৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৫
`

ওয়াশিংটনের আকাশে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত বিমান হেলিকপ্টার

৬৪ আরোহীর সবাই নিহতের আশঙ্কা
-

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির রিগ্যান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে স্থানীয় সময় বুধবার সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ও যাত্রীবাহী বিমানের মধ্যে মাঝ আকাশে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনার পর দুটি আকাশযানই পোটোম্যাক নদীতে পড়ে যায়। সেখান থেকে অন্তত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারীরা। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনবিসি-৪ কে এ তথ্য জানিয়েছে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ওই বিমানটিতে ৬০ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু ছিলেন। অপর দিকে সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন তিনজন।
বিবিসির সহযোগী সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, মধ্য-আকাশে বিমান ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের পর বিমানটি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তবে হেলিকপ্টারটি অক্ষত আছে। সংবাদমাধ্যমটি আরো জানায়, নদীর ওপরে ঘটা এই দুর্ঘটনার পর বিধ্বস্ত বিমানটি এখন পানির ৫-৮ ফুট গভীরে রয়েছে। এ ছাড়া ডুবুরি দল বিমানের দুটি ব্ল্যাক বক্সের মধ্যে একটি খুঁজে পেয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ডুবুরিদের দল বিধ্বস্ত বিমানের কেবিনের কিছু অংশে প্রবেশ করতে পেরেছে এবং তারা এখন পর্যন্ত যেসব জিনিস উদ্ধার করেছে তার মধ্যে লাগেজও রয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিএস নিউজ। সংবাদমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, সংঘর্ষে হেলিকপ্টারটি উল্টে গেছে। কিন্তু এটির বেশির ভাগই অক্ষত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপর সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, বিমানের আরোহীদের মধ্যে তরুণ ফিগার স্কেটাররা ছিলেন। যারা একটি জাতীয় অনুশীলন ক্যাম্প শেষে ফিরছিলেন। এই স্কেটারদের কেউ কেউ ২০৩০ সালের অলিম্পিকে অংশ নিতেন। রয় বেস্ট নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেছেন, তিনি বিকট শব্দ শুনতে পান। এর পর মধ্য আকাশে আগুনের বিশাল কুণ্ডলি দেখেন। এর সঙ্গে সঙ্গেই বিমান ও হেলিকপ্টার নদীতে পড়ে যায়। তিনি জানিয়েছেন, ওই বিমানবন্দরটি সবসময় ব্যস্ত থাকে। সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী এমনকি কোস্টগার্ডের হেলিকপ্টার ওঠানামা করে।
বিমান বিধ্বস্তের পর চারজনকে নদী থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে খবর হয়েছে। তবে তাদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ সামাজিকমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, ‘সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি আমরা। তবে কত জনকে হারিয়েছি তা এখনো জানতে পারিনি।’
ক্রুজ বিস্তারিত আর কিছু জানাননি। তার জানানো তথ্যগুলোর উৎসও প্রকাশ করেননি। বিমানটি কানসাস থেকে ওয়াশিংটনে এসেছিল। ঘটনার পর বড় ধরনের জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। রিগ্যান ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট।
কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ব্ল্যাক হক মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি কৌশলগত পরিবহন হেলিকপ্টার। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারটিতে থাকা সেনাদের অবস্থা জানা যায়নি। হেলিকপ্টারটিতে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন না। অ্যাকুওয়েদার এর বিশেষজ্ঞ আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য জীবিত ও জরুরি উদ্ধারকর্মীদের জন্য হাইপোথার্মিয়া একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ বুধবার উড়োজাহাজটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে তার কাছে পটোম্যাক নদীর পানির তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৬ থেকে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।
অ্যাকুওয়েদারের আবহাওয়া পূর্বাভাসের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ড্যান ডেপডউইন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘পানির এই হিমশীতল অবস্থায় মানবদেহের তাপমাত্রা দ্রুত নেমে যায়। এ পরিস্থিতিতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই মানুষ নির্জীবতায় আক্রান্ত অথবা অচেতন হয়ে পড়তে পারে।’
উদ্ধারকর্মীরা নদী থেকে ১৯টি লাশ উদ্ধার করেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিলেও কর্তৃপক্ষ হতাহতের কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। জমাট ঠাণ্ডা পানিতে আরোহীদের খোঁজে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধার ও অনুসন্ধানকারী দলগুলো। দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। নিকটস্থ রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে সব ফ্লাইটের উড্ডয়ন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
নামে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের হলেও, ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিল পিএসএ এয়ারলাইন্স। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের তথ্য অনুযায়ী, যাত্রীবাহী এ বোম্বার্ডিয়ার সিআরজে৭০০ বিমানটি ৬০ যাত্রী ও চার ক্রু নিয়ে কানসাসের উইচিটো থেকে রওনা হয়েছিল। বিমানটি যে হেলিকপ্টারের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় সেটি ছিল সিকোর্স্কি এইচ-৬০, এটি উড়েছিল ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভয়ার থেকে। হেলিকপ্টারটিতে তিন মার্কিন সেনা ছিল বলে জানিয়েছে সিবিএস। এফএএ বলেছে, তারা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেইফটি বোর্ডকে (এনটিএসবি) সাথে নিয়ে এ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
মার্কিন গণমাধ্যমের শুরুর দিকের খবরে যাত্রীবাহী বিমানটিকে নদীতে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় এবং হেলিকপ্টারটি উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। পুলিশের একাধিক নৌযানের সহায়তায় পুলিশ ও দমকল বাহিনী নদীর জমাট ঠাণ্ডা পানিতে জীবিতদের খোঁজে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে।
এই উদ্ধারতৎপরতা নদীর কাছাকাছি রোনাল্ড রিগান এয়ারপোর্ট থেকেও দেখা যাচ্ছে।
বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে যাওয়া জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় যাত্রীবাহী বিমানটির দুর্ঘটনায় পড়া দেখেন আরি শুলমান। এনবিসি ওয়াশিংটনকে তিনি বলেন, প্রথম দিকে বিমানটির গতিবিধি স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল, হঠাৎ বিমানটি ডানদিকে অনেকখানি কাত হয়ে যায়।
‘বিমানটির নিচে আগুনের স্ফুলিংয়ের স্রোত দেখা যাচ্ছিল, এর পেটটা আলোকিত হয়ে উঠেছিল,’ বলেন শুলমান।
এটা যে ‘খুবই খারাপ কিছু’ দেখেই বুঝে যান তিনি। অতীতে অনেকবারই বিমানের অবতরণ দেখেছেন তিনি।
‘অন্ধকারে কখনোই বিমানের নিচের দিকটা দৃশ্যমান হওয়া ঠিক নয়। ওই স্ফুলিঙ্গ দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল রোমান মোমবাতি, যা বিমানটির সামনে থেকে পেছনে ছড়িয়ে পড়ে। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জিমি মাজেও এয়ারপোর্টের কাছে একটি পার্কে বান্ধবীর সাথে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, তখনই মাঝ আকাশে বিমান ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ দেখেন। সে সময় আকাশে ‘সাদা আগুনের’ মতো কিছু দেখেছেন বলে মনে পড়ে তার। রোনাল্ড রিগান এয়ারপোর্টের আকাশে বিমানগুলো ‘অনিয়মিত প্যাটার্নে’ উড়ছিল বলেও মনে হয়েছে মাজেওর। ‘জরুরি পরিষেবাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যা দেখেছিলাম তা নিয়ে খুব বেশি ভাবিনি,’ বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়েছে এবং তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া জরুরি পরিষেবা ও এর সদস্যদের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ঘটনা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফিও। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে দেয়া এক ভিডিওতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রবার্ট ইসমকে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement