চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি দখলদারিত্বে জামায়াত কোথাও জড়িত নয়
- তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ সুনামগঞ্জ
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৪
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান জুলাই-আগস্টের গণ-অদ্ভ্যুত্থানের শাহাদাৎ বরণকারী ও আহতদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে ১৭ বছরে অনেক জুলুম, খুন, গুম, নির্যাতন সহ্য করেছি। যারা মানুষকে খুন গুম করেছে তাদের বিচার হতে হবে। দেশের কোথাও আমাদের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্বে জড়িত নয়। এটা আমাদের গর্বের বিষয় না। মহান আল্লাহ র অনুগ্রহ।
সুনামগঞ্জ আমার একান্ত স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। শিক্ষা জীবন শেষে প্রথম চাকরিকালীন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জকে স্মরণ করে বলেন, কিছু দিন চাকরি করার পর চাকরি ছেড়ে দেশ ও জাতির কল্যাণের কাজে অংশ গ্রহণ করি।
সুনামগঞ্জের বোরো ধান, বালু-পাথর, মাছ দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধ উর্বর ভূমি। দেশের সবচেয়ে বড় মাদার ফিসারি টাঙ্গুয়া এই সুনামগঞ্জে অবস্থিত। বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনাময় সুনামগঞ্জে রয়েছে যা অতীতে কেউ কাজে লাগাতে পারেনি দেশের জন্য। কৃষি শিল্প, ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, হিউমান ইন্ডাস্ট্রি (মানব শিল্প) এই তিন শিল্পের সমন্বয়ে যে দেশ গড়ে উঠবে, সেই দেশটি আর অন্য দেশের কাছে পরনির্ভরশীল হতে হয় না। সুনামগঞ্জ বিশাল সম্ভাবনার জেলা। এখানকার কৃষি শিল্পকে ভালো করে কাজে লাগাতে হবে। এই হাওড়া অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানরা তাদের মেধা বিকাশে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। এই দেশ অর্থনীতির উর্বর ভূমি হওয়ায় আজ থেকে দুই শত বা আড়াই শত বছর আগে ভীনদেশীরা আসতো রোজগার করার জন্য তাদের ভাগ্য গড়তে। তাই অতীতে ব্রিটিশরা, পর্তুগিজরা, মোগলরা হুমড়ি খেয়ে আমাদের দেশে পড়েছিল। সেই দেশ এখনো গড়া সম্ভব, যদি দেশ ও জাতির নেতৃত্বে যারা থাকেন তারা সৎ হন, তাদের কমিটমেন্ট, মিশন-ভীষণ যদি ঠিক রাখেন। রাজনীতিতে চলছে ধোঁকাবাজি ও মিথ্যাচার। কথায় ও কাজের মিল নেই। যারা এমনটি করে তাদের কাছে দেশ ও জাতী নিরাপদ নয়।
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জামায়াত আমির বলেন, আমাদের মাথার তাজ ৫ জন দেশবরেণ্য নেতাকে এক এক করে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ফাঁসির রশি তাদের কাছে পায়ের জুতার ফিতার মতো ছিল। জেলে যারা ফাঁসি বাস্তবায়ন করেন তাদের মধ্যে একজন আমাকে বলেছিলেন, জীবনে কত মানুষকে ফাঁসি দিতে দেখলাম কিন্তু আপনাদের নেতাদের ফাঁসিটা ছিল খুবই ব্যতিক্রম। যখন ফাঁসির রায়ের আদেশ উনাদের শোনানো হয়েছে ;তখন কোনো ধরনের বিভ্রান্ত অবস্থা দেখিনি, তারা উচ্চ স্বরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেছেন আলহামদুলিল্লাহ! ফাঁসির মঞ্চে তারা কালিমা শাহাদাত পড়তে পড়তে নিজে নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবেই এগিয়ে গিয়েছিলেন! এমন বক্তব্যে অনেক নেতাকর্মীকে অশ্রুসিক্ত হতে দেখা যায়। তিনি বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের ছিল না সততা, স্বচ্ছতা, মানবতা, ন্যায়পরায়ণতা, নিষ্ঠা ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা। এ কারণেই জঙ্গলে কলা পাতায়, পাহাড়ে, বনে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। বিনা ভিসায় ও বিনা টিকিটে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
আমাদের দলীয় নিবন্ধন প্রতিহিংসাপরায়ণতায় বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। মনের সব কষ্ট লুকিয়ে রেখে দেশের মানুষের কল্যাণে নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
যারা এই বাংলাদেশের নাগরিক তারা সবাই বাংলাদেশী। এখানে মেজরিটি আর মাইনরিটি বলতে কিছু নেই। ধর্মীয় পরিচয় যার যার থাকবে, কিন্তু আমরা সবাই এই দেশের মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে মিলে মিশে থাকতে চাই। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে নতুন রূপে সাজাতে চাই। আমাদের সংবিধান যে অধিকার দিয়েছে দেশের সবার জন্য সমান অধিকার। কিছু দুষ্কৃতকারীর কারণে ৫ আগস্টের পর দেশের পট-পরিবর্তনের সময় জামায়াতে ইসলামীর সব সহকর্মী স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে আমাদের ভিন্ন ধর্মের ভাইদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়িঘর পাহারা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের উপরে যদি কোনো বদনাম থাকে তাহলে সত্য তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের বিচার হোক, কিন্তু বিচার হতে হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। জামায়াতের আমির ডা: শফিক বলেন, আমি জাতিসঙ্ঘে একটি চিঠি লিখে ছিলাম হিউমান রাইটস কমিশনকে, যে বাংলাদেশে ৭২ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে তার একটি ব্যাপক সুষ্ঠু তদন্ত করে এর শ্বেতপত্র বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করে দেয়া হোক।
জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমদ খানের সভাপতিত্বে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। জেলা জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি এড. নুরুল আলম ও মাও: আব্দুল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।
বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী শিশির মনি, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মখলিছুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা নায়েবে আমির সিনিয়র আইনজীবী এড. শামস উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সুনামগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি মমতাজুল হাসান আবেদ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা