শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে চীনের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা ডা: শফিকের

গাজীপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার শফিপুর বাজারসংলগ্ন ওয়ামি কমপ্লেক্স এলাকায় চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা: শফিকুর রহমান চীনের সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চীনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। চীনা রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এ সহায়তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে চীনের আরো সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করি। চীনা ভাষা শেখানোর জন্য একটি আধুনিক একাডেমি গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, “দরিদ্র জনগণের জন্য সহায়তা প্রদান মহান কাজ। আল্লাহ যেন তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেন, যাতে তারা ভবিষ্যতে অন্যদের সহায়তা করতে পারে। গতকাল সকালে গাজীপুরের শফীপুরে ওয়ামি কমপ্লেক্সে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কুরআন তেলাওয়াত এবং বাংলাদেশ ও চীনের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে।

চীনা রাষ্ট্রদূতের আশাবাদ : বিশেষ অতিথি ইয়াও ওয়েন জামায়াতে ইসলামীর মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, “জামায়াতের সহযোগিতায় পরিচালিত এতিমখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গরিব-এতিম শিশুদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। ভবিষ্যতে চীন এসব শিক্ষার্থীদের চীনে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে আগ্রহী।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, “চীন বাংলাদেশের চিকিৎসা, শিক্ষা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে কাজ করতে চায়। আমরা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকব। ২০২৫ সালটি চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী। এ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। তিনি বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন, চীন এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বিখ্যাত পরিব্রাজক হিউয়েন সাংয়ের ভ্রমণের সময় থেকেই এ সম্পর্কের শেকড় স্থাপন হয়। ১৯৭৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশের মৈত্রী আরো সুদৃঢ় হয়েছে। বিগত কয়েক দশকে চীন বাংলাদেশে বিভিন্ন বড় প্রকল্পে সহযোগিতা করেছে। চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, কর্ণফুলী টানেল এবং আলোচিত পদ্মা সেতুর কারিগরি সহায়তা এর অন্যতম উদাহরণ। এ ছাড়া সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ খাত এবং কোভিড-১৯ প্রটোকলের আওতায় সিনোফার্মের টিকা সরবরাহের মতো উদ্যোগগুলো দুই দেশের সম্পর্কের দৃঢ়তার পরিচয় বহন করে।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং চীনা দূতাবাসের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার নিদর্শন। আশা করা যায়, চীনের এ মানবিক ও উন্নয়নমূলক সহায়তা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর ও নিবিড় হবে।
সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে উপহার বিতরণ : বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি এবং চীনা রাষ্ট্রদূত কালিয়াকৈরের সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শীতবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। চীনা রাষ্ট্রদূত এ সময় সবার হাতে শীত নিবারণে কম্বল তুলে দেন। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আটা, চাউল, ডাউলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর পেকেট হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে এবং মানবিক সহায়তার এমন উদাহরণ দু’দেশের বন্ধুত্বকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির আধ্যাপক জামাল উদ্দিন, গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমির ড. জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর নায়েবে আমির ও গাজীপুর-৫ ( কালিগঞ্জ) আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মো: খায়রুল হাসান, শিবিরের সাবেক সভাপতি ও গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আইউবীসহ জামায়াতের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।