সীমান্তে বিএসএফের বিশেষ সতর্কতা জারি পরিস্থিতি থমথমে
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৮
বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অপস অ্যালার্ট’ জারি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে উচ্চতর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১০ দিনের এই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ২৩ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই অ্যালার্ট জারি করা হয়। এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে বিএসএফের পক্ষ থেকে। এতে ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমান্তে মহড়া চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, ভারতের মালদহ জেলার কালিয়াচক থানার সবদলপুর বিএসএফ কাম্পের সদস্যরা সীমান্ত ঘেঁষে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করলে বিজিবির পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন থমথমে থাকলেও উভয় বাহিনীই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের ভয়ের কোনো কারণ নেই।
ভারতের বার্তা সংস্থাটি একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বলছে, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের মোট চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। বিজ্ঞপ্তি জারি করে সীমান্তের দায়িত্বে¡ থাকা সবগুলো বর্ডার আউট পোস্টগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২৩ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএসএফকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। এই নির্দেশনাকে বিএসএফের পরিভাষায় নাম দেয়া হয়েছে ‘অপস অ্যালার্ট’।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্তে বারবার মহড়া চালাতে হবে। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিñিদ্র করতে হবে। প্রয়োজনে রাতে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। বিএসএফের আশঙ্কা, প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সীমান্তে পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য ওপার থেকে উসকানি আসতে পারে।
বাংলাদেশে ঢুকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার চেষ্টায় বিএসএফ
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্তের নোম্যানেস ল্যান্ড থেকে ৫০ গজ ভেতরে অনুপ্রবেশ করে একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে বিএসএফ, যা আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই পথ দিয়ে কাঁচাবাজারের আড়ালে নিয়মিত মাদক, অস্ত্র এবং চোরাই মোবাইলসহ বিভিন্ন পণ্য বিএসএফের সাথে আঁতাত করে বাংলাদেশে পাচার করে আসছিল ওই দেশের চোরাচালানিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিজিবির সদস্যরা সীমান্তে নিরাপত্তা পাহারা কড়াকড়ি করার কারণে ভারতীয়দের চোরাচালান প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিএসএফের সদস্যরা সেই রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে যায়। এতে বাধা দেয় বিজিবি সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে বাংলাদেশের ভূমি রক্ষায় স্থানীয়রাও প্রতিবাদ জানায় এবং বিএসএফের অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে বিজিবির সাথে তারাও সীমান্তে অবস্থান নেয়। একইভাবে ভারতীয় নাগরিকদেরও বিএসএফের সাথে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে বিজিবি-বিএসএফের ও উভয় পাশের গ্রামবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের চৌকা সীমান্তের ঘটনার পর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এমন চিত্র উঠে আসে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি বিএসএফের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় দফায় অবৈধ রাস্তার পাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করলে বিজিবি সেখানে বাধা দেয়। এতে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ে।
গত ১৮ জানুয়ারি দুপুরে ভারতীয় নাগরিকরা জিরো লাইন পার হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে আমগাছ কাটা শুরু করলে বাধা দেয় বাংলাদেশের বাসিন্দারা। ভারতীয়দের সাথে বাগি¦তণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের গ্রামবাসী। এ সময় ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ সদস্যরা ককটেল, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও পাথর নিক্ষেপ করে। পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে তারা। এতে পাথর ও হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন কয়েকজন। পরে ওইদিনই বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সোনা মসজিদ সীমান্ত এলাকায় বিজিবি-বিএসএফ সীমানাসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব এখন চরম আকার ধারণ করেছে। গত ৬ জানুয়ারি সকালে শিবগঞ্জ থানাধীন বিনোদপুর ইউনিয়ন অন্তর্গত বিশ্বনাথপুর মাঠে ৫৯ ব্যাটালিয়নের চৌকা ক্যাম্পসংলগ্ন ১৭৭ মেইন পিলারের ১ নম্বর ও ২ নম্বর পিলার বরাবর বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। মূলত বিশ্বনাথপুর মাঠে আগে থেকেই আনুমানিক সোয়া ১ কিলোমিটার বাংলাদেশ এবং ভারত সীমান্তের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া ছিল না।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ম অনুসারে মেইন পিলার থেকে ১৫০ গজ নিজেদের ভূমির মধ্যে কাঁটাতার নির্মাণ করার কথা। কিন্তু বিএসএফ বাংলাদেশের বর্ডার ঘিরে সীমানা পিলার থেকে কোথাও ১০০ গজ কোথাও ৫০ গজ এমনকি কোথাও ২০ গজ দূরত্বে কাঁটাতারের বেড়া এবং বেড়ার পাশে রাস্তা তৈরি করেছে। ঝামেলার একপর্যায়ে কাঁটাতার নির্মাণ থেকে বিএসএফ বিরত থাকে। পরবর্তীতে দুই দিন বিজিবি এবং বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে পতাকা বৈঠক হলেও এর কোনো সমাধান আসেনি। ওইখানে আগের মতোই কাঁটাতারবিহীন আছে।
গোয়েন্দা তথ্যে উঠে আসে, এই বর্ডার দিয়ে মূলত ফেনসিডিল, হেরোইন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাচালানের কাজে ব্যবহৃত হয়। উত্তেজনা শুরু থেকে ৪ দিন পর গত ১১ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের বাগিচাপাড়ায় ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় এক বাংলাদেশীকে গুলি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
এ বিষয়ে জানতে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: ইয়াসির জাহান হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, দুই দেশের নাগরিকদের উত্তেজনা সৃষ্টির পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় রয়েছে। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা