৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৫
`

ফেব্রুয়ারিতেই দল গঠনের ইঙ্গিত নাগরিক কমিটি ও ছাত্র আন্দোলনের

৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়া হবে : আখতার হোসাইন
-

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রজনতার নতুন দল গঠন হচ্ছে বলে নানা জায়গায় গুঞ্জন উঠেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হিসেবে পুনর্গঠনের জন্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শোনা যাচ্ছে সরকারের দুই উপদেষ্টাও এই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন।
সম্প্রতি ছাত্রদের প্রতিনিধি সরকারে রেখে তাদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে এলে তা মেনে নেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বের হয়ে যাবেন। তবে আমরা এখনো ওইভাবে পরিকল্পনা করিনি। বিভিন্ন মহলে একটা আলোচনা চলছিল যে ছাত্র উপদেষ্টারা সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করবে কি না, তখন কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণের ব্যাপারে। তবে আমাদের কারো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনো উপদেষ্টা নির্বাচন করতে চাইলে তিনি সরকারে থাকতে পারবেন না।
এ দিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির দাবিকে প্রতিষ্ঠা, সরকারের সব জায়গা থেকে আওয়ামী দোসরদের হটানোসহ নতুন রাজনৈতিক ধারা চালু করতে নতুন দল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।
তারা জানান, শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হবে। তবে কারা এই দলে নেতৃত্বস্থানীয় হবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিন্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ নিয়ে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। নতুন এই দলে জনমানুষের আকাক্সক্ষা, ফ্যাসিবাদবিরোধী মনোভাবসহ ২৪টি ইশতেহার নিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, ছাত্রজনতার অভুত্থানের পর জাতির ঘাড়ে চেপে থাকা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। দেশে নতুন জাগরণ তৈরি হয়েছে। যুগান্তকারী এই অভুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে এ দেশের ছাত্র-জনতা। তাদের ডাকেই সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। তাদের আশা-আকাক্সক্ষার পূর্ণপ্রতিফলন ঘটাতেই ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে যেভাবে দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট-খুনি হাসিনাকে নামিয়েছে, তেমনিভাবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ফ্যাসিস্টদের দোসর ও সহযোগীদের তাড়িয়ে মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠন করবে ছাত্রসমাজ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ জানিয়েছেন, জুলাই মাসের পরবর্তী আকাক্সক্ষা পূরণে এই নতুন দল আসন্ন নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। ভবিষ্যতে আসন সংখ্যা বাড়ালেও প্রত্যেকটি আসনেই প্রার্থী দেয়া হবে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানের সব আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করবে। নতুন রাজনৈতিক দলে তরুণদের প্রাধান্য থাকবে। তবে অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করা হবে এবং উপদেষ্টা হিসেবে সিনিয়র ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করবেন। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও দলে দলে যোগ দেবেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসাইন বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলে বেশ কিছু সংস্কার নিয়ে ভাবছি আমরা। একক নেতৃত্ব হয় গণতন্ত্রকে সুমহান করতে আমরা বহুনেতৃত্বের কথা ভাবছি। একজন বছরের পর বছর নেতা হওয়ার বিষয়টি পরিহার করা হবে। পরিবারতন্ত্রের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতিকে পরিহার করে সুষ্ঠু গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যপরিচালনা করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলে থাকবেন কি না এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টারা যদি রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করতে চাই তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
দল গোছানোর প্রস্তুতি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে জাতীয় নাগরিক কমিটির এ নেতা আরো বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল ঘোষণা করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। নতুন দল ঘোষণার আগে ২৪ দফার ইশতেহারের কথা জানিয়েছিলাম। সেটা তৈরিতে কাজ চলছে।
গঠনতন্ত্রের গতিপ্রকৃতি নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, গঠনতন্ত্রে আমরা এমন বিষয় রাখতে চাই, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যেন তৃণমূলের কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে যোগ্যতার বলে কাজ করে যেন যে কেউ কেন্দ্রে উঠে আসতে পারে- কারও ছেলে, কাকা-ভাতিজা পরিচয় দিয়ে নয়। দলের যিনি প্রধান, তিনি অন্য কোনো নির্বাহী পদে থাকবেন না। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে দলের প্রধানকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে তাকে অপসারণের ব্যবস্থাও থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement