৩ ইসরাইলির বিনিময়ে মুক্ত ১৮৩ ফিলিস্তিনি
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৯
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গতকাল শনিবার চতুর্থ দফায় আরো তিন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর বিপরীতে ইসরাইলের কারাগারগুলোয় আটক থাকা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৮৩ জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে তাদের মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। খবর : আলজাজিরা, রয়টার্স ও বিবিসি।
এ দিকে গাজার অসুস্থ ও আহত ফিলিস্তিনি রোগীদের চিকিৎসার জন্য মিসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রায় ৯ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ইসরাইলি তিন বন্দী কিথ সিগেল, ওফার কালদেরন ও ইয়ার্ডেন বিবাস ইতিমধ্যেই তেল আবিবে পৌঁছেছেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হওয়ার আগে তাদেরকে প্রাথমিক মেডিক্যাল চেকআপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
এর আগে শনিবার প্রথমে ফ্রেঞ্চ-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিক ওফার কালদেরন ও ইসরাইলি ইয়ার্ডেন বিবাসকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে রেড ক্রসের হাতে তুলে দেয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর ভূখণ্ডটির উত্তর অংশের গাজা সিটি থেকে ছাড়া হয় আমেরিকান-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিক কিথ সিগেলকে। উভয় স্থানেই কয়েক শ’ হামাস যোদ্ধা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ভিড় সামলেছেন; বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় কালদেরন, বিবাস ও সিগেলকে জনতার উদ্দেশে হাতও নাড়তে দেখা গেছে।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ লুসিয়ানো জাকারা বলেছেন, ‘মাসের পর মাসব্যাপী ইসরাইলি বোমাবর্ষণের পরও যে হামাস গাজার পরিস্থিতি চাইলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে শনিবারের বন্দিমুক্তি তা প্রমাণ করেছে। যদিও ইসরাইল দাবি করছে যে হামাস ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু আমরা যেসব দৃশ্য দেখছি, তাতে হামাস যে এখনো আছে তার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।’
‘বন্দিবিনিময়ে ঠিক সময়মতোই হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ও পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু হবে বলে আমরা আশা করতেই পারি’- আলজাজিরাকে এমনটাই বলেছেন তিনি। ১৯ জানুয়ারি হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় শনিবার ইসরাইলও ১৮৩ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেয়। খবর অনুসারে এই ১৮৩ ফিলিস্তিনি বন্দীর মধ্যে ১৮ জন যাবজ্জীবন কারাভোগ করছিলেন। ৫৪ জনের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। আর বাকি ১১ জনকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর আটক করা হয়েছিল।
এ দিকে ফিলিস্তিনি মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের মধ্যে ১৫০ জনকে গাজায় এবং ৩২ জনকে অধিকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লায় নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিপ্রাপ্ত একজন বন্দীকে মিসরে নির্বাসিত করা হবে বলে জানিয়েছে হামাস। চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে চলতি সপ্তাহেই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। খুলে দেয়া রাফাহ ক্রসিং দিয়ে শুরুতে ৫০ অসুস্থ ফিলিস্তিনিকে অতিক্রমের অনুমতি দেয়া হবে, প্রত্যেক অসুস্থ ফিলিস্তিনির সাথে তার পরিবারের তিন সদস্যও সঙ্গী হওয়ার সুযোগ পাবে। ক্রসিংটি খুলে দেয়ায় গাজামুখী ত্রাণও এই পথ ব্যবহার করতে পারবে।
গুরুতর ঝুঁকিতে ২৫০০ শিশু : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এই মুহূর্তে মৃত্যুর গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে কমপক্ষে দুই হাজার ৫০০ জন শিশু। এই শিশুদের একটি বড় অংশই ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে জখম হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গাজায় এ মুহূর্তে যারা গুরুতর আহতাবস্থায় আছেন, তাদের মধ্যে শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা দুই হাজার ৫০০ জন। শিশু ও আহত অন্যদের চিকিৎসার জন্য যত শিগগির সম্ভব গাজার বাইরে পাঠাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানান জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি অর্থাৎ গাজায় যুদ্ধবিরতির আগের দিন এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছিল, গাজায় বর্তমানে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহতাবস্থায় আছেন এবং শিগগিরই যদি চিকিৎসার জন্য তাদের গাজার বাইরে না নেয়া হয়, তাহলে মারা পড়বেন তারা। সেই সাথে চিকিৎসার জন্য এই শিশুদের যত শিগগির সম্ভব গাজার বাইরে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব।
ট্রাম্পের সাথে বসতে চায় হামাস : গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতারা ইসরাইলকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে নতুন মার্কিন প্রশাসনের চাপ অব্যাহত রাখার সক্ষমতা সম্পর্কে আশাবাদী। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দল ক্ষমতায় আসার প্রথম কয়েক সপ্তাহে গাজা খালি ও অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলের বাইবেলীয় অধিকার সম্পর্কে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত দাবি করেছেন।
আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দোহাভিত্তিক হামাস নেতা বাসেম নাইম বলেছেন, হামাস ও ফিলিস্তিনি জনগণের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারবে এমন যে কারো সাথে তারা বসতে আগ্রহী। তাদের লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং ১৯৪৮ সালের নাকবা ও পরবর্তী যুদ্ধগুলোর সময় যারা বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বা বিতাড়িত হয়েছিলেন তাদের ফিরে আসার অধিকার। ১৯৪৮ সালে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের বেশির ভাগ অঞ্চল দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
নাইম বলেছেন, তাদের তালিকায় ট্রাম্প প্রশাসনও অন্তর্ভুক্ত। যদি ট্রাম্প প্রশাসনসহ যে কোনো পক্ষের সাথে দেখা করার কোনো সুযোগ থাকে, যাতে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি যে কিভাবে আমরা এমন লক্ষ্য অর্জন করতে পারি, আমি মনে করি দলের মধ্য থেকে কোনো ভেটো আসবে না এবং কোনো আপত্তিও থাকবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে এটি কারো পছন্দ বা অপছন্দের বিষয় নয়। এটি সব পক্ষের স্বার্থের বিষয়।
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মূসা আবু মারজুক একই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, হামাস আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ সময় ট্রাম্পকে একজন গুরুতর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রশংসাও করেছেন তিনি। এমনকি তাকে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শেষ করার কৃতিত্ব দিয়েছেন এই হামাস নেতা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা