ইসরাইলি ৪ নারী সেনাকে মুক্তি দিলো হামাস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৪
- ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি
- সিনওয়ার হত্যার ২ ‘মাস্টারমাইন্ড’ নিহত
- ১৫ হাজার নতুন যোদ্ধা হামাসে
- ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা ক্রমেই কমছে
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় বন্দী চার নারী সেনাকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস। গতকাল শনিবার ইসরাইল ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। এদিন স্থানীয় সময় ১১টার দিকে গাজার প্যালেস্টাইন স্কয়ারে ইসরাইলি চার নারী বন্দীকে নিয়ে আসা হয়। রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তরের আগে সেখানে এক মঞ্চেও তোলা হয় তাদের। এ সময় তাদের বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। মঞ্চে তাদের পাশে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র যোদ্ধাদেরও দেখা গেছে।
পরে হামাস ও রেড ক্রসের মধ্যে কাগজপত্র স্বাক্ষর হওয়ার পর রেড ক্রসের গাড়ি ওই বন্দীদের নিয়ে ইসরাইলের পথে রওনা হয়। এ বন্দী মুক্তির আগে হামাস শনিবার ছাড়া পেতে যাওয়া ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করে। এদের মধ্যে ৬৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি আছে ১৫ বছর বয়সীও। শনিবার হামাস যে চার নারী সেনাকে ছেড়ে দিয়েছে, তারা হলেন- কারিনা আরিয়েভ, ডেনিয়েলা গিলবোয়া, নামা লেভি ও লিলি অ্যালবাগ।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এ মাসে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে প্রথম তিন নারী বন্দীকে ছাড়ে হামাস। দ্বিতীয় দফায় চার বন্দীকে ছেড়ে দেয়ার সময় শনিবার সকাল থেকেই প্যালেস্টাইন স্কয়ারে উচ্ছ্বসিত হাজারো মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। একই সময়ে তেলআবিবেও বন্দীদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা ভিড় করেন। পরে এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সেনারা জানায়, তার মুক্তিপ্রাপ্ত চার সেনাকে হাতে পেয়েছে।
‘ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রবেশের পর তাদেরকে প্রাথমিক মেডিক্যাল পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে,’ বলেছেন তারা। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ছয় সপ্তাহব্যাপী প্রথম ধাপে হামাস মোট ৩৩ ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেবে। এর মধ্যে গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার করা হবে এবং গাজায় মানবিক সাহায্য ঢুকবে। প্রথম ধাপ চলাকালেই দ্বিতীয় পর্যায়ের শর্ত নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।
সিনওয়ার হত্যাকাণ্ড : হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড সম্প্র্রতি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেখানে ইসরাইলি বাহিনীর দুই সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা নিহতের মুহূর্ত দেখানো হয়েছে। তারা হলেন ইসরাইলি সেনা কমান্ডার মেজর ডেভির সিয়ন রাভাহ এবং তার ডেপুটি এইতান ইসরাইল শিকনাজি। নিহত এ দুই ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তাই হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হত্যা পরিকল্পনার জন্য দায়ী ছিলেন বলেও দাবি করেছে হামাস।
‘ডেথ অ্যাম্বুশ সিরিজ’ নামের এ ভিডিওটি মূলত এ ধরনের আরো ফুটেজের প্রথম অংশ। হামাস জানিয়েছে, এটি গত ৬ জানুয়ারির ঘটনার দৃশ্য। যেখানে গাজার উত্তরের বেইত হানুন শহরে স্থাপিত একটি বোমা বিস্ফোরণে ইসরাইলি সেনা কমান্ডার মেজর ডেভির সিয়ন রাভাহ এবং তার ডেপুটি এইতান ইসরাইল শিকনাজি নিহত হন। ইসরাইলি বাহিনী বেইত হানুন এলাকায় অভিযান চালানোর সময়েই হামলাটি চালানো হয়। হামাস জানিয়েছে, এ হামলায় আরো কয়েকজন ইসরাইলি সৈন্য আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া বেইত হানুনের আল-জাইতুন এলাকায় আরো একটি অপারেশনে ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভিডিওটির ঘটনা মূলত গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির আগে ঘটেছিল। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া এ যুদ্ধবিরতির আগে দখলদার ইসরাইলের ১৫ মাসব্যাপী সামরিক অভিযানে ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশ নারী-শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
হামাসে ১৫ হাজার যোদ্ধা : ইসরাইলের সাথে দীর্ঘ ১৫ মাস লড়াইয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বহু যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে শনিবার ইসরেয়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে হামাস প্রায় ২০ হাজার যোদ্ধা হারিয়েছে, এ কারণে নতুন করে ১৫ হাজার যোদ্ধাকে হামাস সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নতুন সদস্যদের তালিকাভুক্ত করার কথা হামাস স্বীকার করেছে, তবে নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই তরুণ এবং অপ্রশিক্ষিত। ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হামাস ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার সদস্য নিয়োগ দিয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ১৪ জানুয়ারি তার সর্বশেষ ইসরাইল সফরে বলেছেন, প্রতিবারই ইসরাইল তার সামরিক অভিযান শেষ করে এবং পিছু হঠে, হামাস যোদ্ধারা পুনরায় সংগঠিত হয় এবং পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে।
ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমছে : ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ষষ্ঠ দিনে, অর্থাৎ গত শুক্রবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার ট্রাকের প্রবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। জাতিসঙ্ঘের মানবিক কার্যক্রমবিষয়ক সমন্বয় দফতর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, গতকাল গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার ৩৩৯টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। গাজায় গত রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ওসিএইচএ-’র তথ্যানুযায়ী, ওই দিন গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে ৬৩০টি ট্রাক প্রবেশ করে। পর দিন সোমবার ট্রাকের সংখ্যা একলাফে বেড়ে ৯১৫টিতে উন্নীত হয়।
এর পর থেকে গাজায় মানবিক সহায়তাবাহী ট্রাকের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার গাজায় মানবিক সহায়তার ৮৯৭টি ট্রাক প্রবেশ করেছিল। বুধবার এ সংখ্যা আরো কমে দাঁড়ায় ৮০৮টিতে। বৃহস্পতিবার গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে ৬৫৩টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে প্রতিদিন মানবিক সহায়তার ৬০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের সুযোগ দেয়ার কথা বলা আছে। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে এ চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা