সাক্ষাৎকারে সংবিধান সংস্কার কমিশন সদস্য ব্যারিস্টার ইমরান
- রাশিদুল ইসলাম
- ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৫
সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টিতে কাজ করবে জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ। সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন এ জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি করছে। একই সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের উপর কার্যকর সংসদীয় তদারকি গড়ে তোলা গেলে সরকারের অন্যান্য বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হলে অর্থ বিল ব্যতীত সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন। যার ফলে নির্বাহী বিভাগের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। নয়া দিগন্তের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক। তার কাছে জানতে চাই,
প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ কমাতে নিশ্চয়ই প্রেসিডেন্টের
এখতিয়ার বৃদ্ধি করতে হবে। সেটি কিভাবে করা হবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : কমিশন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে। এই এনসিসি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ দেবে। এ ছাড়া, এনসিসি নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সব সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেবে। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এইসব নিয়োগ দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ, সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর ফলে, সাংবিধানিক পদধারীরা প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে কাজ করেন। আমরা মনে করি, এনসিসির মাধ্যমে সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দিলে মেধাবী এবং নির্দলীয় প্রার্থীরা গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে।
প্রশ্ন : নির্বাহী বিভাগের সাথে সরকারের অন্যান্য বিভাগের ভারসাম্য আনার কথা বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে। এটি ঠিক কিভাবে নিশ্চিত করা হবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : আমরা নির্বাহী বিভাগের উপর কার্যকর সংসদীয় তদারকির সুপারিশ করেছি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসমূহ বিরোধী দলের সদস্যদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে মর্মে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া, কমপক্ষে একজন ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল হতে নির্বাচিত হবে। ফলে নির্বাহী বিভাগের কর্মকাণ্ডের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে অর্থ বিল ব্যতীত সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন। যদি ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন, তা হলে এটি নির্বাহী বিভাগের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ হিসেবে কাজ করবে। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে, প্রস্তাব করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে।
প্রশ্ন : অনেকে মনে করছেন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে হলে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা দরকার। কমিশন এটি না করে কেন ইলেকটরাল কলেজ কিছুটা বাড়িয়ে পরোক্ষ নির্বাচনেই থেকে গেল?
ব্যারিস্টার ইমরান : সংসদীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী সাধারণত নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। এরূপ শাসন ব্যবস্থায় একজন প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি স্বাধীন ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। এই দ্বৈত ক্ষমতার কেন্দ্র সরকারের কাজে বাধা এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। প্রস্তাব করা হয়েছে যে, ইলেকটরাল কলেজের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির ভোটে নির্বাচিত হবেন। ফলে, রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে অনেকটা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
প্রশ্ন : সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ পরিবর্তনে যে সুপারিশ কমিশন করেছে তা সরকারে অস্থিরতাকে উসকে দেবে না?
ব্যারিস্টার ইমরান : আমার মনে হয় না। ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। যদি কোনো সংসদ সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে না পারেন, তা হলে আইনসভার পক্ষে নির্বাহী বিভাগকে জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব নয়। ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনার বর্তমানে কোনো সুযোগ নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তাই অনাস্থা ভোট আনার সুযোগ রেখে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা উচিত।
প্রশ্ন : এর আগে দেখা যেত প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় সংসদে সব কিছু হচ্ছে। আপনাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে সংসদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতার বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : যেমনটি আমি আগেই বলেছি, এনসিসি প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। একই সাথে, আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের সীমা প্রস্তাব করেছি। তা ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এই বিধানগুলো একজন ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া রোধ করবে। এ ছাড়া, পরিবর্তিত আকারে, ৭০ অনুচ্ছেদ ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে। এটি সংসদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
প্রশ্ন : কমিশন যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সুপারিশ করেছে তা রাষ্ট্র শাসনে কোন ধরনের গুণগত পরিবর্তন আনবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : উচ্চকক্ষ সংসদের নি¤œকক্ষ কর্তৃক পাস হওয়া আইনসভার বিল অধিকতর যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করবে। অতীতে, আমরা দেখেছি যে, পর্যাপ্ত বিতর্ক ছাড়াই সংসদে তাড়াহুড়ো করে আইন পাস করা হয়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা একটি অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়নমূলক স্তর সংযোজনের মাধ্যমে সংসদে একক কক্ষের নিরঙ্কুশ আধিপত্য এবং একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস করবে। উচ্চকক্ষ নি¤œকক্ষ কর্তৃক প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ নিরীক্ষা করবে। মৌলিক মানবাধিকারের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ কী না, তাও উচ্চকক্ষ নিশ্চিত করবে। ফলে, আশা করা যায় যে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রাষ্ট্র শাসনে গুণগত পরিবর্তন আনবে। একই সাথে, উচ্চকক্ষে বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ প্রান্তিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যার ফলে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া আরো সমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
প্রশ্ন : অনেক দলই সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চেয়েছিল। আপনারা এ দাবিটিকে কেন বিবেচনায় আনলেন না?
ব্যারিস্টার ইমরান : নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (চৎড়ঢ়ড়ৎঃরড়হধষ জবঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ - চজ) পদ্ধতি আমাদের মতো দেশের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। পিআর ব্যবস্থার ফলে ঝুলন্ত সংসদ, জোট সরকার এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে যেমনটি হয়েছে নেপালে। ঘন ঘন সাংবিধানিক সঙ্কট মোকাবেলা করা আমাদের মতো ভঙ্গুর গণতন্ত্রের পক্ষে কঠিন। এ কারণেই প্রস্তাব করা হয়েছে যে, নি¤œকক্ষ সরাসরি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে, অর্থাৎ ফার্স্ট পাস্ট দ্য-পোস্ট (ঋচঞচ) পদ্ধতির মাধ্যমে গঠিত হবে।
প্রশ্ন : উচ্চকক্ষের কাজ কী হবে? উচ্চকক্ষ কি নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যে কোনো কার্যকর অবদান রাখতে পারবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : সুপারিশ করা হয়েছে যে, সংবিধানের সংশোধনী সংক্রান্ত প্রস্তাব উভয় কক্ষের দুই- তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হতে হবে। এর ফলে, আশা করা যায় যে রাজনৈতিক বিবেচনায় সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রবণতা হ্রাস পাবে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের তদারকির ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। জাতীয় স্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত যেকোনো চুক্তি সংসদের উভয় কক্ষের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। আমাদের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রপতির অভিশংসন কার্যক্রমেও উচ্চকক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য পালনে কাজ করবে।
প্রশ্ন : বিচার বিভাগে সংস্কারের ব্যাপারে আপনারা গুরুত্ব দিয়েছেন। সবার জন্য ন্যায়বিচার কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : আপনারা জানেন যে, সংবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’ দ্বারা একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। এই জরিপটি দেশের ৬৪টি জেলার ৪৫ হাজারের বেশি পরিবারের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল। আমরা যে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করেছি তার মধ্যে একটি ছিল: ‘আপনি কি আপনার বিভাগে একটি হাইকোর্ট দেখতে চান?’ এই প্রশ্নের উত্তরে ৮১% ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া, অংশীদারদের সাথে পরামর্শের সময়, বিপুলসংখ্যক মানুষ সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে মত দিয়েছেন। জনগণের আকাক্সক্ষার কথা বিবেচনা করে, আমরা উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করেছি। আশা করা যায় যে, এর ফলে গ্রামীণ, প্রত্যন্ত বা সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে বসবাসরত দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগণের জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন : উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। বেঞ্চে যোগ্য ও সৎ বিচারকদের নিয়োগ কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : বিচারক হিসেবে নিয়োগে প্রার্থীদের মনোনীত করার জন্য আমরা একটি স্বাধীন নিয়োগ কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছি। এটি বিচারপতি নিয়োগে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। তা ছাড়া, নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হলে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি বেঞ্চে যোগ দিতে ইচ্ছুক হবেন।
প্রশ্ন : রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন নীতির সাথে গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদ সংযোজনের সুপারিশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে কোন বিবেচনা আপনাদের সামনে কাজ করেছে?
ব্যারিস্টার ইমরান : বর্তমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯ জাতিকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে। তবে, আমরা মনে করি যে, নির্দিষ্ট একটি জাতিগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদ অন্যান্য গোষ্ঠীর মূল্যবোধকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে না, যা প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রবিরোধী। একই সাথে, সমাজতন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসনের বিপরীত। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যক্তিগত অধিকার এবং স্বাধীনতার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়, যা সমাজতান্ত্রিক শাসনের সাথে বিরোধপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাও বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভ্রান্তি এবং বিভাজন সৃষ্টি করে, যা সত্যিকার অর্থে বহুত্ববাদী সমাজের ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সব বিবেচনায় আমরা রাষ্ট্রের মূল নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছি।
প্রশ্ন : বহুত্ববাদ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে?
ব্যারিস্টার ইমরান : বহুত্ববাদ বলতে মূলত বাংলাদেশে বহু জাতি, ধর্ম, ভাষা, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির কথা বোঝান হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সংস্কৃতির মানুষ যে এক সাথে শান্তিতে সহাবস্থান করছে বহুত্ববাদ বলতে এটাই বোঝান হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।
প্রশ্ন : সংবিধান পুনঃলিখন করা হবে, নাকি সংশোধন করা হবেÑ এ নিয়ে কমিশনের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেখছি না। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসহ এত ব্যাপক পরিবর্তন কি কেবল সংশোধনের মাধ্যমে সম্ভব হবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : আমাদের টার্মস অব রেফারেন্স অনুসারে, সংবিধান সংশোধন না পুনর্লিখন, এই বিষয়ে সুপারিশের কোনো সুযোগ ছিল না। তবে এটা বলা যায় যে, আমাদের অনেক সংস্কার প্রস্তাবই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আবার অনেক সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে যা রাজনৈতিক দল কর্তৃক গৃহীত হলে, তা কেবল সংবিধান পুনঃ প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
প্রশ্ন : সরকার ও সব পক্ষ যদি আপনাদের সুপারিশের বিষয়ে একমত হয়, তবে এর বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি কী হবে? আপনারা আশা করেন সবাই কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করবে?
ব্যারিস্টার ইমরান : সবাই আমাদের সব প্রস্তাব গ্রহণ করবেÑ এটা বাস্তব নয়। তবে, আমাদের যেসব সুপারিশ রাজনৈতিক দল গ্রহণ করবে, তা সব দল কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি চার্টারে লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এই চার্টারে উল্লিখিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা