২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`

ট্রাইব্যুনালে পরোয়ানার ৭০ শতাংশ আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি

-

জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বেশ কয়েকটি মামলায় এ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হওয়া প্রায় ৭০ শতাংশ আসামীকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেÑ ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সাবেক অনেক এমপি-মন্ত্রী এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং কিছু বেসামরিক ব্যক্তি। আর একমাত্র সেনাবাহিনীর সাবেক অফিসার হিসেবে আছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আদালতের এই পরোয়ানা বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল। আমরা চাইলেই কাউকে গ্রেফতার করে আনতে পারি না। আমরা আদালতের কাছ থেকে আদেশ নিতে পারি। সেই ক্ষেত্রে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব দুর্বলতা আছে সেগুলোর ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যিনি প্রধান আছেন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে তাদের কাছে জানতে চাইতে হবে। তারাই এ বিষয়ে যথাযথ বলতে পারবে। তবে বিদ্যমান বাস্তবতায় ভেঙে পড়া একটা প্রশাসনের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ। ক্রমান্বয়ে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশ বাহিনী। যাদের অধিকাংশ পালিয়ে গিয়েছিল। কারণ মোটা দাগে তারা অপরাধের সাথে বেশির ভাগ সম্পৃক্ত ছিল। সেই কারণে ভেঙে পড়া পুলিশ প্রশাসনকে একটা ব্যবহার উপযোগী পর্যায়ে নিয়ে আসার কারণে হয়তবা প্রথম দিকের অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টগুলো কার্যকর করা যায়নি। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ^াস করি তারা এখন একটা স্টেবল পজিশনে চলে এসেছে। নিশ্চয়ই তারা বাকি ওয়ারেন্টগুলো কার্যকর করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।

যেসব আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা
শেখ হাসিনা : পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১৭ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে তার আওতায় আবেদন করা হয়েছে এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত ২১ জানুয়ারি বলেন, আমরা প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি লিখেছি। চিঠি লেখার পর ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে তাহলে এটা বাংলাদেশের সাথে ভারতে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি সেটার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। সে ব্যাপারে আমরা বিশ্ব সমাজে কী পদক্ষেপ নেবোÑ সেটা আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমাদের যা যা করণীয় আছে তা করে যাচ্ছি।
গত ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরো দুই মাস সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ দেন। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা : গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে তদন্তের স্বার্থে এবং তাদের গ্রেফতার নিশ্চিত করার স্বার্থে সব আসামির নাম প্রকাশ করেনি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।
সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

এ ছাড়া জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ বাহিনীর সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, পুলিশ কর্মকর্তাসহ যারা গণহত্যার সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের নাম আমরা ধারাবাহিকভাবে সবার সামনে নিয়ে আসব। হয়তো এখানে একটু সময় লাগবে। কিন্তু কোনো দোষীকে বাদ দেয়া হবে না অথবা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে, অপরাধ করেছে এমন কোনো ব্যক্তিকে ছাড় দেয়া হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নওগাঁয় পুকুর থেকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী যুবকের লাশ উদ্ধার ঢাবি ও সাত কলেজের ঘটনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সিইসির বক্তব্যের সাথে একমত বিএনপি : দুদু আ’লীগ নেতা, পুলিশসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি গাছে আটকেপড়া বিড়ালকে উদ্ধার করল ফায়ার সার্ভিস বরিশালের টানা ৫ জয়, কঠিন সমীকরণে খুলনা সিরাজদিখানে নিখোঁজের ৭ দিনেও সন্ধান মেলেনি স্কুলছাত্র রোমানের ৪৪তম বিসিএসে ৯০০ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষার সূচি প্রকাশ পাকিস্তানের হার, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সাতে বাংলাদেশ ‘বাবা বেঁচে নেই, তাই আমাকে আর কেউ চিপস, চকলেট কেনার টাকা দেয় না’ শহীদ জসিমের ছেলে সিয়াম গাজাবাসীকে মিসর-জর্ডানে সরিয়ে নেয়ার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের

সকল