রক্ত দিয়ে ছাত্ররা যা অর্জন করেছে তা রক্ষা করতেই তারা দল গঠন করবে : ড. ইউনূস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবে। এটা দরকার। এ লক্ষ্যে তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদের রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেসব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলব, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরকালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রধান বৈদেশিক বিষয়ক ভাষ্যকর গিডেয়েন র্যাচম্যানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে কথা বলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ‘র্যাচম্যান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্টে কথোপকথন লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। পডকাস্টে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য যে দু’টি সময়ের কথা বলেছেন, তা ভালো সময়। কারণ, তিনি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখছেন। তিনি এটা থেকে বিচ্যুত হতে চান না।
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একটি সম্ভাবনা হলো, ছাত্ররা নিজেরাই একটি দল গঠন করবে। শুরুতে যখন তারা উপদেষ্টা পরিষদ সভা গঠন করছে, তখন আমি তিনজন ছাত্রকে আমার উপদেষ্টা পরিষদে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, যদি তারা দেশের জন্য ‘জীবন’ দিতে পারে, তাহলে তারা উপদেষ্টা পরিষদে বসতে পারে এবং জীবন দেয়ার জন্য কী করছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ভালো কাজ করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন ছাত্ররা বলছে, কেন আপনি আমাদের নিজস্ব দল গঠন করেন না, আমরা একটা সুযোগ নেব। তারা বলেছে, আপনার কোনো সুযোগ নেই, এমনকি সংসদে আপনার একটি আসনও থাকবে না। কেন? কারণ, কেউ আপনাকে চেনে না। আমি তাদের বললাম, পুরো জাতি তাদের চেনে। তারা যা করতে চায়, সে বিষয়ে তাদের একটা সুযোগ দিই। সুতরাং, তারা এটা করবে।’
ছাত্ররা প্রস্তুত জানিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়তো তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটাও একটা বিপদ। কারণ, রাজনীতি শুরু করলে সব ধরনের রাজনীতিবিদ তাদের সাথে মিশে যাবে। তাই আমরা জানি না তারা আমাদের দেশে যে রাজনীতি, তা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে কি না। এ ধরনের সুযোগ আছে, যা আমাদের নিতে হবে। তবে ছাত্ররা প্রস্তুত। তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে।’
পডকাস্টে উপস্থাপক প্রশ্নে বলেন, ভারতীয়রা যেসব বিষয় বলছেন, তার একটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তারা বলছে, বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। অধ্যাপক ইউনূস হয়তো না-ও ঠিক থাকতে পারেন। কিন্তু সেখানে ইসলামিস্টরা রয়েছে, যারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
জবাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন লক্ষণ দেখি না। অন্তত আমি এখন কোনো লক্ষণ দেখি না। তরুণরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সাথে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাক্সক্ষা নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
বাসস জানায়, বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান।
ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎকালে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা বাংলাদেশে আমাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শুধু চালিয়েই যাব না, বরং আরো সম্প্রসারণ করব। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার দেশ এবং আমার সরকার এই সম্পর্ককে আরো জোরালো করতে আগ্রহী। তিনি আরো বলেন, আমরা জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে গর্বিত, কারণ জাপান আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে একটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার দেশ।
জাপান বাংলাদেশের একক বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী, যা বহু বছর ধরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে জাপান বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ রফতানি গন্তব্যের একটি। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫০টিরও বেশি জাপানি কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, বাংলাদেশ এখন জাপানসহ সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত এবং পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের দেশগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ খুঁজছে। তিনি বলেন ‘আমরা পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এখন ব্যবসা করার সময়।’
রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি জাপান সরকারের অর্থায়নপুষ্ট চলমান বড় বড় প্রকল্প বিশেষ করে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল এবং হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পে সহযোহিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গাদের জন্য জাপানের অব্যাহত সহায়তায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য এই সঙ্কটের একটি স্থায়ী সমাধানে জাপানের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে সম্পদ আহরণ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর : শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ‘বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণ’ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছেন। গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত ১০ সেপ্টেম্বর সরকার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদকে সভাপতি করে ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা