বড় বাজেটের পথে অন্তর্বর্তী সরকার
আকার হতে পারে ৮,৪৮০০০ কোটি টাকা- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৯
ব্যবসা-বাণিজ্যে’ শ্লথ গতি এবং রাজস্ব আদায়ে চরম হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির মধ্যেও আগামী অর্থবছরের জন্য একটি বড় বাজেট তৈরির দিকে এগোচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। অন্যান্যবারের মতো এবারো পুরো বাজেটটি প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘আমলাতান্ত্রিক’ গতানুগতিক ধারায়। এখানে আমলাদের দেখানো ছকে একটি ‘ঢাউস’ সাইজের বাজেটের অঙ্ক নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর ফলে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জন্য বাজেটে প্রাথমিক আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী মে মাসের শেষে বাজেট চূড়ান্ত করার সময় প্রাক্কলিত এই বাজেটে আকার আরো ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আট লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেটের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তাতে ‘খাদ্য বাজেট’ ও ‘ নেট লেন্ডিং’ ফিগার যোগ করা হয়নি। এটি যোগ করা হবে আগামী মে মাসে। তখন এই বাজেটে আকার গিয়ে ঠেকবে আট লাখ ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার ঘরে।
এ দিকে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা এর মধ্যে মোট রাজস্বপ্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা রয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য আদায় লক্ষ্য রয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, অর্থবছরের পুরো ১২ মাসে এই পরিমাণ টাকা এনবিআরকে রাজস্ব হিসেবে আদায় করতে হবে। এই হিসেবে অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে আদায় হওয়ার কথা দুই লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছেÑ এক লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৮২ হাজার কোটি টাকা।
এত বিশাল পরিমাণ ঘাটতি মাথায় নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য আরো একটি উচ্চাভিলাষী রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগামী অর্থবছরে জন্য শুধু এনবিআরকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে পাঁচ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করার প্রাথমিক টার্গেট। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের এই টার্গেট কোনোভাবেই পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ আগামী অর্থবছরের শেষ ভাগে একটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। আর আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য যে ব্যাপক করজাল সম্প্রসারণ করা দরকার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে তা-ও করা সম্ভব হবে না। এর উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ১২ হাজার কোটি টাকার অতিরক্ত রাজস্ব আদায়ের জন্য গেল এই মাসেই সরকার একশটিরও বেশি পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে এনবিআর পক্ষ থেকে অনেক পণ্যের ওপর বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এসব কারণে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পাঁচ লাখ কোটি টাকার নিচে রাখাই সমীচীন হবে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে দ্ইু লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে যা রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী সংশোধন করে তা কমিয়ে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
এ দিকে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গত সপ্তাহে ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে বলেছেন, আগামী অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি কত হতে পারে সেটি অনুমান করে আমি বাজেটের আকার সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় পাঁচ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা এবং বাজেট ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদারভাবে হিসাব করলে আগামী অর্থবছরের বাজেট ৮ লাখ কোটি টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা