ফ্যাসিবাদ ফিরে আসা ঠেকাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৮
দেশে ফ্যাসিবাদ যাতে আর ফিরে আসতে না পারে সে জন্য ইসলামী দলগুলোর নিজেদের মধ্যে ও জাতীয়তাবাদী শক্তি মিলে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের অল্প কিছুসংখ্যক নেতামন্ত্রী বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাদের প্রায় সব নেতাকর্মী দেশেই রয়ে গেছে। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারবে। এই ফ্যাসিবাদী শক্তি আগামীতে যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য জাতীয়তবাদী ও ইসলামী শক্তির ঐক্য প্রয়োজন; অন্যথায় বিপ্লব কোনো কাজে আসবে না। আবারো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে। তা ছাড়া দেশে ইসলামী শক্তির জাগরণের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ জন্য ছোটখাটো মতপার্থক্য ভুলে ইসলামী দলগুলোর নিজেদের মধ্যেও ঐক্য গড়ে তোলার এখনই সময়।
রাজধানীর বিজয়নগর কালভার্ট রোডে খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে নয়া দিগন্তকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :
নয়া দিগন্ত : বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আপনারা কতটুকু সন্তুষ্ট?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : আমরা সংস্কার চাই। নির্বাচন, পুলিশ, সংবিধানের সংস্কার চাই। তবে সংস্কার নিয়ে ইতোমধ্যে যেসব বিষয় সামনে এসেছে, সেখানে আমাদের কিছু বিষয়ে আপত্তি আছে। যেমন সংবিধান সংস্কারে বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, এটি নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। তা ছাড়া আমরা সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আনার দাবি জানাচ্ছি। খসড়ায় এটি নেই। এটি সংবিধানে থাকতে হবে। যখন দলগুলোকে এ বিষয়ে মতামত নিতে ডাকা হবে তখন আমরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরব।
নয়া দিগন্ত : জুলাই অভ্যুত্থান ডিক্লারেশন নিয়ে আপনাদের অভিমত কী?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ডিক্লারেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারে সে জন্য এটি প্রয়োজন। তবে ডিক্লারেশনের খসড়ায় যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তাতে সব ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়নি। ৪৭ সালের কোনো ইতিহাস সেখানে নেই। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ’২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়সহ সব বিষয়ে এক লাইন-দুই লাইন করে থাকা প্রয়োজন।
নয়া দিগন্ত : সংস্কার আগে না নির্বাচন আগেÑ আপনারা কোনটার পক্ষে?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : আগে-পরে নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না। কিছু বিষয়ে জরুরি সংস্কার করা প্রয়োজন। নির্বাচনও করতে হবে। সংস্কারের জন্য কোনো সময়সীমা দেয়া হয়নি। কত দিন লাগবে জানি না। এ জন্য আমরা কিছু সংস্কার করে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চাই। আর সংস্কার হতে হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। কারণ পরবর্তী সরকারকে এখনকার সংস্কারের বৈধতা দিতে হবে। এ জন্য ঐকমত্য থাকলে সেটি বাস্তবায়ন সহজ হবে, না হলে বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে।
নয়া দিগন্ত : পিআর পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে আপনাদের অভিমত কী?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : পদ্ধতি ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি আগেই জানিয়ে দিয়েছে তারা এ পদ্ধতি চাচ্ছে না। সংস্কার কমিশনও এটি বলেনি। তারা শুধু উচ্চপর্যায়ে এটির প্রয়োগ করার কথা বলেছে। এ জন্য আমরাও আপাতত এটি চাচ্ছি না। তা ছাড়া আওয়ামী লীগকে যদি নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা না যায়, তাহলে এ পদ্ধতির সফলতা পাওয়া যাবে না। কিন্তু আপাতত এটিও দেখছি না। তারা সরাসরি ভোট করতে না পারলেও অন্য কোনো দলের ওপর ভর করতে পারে। কারণ তাদের অন্তত ২০ শতাংশ ভোট আছে। এ জন্য পিআর পদ্ধতি হলে আপাতত ভালো কিছু হবে না। আবারো ফ্যাসিবাদী শক্তি ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে।
নয়া দিগন্ত : ইসলামী দলগুলোর কোনো ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে আপনারা আছেন কি না?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : আওয়ামী লীগ এখনো পুরোপুরি পরাভূত হয়েছে কি না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। এ জন্য আগামী নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুরোপুরি পরাভূত করতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দিতে হবে। একবার যদি তাদের পরাভূত করা যায় তা হলে তারা আর সহজে ফিরে আসতে পারবে না। এ জন্য ইসলামী দলগুলো ও বিএনপি নিয়ে নির্বাচনী সমঝোতা হওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের প্রক্রিয়াও আছে। তবে সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। এটি না হলে ফ্যাসিবাদী শক্তি আবারো ফিরে আসার সুযোগ পাবে। তবে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে জেনেছি একসাথে নির্বাচন করার বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। কিছু বিষয়ে পরস্পরবিরোধী কথা হচ্ছে। এটাও একসময় ঠিক হয়ে যাবে।
নয়া দিগন্ত : জামায়াতে ইসলামীর আমির ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সম্প্রতি একসাথে বসেছেন। তাদের জোট হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : এটিকে আমরা পজিটিভভাবে দেখছি। আমার বলেছি ইসলামী দলগুলোর একটি ঐক্য দরকার। এর সাথে বিএনপি মিলে জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। অন্তত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ সব ইসলামী দলকে এক থাকতে হবে। না হলে ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার ফিরে আসতে পারে। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের মধ্যে লড়াই চালাতে থাকি, তা হলে তারা এখনই চলে আসতে পারে। এ জন্য পারস্পরিক বিষোদগার অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।
নয়া দিগন্ত : বিএনপির সাথে আপনাদের নির্বাচনী জোট নিয়ে কোনো আলোচনা চলছে কি না?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : আমরা বিভিন্ন দলের সাথে আন্তঃদলীয় সংলাপ করছি। গত ২২ জানুয়ারি আমরা বিএনপির সাথে বৈঠক করেছি। সেখানে আমরা সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছি। নির্বাচন এ বছরের মধ্যে হওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। আমাদের এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন এলে তখন জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ছাড়া আমরা বিএনপিকে বলেছি তারা যেন সব ইসলামী দলের সাথে বৈঠকে করে এবং তাদের বিষয়ে যেসব অপপ্রচার আছে সে বিষয়ে পরিষ্কার করে। তাহলে ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির একটি ঐক্য গড়ে উঠলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসা রুখে দেয়া সম্ভব হবে।
নয়া দিগন্ত : আগামীতে দেশে ফ্যাসিবাদের বিলুপ্তি ও সুশাসন আসার সম্ভাবনা কতটা আছে বলে মনে করেন?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : যেসব সংস্কার হচ্ছে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হচ্ছে। এক ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপিও দাবি জানিয়েছে। সংস্কারে সেটি রাখা হয়েছে। আমরাও এর সাথে একমত আছি। এ ছাড়া নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করা হচ্ছে। এতে মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার ফিরে আসবে। এসব বিষয় সংস্কার হলে দেশে আবারো ফ্যাসিবাদী ফিরে আসা ঠেকানো সম্ভব হবে। একই সাথে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
নয়া দিগন্ত : আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ কতটুকু আছে বলে মনে করেন?
ড. আহমদ আবদুল কাদের : আওয়ামী লীগ যে গুম-খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে এর বিচার হতে হবে। তারা সরকার হিসেবে যেমন অপরাধ করেছে, একইভাবে দল হিসেবেও অপরাধ করেছে। আদালতে তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। আদালতের রায়ে যদি তাদের দল হিসেবে বিচার হয়, তখন তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা