ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৬
দেশের সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে, এ বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ) মাসুদুল হক। গতকাল মঙ্গলবার শাহবাগে এক ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, আপনাদের ৬ দফা দাবিসহ অতিরিক্ত কিছু কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। আপনাদের সব দাবির সাথে আমরা নীতিগতভাবে একমত। পর্যায়ক্রমে স্বতন্ত্র সব ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ করা হবে। সরকারের এ আশ্বাসে শাহবাগে নিজেদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। তাদের কেউ কেউ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। এ ছাড়া চলতি বছরের জুনের মধ্যে এসব দাবি পূরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলে জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক চেয়ারম্যান কাজী মোখলেসুর রহমান সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর বলেন, ‘আমাদের যে মূল দাবি ছিল জাতীয়করণের, সেটির আশ্বাস আমরা পেয়েছি। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুপারিশের আলোকে প্রাইমারির ন্যায় জাতীয়করণ করা হবে। তবে, আমি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে যদি জাতীয়করণ বাস্তবায়ন না করা হয় তাহলে পয়লা জুলাই থেকে দেশের সব শিক্ষকদের নিয়ে আবার কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। তবে আমরা প্রত্যাশা রাখছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৪০ বছরের এই বৈষম্য দূর করে আগামী জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে।
অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের ওপর এই বিশ্বাস রেখে, আমাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করলাম এবং শিক্ষকরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবেন, এমন আহ্বান জানানো হয়েছে।’
পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে আসা সহকারী শিক্ষক খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ‘দীর্ঘ ৪০ বছর পর আমাদের বৈষম্যের অবসান ঘটছে। এ জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন আমরা নিশ্চিন্তে এলাকায় ফিরে পাঠদান করাতে পারব।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এর কিছুক্ষণ পর বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সচিবালয়ে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলরকারী শিক্ষকদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল। পরে পৌনে ৪টার দিকে তারা অবস্থান কর্মসূচির স্থানে ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ যেতেই অবস্থান কর্মসূচির স্থানে আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক। এ সময় তিনি শিক্ষকদের সব দাবি পূরণের ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের নির্দেশে শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং করেছি। মিটিংয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের ছয় দফা দাবিসহ আরও অতিরিক্ত বেশ কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রথম দফাতে জাতীয়করণের যে দাবির কথা হয়েছে। আমরা এই বিষয়টিতে নীতিগতভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছি যে, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সব ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ করা হবে।
জাতীয়করণ ছাড়া ইবতেদায়ি শিক্ষকদের অন্যান্য দাবি হলো- স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নিবন্ধন স্থগিতাদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার; রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদরাসাগুলো বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্তকরণ; স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা; পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী খোলা অনুমোদনের ব্যবস্থা নেয়া।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা