০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ২ শাবান ১৪৪৬
`
আলজাজিরার বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে বেশি ভুগবে ইউক্রেন ও ইসরাইল বাংলাদেশ কুড়িতম

-

ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান বৈদেশিক সহায়তাগুলো পর্যালোচনা করার পর সেগুলো চালিয়ে নেয়া বা একেবারে স্থগিতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তাতে বিভিন্ন বৈশ্বিক কর্মসূচির কোটি কোটি ডলারের তহবিল পড়েছে হুমকির মুখে। ফলে সহায়তা বন্ধের ঘোষণায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা। আলজাজিরা এ নিয়ে এক বিশ্লেষণে বলেছে, ২০২৩ সালে ওয়াশিংটন সাত হাজার ২০০ কোটি (৭২ বিলিয়ন) ডলার বিদেশে সহায়তা দিয়েছে। এটি বন্ধ হলে ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত দেশগুলোর জন্য হবে বড় ধাক্কা। এতে দুর্ভিক্ষপীড়িত, যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে জরুরি খাদ্য সহায়তাসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল ও মিসরে সামরিক সহায়তাও হুমকিতে পড়তে পারে।

কাকে কতটুকু দেয় যুক্তরাষ্ট্র : বিশ্বে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সব থেকে বড় দাতা দেশ। ২০২৩ সালে দেশটি থেকে সব থেকে বেশি সহায়তা পেয়েছে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ইউক্রেন। গত বছর ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট এক হাজার ৬৬২ কোটি ডলার পেয়েছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা এক হাজার ৬৪৮ কোটি ডলার ও সামরিক সহায়তা ১৪ কোটি ডলার। এরপরেই রয়েছে ইসরায়েল। দেশটি মোট ৩৩১ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক কোটি অর্থনৈতিক সহায়তা বাদে পুরোটাই সামরিক সহায়তা। তবে মার্কিন সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কুড়িতম স্থানে এবং এর পরিমাণ হচ্ছে শূন্য দশমিক পাঁচ পাঁচ বিলিয়ন ডলার। মানে অর্ধ বিলিয়নের সামান্য কিছু বেশি। দেশটি বাংলাদেশকে দিয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৫১ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা আর চার কোটি ডলার দিয়েছে সামরিক সহায়তা হিসেবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন পরিচালিত প্রকল্পে কাজ করা সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্রমান্বয়ে ছাটাই করার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।

এরপর ইথিওপিয়া ১৭৭ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। জর্ডানকে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোট ১৭২ কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে ১২৯ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা ও সামরিক সহায়তা ৪৩ কোটি ডলার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা মিসর সবমিলিয়ে পেয়েছে ১৪৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা ২২ কোটি ডলার ও সামরিক সহায়তা পেয়েছে ১২২ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র গত বছর আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে ১২৭ কোটি ডলার। সোমালিয়াকে অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে ১০৮ কোটি ডলার ও সামরিক সহায়তা হিসেবে ১৩ কোটি ডলার। ইয়েমেন অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে ৮৩ কোটি ডলার।

এসব অর্থ ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ (ইউএসএআইডি) বিভিন্ন বৈশ্বিক কর্মসূচি থেকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএআইডির মাধ্যমে চার হাজার ২৪৫ কোটি ডলার দেয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট দিয়েছে এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার ও মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ দিয়েছে ২১৭ কোটি ডলার। খাতওয়ারি বেশি দিয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়নে, এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবায় দেয়া হয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার। মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে এক হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। তবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ৮২০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে বিভিন্ন দেশকে, যার অর্ধেকই পেয়েছে ইসরায়েল ও মিসর।

আলজাজিরা লিখেছে, ২০২৮ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলকে প্রতি বছর ৩৮০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলেই। আর ব্রাউন ইউনিভার্সিটির যুদ্ধসংক্রান্ত ব্যয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলকে অতিরিক্ত আরো এক হাজার ৭৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১২ হাজার কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক সহায়তা পাওয়ার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিসর। ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র মিসরকে ১২০ কোটি সামরিক সহায়তা দিয়েছে। ওই চুক্তির পর থেকে মিসর অর্থনৈতিক সহায়তাও পেয়ে আসছে।
যে কর্মসূচিতে প্রভাব বেশি পড়বে : সহায়তা বন্ধের ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্ট’স ইমারজেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফ’ (পিইপিএফএআর) কর্মসূচিতে প্রভাব পড়তে পারে। ২০০৩ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের হাত ধরে বিশ্বের সবথেকে বড় এ স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালুর পর থেকে এটি ১২ হাজার কোটি ডলার গ্রহণ করেছে সরকারের কাছ থেকে।

পিইপিএফএআর মনে করে বিশ্বজুড়ে ৫০টি দেশে তারা আড়াই কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, যার মধ্যে ৫০ লাখের বেশি শিশু। এই কর্মসূচিতেও সহায়তা স্থগিতের সমালোচনা করে ‘ফাউন্ডেশন ফর এইডস রিসার্চ’ বলছে, এর ফলে লাখো মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে এইচআইভি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে। ঘানা, মোজাম্বিক ও দক্ষিণ আফ্রিকায় এইচআইভি ও যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করা ‘অলাভজনক’ অরাম ইনস্টিটিউট কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অরাম ইনস্টিটিউটও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তহবিল নিয়ে কাজ করে। সহায়তা বন্ধের ধাক্কা পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।


আরো সংবাদ



premium cement
৮ মেগা প্রকল্পের ৭৫২ কোটি ডলার লোপাট! সাঈদীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশনা দিয়েছিল ভারতের ‘র’! একুশের চেতনাই জুলাই বিপ্লবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে রাজউকের নিম্নবিত্ত আবাসনের ১০১১ একর ভূমির বেশির ভাগই বেদখলে স্বৈরাচারের মাথা পালালেও কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে নিষ্ক্রীয় করার চেষ্টা চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি দখলদারিত্বে জামায়াত কোথাও জড়িত নয় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে বেশি ভুগবে ইউক্রেন ও ইসরাইল বাংলাদেশ কুড়িতম লিবিয়া উপকূলে ভেসে আসছে লাশ, ২০ বাংলাদেশী নিহত লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে সংস্কারের পরামর্শ টাস্কফোর্সের ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ

সকল