দাম বাড়াতে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সঙ্কট সিন্ডিকেটের
আবারো দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা- শাহ আলম নূর
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫০
সয়াবিন তেল নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। নতুন করে আবার বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর পরও আবারো অস্থির করা হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বাজার। এ দিকে বোতলজাত সয়াবিন তেল আবার সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাজার থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত করতে চায় অসাধু সয়াবিন তেল সিন্ডিকেট। এ জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন ব্যয়সহ প্রতি লিটারে মোট খরচ হয় যেখানে ১৩৯ টাকা, সেখানে বর্তমানে ভোক্তার কাছ থেকে নতুন মূল্য নেয়া হচ্ছে ১৭৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি লিটারে বেশি নেয়া হচ্ছে ৩৬ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, দাম বাড়াতে সয়াবিন তেলের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি করেছিল কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এ জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভোজ্যতেল আমদানি কমিয়েছে কয়েকটি কোম্পানি। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি এবং সরবরাহের ঘাটতি দেখিয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতি লিটার আট টাকা বাড়িয়েছে সরকার। দাম বাড়ানোর পর কয়েক দিন সরবরাহ ঠিক থাকলেও আবার বাজার অস্থির করে তোলা হয়েছে। বাজারে আবারো কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতারা এখন বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে ক্রয় করছে পণ্যটি।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। আর পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রিয় মূল্য ৮৫০-৮৫৫ টাকায়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত তেলের তুলনায় খোলা তেলের দাম বেশি। এ জন্য দোকানিরা বোতলজাত তেল বিক্রি না করে খোলা তেল বিক্রি করছেন। অনেক দোকানি বোতল থেকে তেল ঢেলে খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় দুই মাস আগে সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর পরও সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সঙ্কট এখনো চলছে। এসব ব্যবসায়ীরা বলছেন বাজারে এখনো সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। এমন পরিস্থিতিতে খোলা সয়বিন তেল প্রতি লিটার বাড়তি দামে ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন। গতকাল রাজধানীর মিরপুর, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া, কাওরান বাজার এবং সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ দোকানে সয়াবিন তেল না পেয়ে ক্রেতারা খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে চাহিদার তুলনায় কম তেল নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর মিরপুর-৬ কাঁচাবাজার থেকে বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন তেল কিনে ফিরছিলেন আব্দুল হালিম। তিনি এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৮০ টাকা কিনেছেন। বোতলজাত এক লিটার তেলের দাম ১৭৫ টাকা হলেও তিনি খোলা তেল কিনেছেন ১৮০ টাকায়। এজন্য তাকে দোকানির সাথে তর্ক করতে দেখা গেছে। কাওরান বাজারে তেল ব্যবসায়ী তানভির বলেন, গত কয়েক মাস ধরে ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করছে না। অর্ডার দিয়ে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেও তেল পাচ্ছেন না। এ জন্য তিনি ক্রেতার চাহিদা অনুসারে তেল বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানান। তিনি বলেন সাম্প্রতিক তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরও সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। রমজানকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা আরেক দফা তেলের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে বলে তিনি মনে করেন।
কাজিপাড়ায় আনিসুর রহমান নামে এক দোকানি বলেন, বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে সঙ্কটের নাম সয়াবিন তেলে। দাম বাড়ানোর পরও সয়াবিন তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় ছোট দোকানিদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। তিনি কোম্পানির প্রতিনিধিদের বিভিন্ন সময় অর্ডার দিলেও চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
সয়াবিন ও পামতেলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে দর বিবেচনায় নিয়ে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সয়াবিন ও পাম তেলের অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ দিকে ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ব্যতীত অন্য শুল্ক-করাদি প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত অক্টোবরে এনবিআর এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে। একই সাথে ১৬ ডিসেম্বর ক্যানোলা ও সানফ্লাওয়ার তেল আমদানিতে আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পাশাপাশি মূসক বা ভ্যাট হ্রাস করেছে এনবিআর।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে কোম্পানিগুলো একসাথে বাজারে সঙ্কট তৈরি করে। এ সুযোগে বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় দেখা গেছে দেশের ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি সয়াবিনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার পর সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তেলের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে তারা সরকারের কাছে দাম বাড়ানোর জন্য দেনদরবার শুরু করে। এবারো এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।এ দিকে ভোগ্যপণ্য সাপ্লাই চেইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাশিদুল হাসান বলেন, দাম বাড়ানোর জন্য কোনো কোম্পানি কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছে কি না তা তদন্ত করে দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য সংস্থাকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, কিছু কোম্পানির সাথে বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্চ মাসে পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেলের সম্ভাব্য সঙ্কট সম্পর্কে একটি শঙ্কা জাগিয়েছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাদেশ বছরে ২১ থেকে ২২ লাখ টন ভোজ্যতেল ব্যবহার হয়। এর ৯৫ শতাংশ আমদানি করা হয়। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলেন, পূর্ববর্তী সরকার একটি অলিখিত নিয়ম তৈরি করেছিল, যেখানে ভোজ্যতেল বাজারের আমদানি ও ব্যবসায় সীমিত সংখ্যক কোম্পানির আধিপত্য ছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা