ওয়াশিংটনের সমর্থন নিয়ে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতা করে আসছেন।
তাদের প্রচেষ্টায় জানুয়ারিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে জটিল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। তিন পর্বে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের কথা আছে। এই যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় লড়াই বন্ধ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী হামাস এ পর্যন্ত ১৮ বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরাইল তাদের কারাগার ও আটক কেন্দ্রগুলোতে বন্দী কয়েক শ’ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। এখনো গাজায় ৭০ জনেরও বেশি বন্দী আছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

হামাসের প্রতিরোধ : গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চললেও অধিকৃত পশ্চিমতীরে সামরিক অভিযান ও হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। এ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বলেছে, অধিকৃত পশ্চিমতীরে প্রতিরোধ আন্দোলন থামবে না এবং ইসরাইলি দখলদারদের অধিগ্রহণ ও বাস্তুচ্যুতকরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। গতকাল রোববার ভোরে এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস। একই সাথে সংগঠনটি অধিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন ও কাবাতিয়া শহরে ইসরাইলের ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
পশ্চিমতীরে বিমান হামলা : এদিকে অধিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন শহরে শনিবার ইসরাইলি বিমান হামলায় ১৬ বছরের এক কিশোরসহ পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জেনিনে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র দুই দিন পর ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান তৃতীয় সপ্তাহ ধরেও চলবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

ইসরাইল জানিয়েছে, তারা সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামের খোঁজে জেনিনে অভিযান চালাচ্ছে। বিমানবাহিনীর সমর্থন নিয়ে শত শত ইসরাইলি সেনা এই অভিযানে নেমেছে। জেনিনে তাদের সাথে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বন্দুক লড়াইও হচ্ছে। তাদের বিমান হামলায় একজন কিশোর নিহত হয়েছে, রয়টার্সের এমন জিজ্ঞাসার উত্তরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বিমানবাহিনী জেনিন এলাকায় ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের’ ওপর আঘাত হেনেছে। তারা আর কিছু বলতে রাজি হয়নি। জেনিনের শরণার্থী শিবিরের পানির সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিবিরটির অন্তত ৮০ শতাংশ বাসিন্দাকে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বুধবার বলেছেন, সামরিক অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী জেনিনে অবস্থান করবে। তবে কবে সামরিক অভিযান শেষ হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
৩৭ রোগীকে মিসরে স্থানান্তর : ইসরাইলের ১৫ মাসব্যাপী অবিরাম হামলায় ভেঙে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও বহু আহত মানুষ পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার ৩৪ শিশু ও ৩ প্রাপ্ত বয়স্ককে উন্নত চিকিৎসার জন্য মিসরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসের পর প্রথমবারের মতো রাফা সীমান্ত দিয়ে এই স্থানান্তর কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানান, গুরুতর অসুস্থ এসব রোগীকে চিকিৎসার জন্য মিসরে নেয়া হয়েছে। তিনি মিসর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, গাজা থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য মিসরকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি দ্রুত আরো রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোগীদের জীবন বাঁচাতে সব সম্ভাব্য পথ ব্যবহার করে চিকিৎসা স্থানান্তর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement