২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`
শিক্ষক সমাবেশে তারেক রহমান

তরুণরা দল করলে বিএনপি স্বাগত জানাবে, তবে-

-

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গতকাল শনিবার বিকেলে এক শিক্ষক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান কার্যকরী হাতিয়ার। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ না থাকলে নির্বাচনের সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। এরকম বক্তব্যের জবাবে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, মির্জা ফখরুলের ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবি আরেকটা ‘এক-এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত’ বহন করে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব তারেক রহমানের কাছ থেকে এরকম বক্তব্য এলো।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি বরাবরের মতোই আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছাড়ানো কিংবা বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ না পায় সে বিষয়ে অবশ্যই আপনাদের সজাগ থাকতে হবে। জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতা উৎস। জনগণ সাথে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, আমি শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, পুঁথিগত বিধির ওপরে গণতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করে না। গণতন্ত্র বিকশিত এবং শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের কার্যক্রম, আচরণে ও চর্চায়। আমাদের মধ্যে অবশ্যই ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ থাকবে; এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমাদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। আমাদের সবার উদ্দেশ্য একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে মাফিয়াপ্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর মাফিয়া মুক্ত বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিংবা বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অযাচিত ভুল বোঝাবুঝির কারণে যাতে একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখিন না হয়, এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

নির্বাচন ও সংস্কার দুইটাই জরুরি : তারেক রহমান বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন বিএনপি দুইটারই পক্ষে। দুইটিই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কূট তর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখি তাহলে কিন্তু সেটি ভিন্ন। দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। এক দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অপর দিকে জনগণের চাপিয়ে দেয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানোই অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।

তিনি বলেন, কিভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়, কিভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়, কিভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টদের আমলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেয়া যায়, কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সক্রিয় করা সম্ভব, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, জনগণ বিশ্বাস করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো সর্বজন সমর্থিত একটি নির্দলীয় অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া সহজ। তাহলে এখন প্রশ্নÑ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এতদিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ? জনগণের ওপরে কেন উল্টো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এখনো কেনো বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগনের মনে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক; তাহলে কি সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। কারণ হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।
রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এই শিক্ষক সমাবেশ হয়। সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক এই সমাবেশে অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় সংগঠনটির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

তরুণরা নতুন দল করলে বিএনপি স্বাগত জানাবে : তারেক রহমান বলেন, দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এসব তরুণই গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত এসব তরুণের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে একই সাথে উল্লেখ করতে চাই, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন সেটি জনগণকে হতাশ করবে কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসা মূলক হয় সেটিও জনগণের কাছে হবে অনাকাক্সিক্ষত।
তিনি বলেন, অবশ্যই আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তারণরা নতুন পথ রচনা করবে। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়, পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে ভুল বোঝাবুঝি সময়ের অপচয় : তারেক রহমান বলেন, এই সরকারের সাথে কোনো ভুল   বোঝাবুঝি অযথা কূট তর্ক আমি সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে একই সাথে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মানতে পারে, মেনে নিতে পারে তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা আরো অনেক বেশি থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি। বিএনপি মনে করে, জনগণকে নিয়ে রাজনীতি নয় বরং জনগণের জন্যই রাজনীতি। এই কারণে বিএনপি যেকোনো মূল্যে দেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করতে চায়।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন।
শিক্ষকদের প্রাপ্য অধিকার বাস্তবায়নে বিএনপির ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে বলেও তারেক রহমান অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ছাত্র সংঘর্ষ : ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের সোমবারের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত ছাত্র সংঘর্ষ : ঢাবির সোমবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ৩ সুপারিশে আপত্তি সিইসির র‌্যাবের সাবেক ডিজি হারুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দাম বাড়াতে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সঙ্কট সিন্ডিকেটের সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহর ইন্তেকাল ট্রাইব্যুনালে পরোয়ানার ৭০ শতাংশ আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে চীনের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা ডা: শফিকের ফ্যাসিবাদ ফিরে আসা ঠেকাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পুতুলের দায়িত্ব পালন দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর : দুদক বাংলাদেশের সাথে উভয়ের লাভের সম্পর্ক চায় ভারত : প্রণয় ভার্মা

সকল