জাতীয় ঐক্যের পথে বিএনপি
সরকারকে অকার্যকর করতে আ’লীগের সহিংস চাপ : এগিয়ে আসতে পারে নির্বাচন- বিশেষ সংবাদদাতা
- ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে অকার্যকর করতে পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগে বিএনপি গণতন্ত্রের পথে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে তার কৌশল পরিবর্তন করছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, দ্রুত নির্বাচনের দাবি আদায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্মসূচি ঘোষণার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বল হওয়ার সুযোগ নিতে আওয়ামী লীগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারা দেশে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করে সেনাসমর্থিত শাসন আনতে কাজ শুরু করেছে, যেটি বাস্তবায়িত হলে নির্বাচনই শুধু অনির্দিষ্টকাল পেছাবে না সে সাথে পতিত শাসকরা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারবে।
এ দিকে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপক সংস্কারের সুযোগ না থাকলে পরিকল্পিত সময়রেখার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুত থাকার জন্য বার্তা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনও তার প্রস্তুতিকে এগিয়ে আনতে চিন্তাভাবনা করছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে; নির্বাচনের আগে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনকারী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে প্রধান দল বিএনপিকে আন্দোলনে নিয়ে আসা গেলে ড. ইউনূসের সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যাবে। বিএনপি এ ধরনের কোনো ফাঁদে পা দেয়ার বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলে হাই কমান্ডের একটি সূত্র উল্লেখ করেছে।
আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন অনুসারে, সামরিক-বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসনে এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অনুগত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। আর আগস্ট বিপ্লবের পর বঞ্চিত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৮০ শতাংশই বিএনপি ঘরানার। উভয় কর্মকর্তারা যদি একযোগে সরকারকে অসহযোগিতা করে তাহলে অন্তর্বর্তী প্রশাসন ভেঙে পড়বে। আর সেক্ষেত্রে সেনা সরকার বা সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় চলে আসবে, যারা আওয়ামী লীগ ও প্রতিবেশী দেশের স্বার্থের বিষয়ে অনুকূল থাকবে।
পতিত সরকারের মূল্যায়ন অনুসারে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে হরতাল ধর্মঘট বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঠিক এ সময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচন করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেয়া ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে। দুই প্রধান দল যখন একযোগে চাপ সৃষ্টি করবে তখন সরকার আকস্মিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে।
আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন অনুসারে, ব্যাংকিং খাতের লুটেরা আওয়ামী অভিজাতদের বিষয়ে যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তা স্থবির হয়ে গেছে। এসব অভিজাতরা পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের নিয়োগ পদায়নকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে যে, গভর্নর ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য কেউ ব্যাংক লুটেরাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নয়। একজন শীর্ষ লুটেরার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এইচআরডির দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোতে সাবেক সরকারের আস্থাভাজনদের বসিয়েছে। ব্যাংক লুটেরাদের ধরার ব্যাপারে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালনকারীদের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে বের করে দিয়ে যাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে তারা সংস্কার ও লুট হওয়া ব্যাংক অর্থ আদায় কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লুটপাটের তথ্য ব্যাংক থেকে পাওয়া এখন কঠিন হবে।
পতিত সরকারি দলের মূল্যায়ন অনুসারে, তাদের কৌশলের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক চেষ্টার পরও পুলিশ প্রশাসনকে পুরোপুরি কার্যকর করতে পারছে না। অন্যান্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ওপরও এর প্রভাব পড়ার কারণে অতি সম্প্রতি বিভিন্ন পেশাজীবী দল ও ছাত্রদের আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এর পেছনে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ ও ইন্ধন রয়েছে, আর এটি সম্ভব হয়েছে নানা কৌশলে বিএনপির একটি অংশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন লাভের কারণে।
আওয়ামী লীগের নীতি প্রণেতারা মনে করছেন, পতিত স্বৈরাচারের চাপের পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার বেকায়দায় পড়বে। আর এ সময় কিছু বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্য শক্তিগুলোকে কোণঠাসা করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে।
পতিত সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করেই প্রথম দিকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করলেও পরে সেখান থেকে তিনি সরে আসেন। সজীব জয় পরদিন বলেন যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। পরে একটি জাতীয় পত্রিকা প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাতকার প্রচার করে জানায় যে, রাষ্ট্রপতির কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নেই। এটি তিনি দেখেনও নাই। শেখ হাসিনা নিজেও ফাঁস হওয়া বিভিন্ন অডিও-ভিডিও ক্লিপে নিজেকে এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী রমজান শেষে একটি ্বড় ধরনের আন্দোলন তৈরি করা হবে। এর আগে কিছু গুপ্তহত্যা ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ফেরানো হবে। এই আন্দোলনের বিষয়ে ছাত্রলীগের একজন সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা জানিয়েছেন, তার সাথে শেখ হাসিনার সম্প্রতি দুইবার ফোনে কথা হয়েছে। নেত্রী যারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি করেছে তাদের তালিকা তৈরি করতে বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন, তাদের ভবিষ্যতে আর বাইরে পাওয়া যাবে না।
এ দিকে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলার জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়াকে কেন্দ্র করে নানামুখী চক্রান্তে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে হতাশা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, আগামী ডিসেম্বর বা জুন যখনই নির্বাচন হোক না কেন বিএনপিরই ক্ষমতায় আসার কথা। রাষ্ট্রের স্বার্থে সংস্কার যদি এখনই বিএনপি না চায়, অথবা সংস্কারের জন্য বিলম্বের সুযোগ পতিত স্বৈরাচার নিতে চায় তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার করণীয় সম্পর্কে নতুন চিন্তা করতে বাধ্য হবে। আর যে অবস্থায় আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকে রেখে গিয়েছিল সেখান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেটি অসম্ভব হলে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে তারা বিদায় নেবে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ কৌশল পতিত স্বৈরাচারের মাথায় হাত দেয়ার কারণ হবে।
অন্য দিকে বিএনপি হাইকমান্ডের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ হরতালসহ নতুন কর্মসূচি দেয়ার পর জাতীয়তাবাদী দল জাতীয় ঐক্য তৈরির ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে। পতিত সরকারকে ক্ষমতায় ফেরার জন্য বিএনপির কোনো কর্মসূচিকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হবে না। এ কারণে গণতন্ত্রের পথে সরকারকে চালিত করার জন্য যে কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে তার ধরন পুনর্বিবেচনা করা হবে।
বিএনপির এই সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়ে সরকার অচল হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি জাতীয়তাবাদী দলের জন্য অনুকূল হবে না। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরা, অথবা সামরিক আইন জারি বা সেনাসমর্থিত আরেকটা সরকার প্রতিষ্ঠা কোনোটাই বিএনপির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন আরো পিছিয়ে যেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা