আমরা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন প্রত্যাশা করি
- হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
- ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনব্যাপী জনসম্পৃক্তি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে ৩১ দফা কার্যক্রম বাস্তবায়নে দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করি যা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে।
গতকাল সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের শাহেদ গার্ডেনে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু।
তিনি বলেন, আমাদের দল দুই বছর আগে ৩১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে। এই প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত করা। কারণ গত ১৫ বছর ধরে যারা ক্ষমতা দখল করে ছিল, সেই স্বৈরাচারীরা দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তারা পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের প্রতিটি সেক্টরের সবকিছু ভেঙে দিয়ে গেছে। তাই এখন দেশের মেরামত করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরো বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালেই দেশ সংস্কারের কথা বলেছেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। আমরা জানতাম যে, এই সরকারের পতন হবেই। তাই আগে থেকেই আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিই।
তিনি বলেন, আমরা একত্রে দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের চিন্তা সবসময় দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে দেশের যেকোনো ভালো বিএনপি করে এবং বিএনপি করে যাবে।
নির্বাচন নিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমরা এমন একটা নির্বাচন প্রত্যাশা করি, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে এবং তাদের প্রতিনিধি বেছে নেবেন। তাই নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খাল কাটা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছিলেন, কিন্তু এখন বাংলাদেশের অনেক নদ-নদী ভরাট হয়ে গেছে। তাই বিএনপি ক্ষমতায় এলে নদী রক্ষা ও জলসম্পদ সংরক্ষণে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করবে, যা ৩১ দফায়ও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপির নেতা বলেন, গত পনেরো বছরে দেশে দ্বিরাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে নারী-পুরুষ সবাই ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারের শিকার হয়েছে। বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুসরণ করে জনমানুষের জন্য রাজনীতি করেছে এবং ভবিষ্যতেও সেই ধারায় কাজ চালিয়ে যাবে। যার ফলে দেশে যোগ্য নারী নেতৃত্ব সামনে আসবে এবং তারা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিএনপির সহগণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের পরিচালনায় কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেয়া হালিমা আরলী, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাবেদ মাসুদ মিল্টন, সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান প্রমুখ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, সব সময় ভালো ভালো কথা বলবেন, সংসদ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করবেন, একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন, সংস্কার করবেন। কিন্তু দিন শেষে মানুষ প্রশ্ন তুলবে দ্রব্যমূল্য, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থান নিয়ে। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কি করতে পারবেন তা মানুষ জানতে চাই।
তারেক রহমান বলেন, দেশের সমাজ ও নির্বাচনী ব্যবস্থা যদি গড়ে তুলতে না পারি তাহলে কোনোভাবেই কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। সেটি জাতীয় কিংবা স্থানীয় পযায়েরর নির্বাচন হোক না কেন। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর যতই ঝড় তুফান হোক না কেন নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচনের বিকল্প নেই। এর সাথে কম্প্রমাইজ নেই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরো বলেন, ৩১ দফার মধ্য দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর যে শপথ বিএনপির রয়েছে সে শপথকে লক্ষ্য ভ্রষ্ট করার জন্য কেউ যদি এমন অন্যায় করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
কুষ্টিয়ায় বিএনপির প্রশিক্ষণ কর্মশালা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানায়, কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এই পরিবর্তন কোনো জাদু বা ম্যাজিক নয় যে, বলব আর হয়ে যাবো। এ লক্ষ্যে জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণ, জনগণ ও জনগণ। শুধু তা-ই নয়, এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সব জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব। তিনি বলেন, আমি প্রতিবারই বলছি সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপির ওয়াদা বাস্তবায়নে প্রতিরোধ এলে তা প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে নেতাকর্মীদের। দিন শেষে জনগনের চাহিদা পূরণে আমাদের বিশেষ নজর রাখতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও গত ১৬ বছর গুম খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হবে। তালিকা করে শহীদ ও আহতদের খোঁজখবর নেয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দলীয়ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারের সঞ্চালনায় জেলা শাখার আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, জাতীয় কমিটির সদস্য ফরিদা পারভীন, সাবেক সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাবউদ্দিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। অনুষ্ঠানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ দিকে এই কর্মশালা চলাকালীন জেলা বিএনপির কমিটি থেকে বঞ্চিত নেতাকর্মীরা শিল্পকলা একাডেমির বাইরে বিক্ষোভ মিছিল করে। সেখানে বঞ্চিত নেতাকর্মীরা অবিলম্বে জেলা কমিটি ভেঙে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু, কাজল মাজমাদার, বশিরুল আলম চাঁদ, কবির হোসেন প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা