পশ্চিমতীরে হামলা বাড়ানোর হুমকি ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৭
- জেনিনে গাজার মতো গণহত্যার আশঙ্কা
- বেসামরিকদের হত্যার তীব্র নিন্দা কাতারের
- হামাসের নিয়ন্ত্রণে গাজা
ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালানোর পর সেখানকার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও অধিকৃত পশ্চিমতীরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। বিশেষ করে পশ্চিমতীরের জেনিনে ক’দিন ধরে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। এই হামলা অব্যাহত থাকবে এবং আরো বাড়ানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের মতে ইসরাইলের যুদ্ধ এখন অধিকৃত পশ্চিমতীরে স্থানান্তরিত হয়েছে। এ বছর পশ্চিম ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলায় ৩৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
আলজাজিরা জানায়, জাতিসঙ্ঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) অধিকৃত পশ্চিমতীরে মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরাইলি সামরিক অভিযান এবং বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিমতীরে এই বছর এখন পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী অনুপ্রবেশের সময় ছয় শিশুসহ ৩৪ জনকে হত্যা করেছে। জেনিনে ইসরাইলের চলমান অভিযানের সময় ১২ জন নিহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমনে গত সপ্তাহেই দুই শিশুসহ কমপক্ষে ১৭ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। অধিকৃত ভূখণ্ডে নতুন ইসরাইলি চেকপয়েন্ট ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত করে দিচ্ছে। বর্তমানে পশ্চিমতীরের ৬৮ শতাংশ চিকিৎসালয় সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের বেশি কাজ করে না।
জেনিনে গাজার মতো গণহত্যার আশঙ্কা : জেনিনের ডেপুটি-গভর্নর মনসুর আল-সাদী সতর্ক করে বলেছেন, শরণার্থীশিবিরে ইসরাইলের চলমান হামলায় ‘উত্তর গাজায় সংঘটিত গণহত্যার পুনরাবৃত্তি হতে পারেÑ এটি পরিকল্পিত গণবিধ্বংসী অভিযান’। গতকাল শুক্রবার এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা। আনাদোলু সংবাদ সংস্থাকে দেয়া এক বিবৃতিতে আল-সাদী জানান, ইসরাইলি বাহিনী জেনিন শহর ও শরণার্থী শিবিরের চারটি প্রধান প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে, ফলে সেখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার সব পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, শিবিরের কেন্দ্রস্থলে ধারাবাহিক ভবন ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের ঘটনা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ইসরাইলি বাহিনী একটি বৃহৎ পরিসরের সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
এ দিকে আলজাজিরার সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা জানিয়েছেন, গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরাইলি সরকার এখন দখলকৃত পশ্চিমতীরের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, গাজা ইসরাইলের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও, পশ্চিমতীর তাদের জন্য কৌশলগতভাবে লাভজনক অঞ্চল।
জেনিনে হামলায় কাতারের তীব্র নিন্দা : দখলকৃত পশ্চিমতীরের জেনিনে ইসরাইলের বর্বর হামলা ও বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে কাতার । দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে। গতকাল শুক্রবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন ইসরাইলের এসব অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় এবং আন্তর্জাতিক আইন ও সংশ্লিষ্ট চুক্তির আলোকে বেসামরিক নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘কাতার পুনরায় নিশ্চিত করছে যে, ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার ও তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি আমাদের অটল সমর্থন রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৯৬৭ সালের সীমারেখার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার।’ কাতার দীর্ঘ দিন ধরেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে জোরালো অবস্থান ধরে রেখেছে এবং নিরীহ মানুষের ওপর ইসরাইলের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সরব থেকেছে।
আজ ৪ ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস : হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় শনিবার (আজ) চারজন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়াকে বৃহস্পতিবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাস নেতা জাহের জাবারিন বলেন, আগামীকাল (শুক্রবার) আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে চারজন বন্দীর নাম সরবরাহ করব, যাদের শনিবার মুক্তি দেওয়া হবে।” জাবারিন বর্তমানে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রয়েছেন এবং তিনি পশ্চিমতীরে হামাসের কার্যক্রমের অন্যতম দায়িত্বশীল ব্যক্তি।
হামাসের নিয়ন্ত্রণে গাজা : গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দিন সকালে, হামাসের সামরিক শাখার মুখোশধারী সদস্যরা সাদা পিকআপে হামাসের পতাকা ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে শহরের রাস্তায় টহল দেয়। ১৫ মাসের ইসরাইলি হামলায় হামাস দুর্বল হলেও টিকে আছে এবং গাজার সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছেÑএটাই ছিল তাদের স্পষ্ট বার্তা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে হামাস গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। ইসরাইলের বোমা হামলায় হাজারো সদস্য নিহত এবং সুড়ঙ্গ ও অস্ত্র কারখানা ধ্বংস হলেও সংগঠনটি টিকে আছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধের সময় হামাস নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিকল্প প্রশাসনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারেননি, যা শূন্যস্থান তৈরি করেছে। তবে গাজার অনেক বাসিন্দার কাছে যোদ্ধাদের দ্রুত উদ্ভব ছিল বিস্ময়কর। নামের শেষাংশ প্রকাশ করতে না চাওয়া মোহাম্মদ (২৪) বলেন, যুদ্ধ চলাকালে এরা কোথায় ছিল, আমরা জানতাম না। যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন, হামাস গাজার সরায়া স্কয়ারে তিনজন ইসরাইলিকে মুক্তি দিয়ে ইসরাইলে ফেরত পাঠায়। এ সময় তাদের পরিচ্ছন্ন ইউনিফর্ম ও ভালো অবস্থায় দেখা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মখাইমার আবুসাদা বলেছেন, এটি এমন একটি অঞ্চল, যা ইসরাইল প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা হামাসের সামরিক শাখা ধ্বংসের লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। বন্দীদের মুক্তির পর যুদ্ধ আবার শুরু করার পরিকল্পনার কথাও জানান তারা।
হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী বর্তমানে গাজার রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাণ সরবরাহ সুরক্ষায় কাজ করছে। গাজা সিটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেনারেল মাহমুদ আবু ওয়াতফা বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের বাহিনীর। তবে অনেক সমস্যাও রয়ে গেছে। পুলিশ সদস্যরা কাগজপত্র ব্যবহার করছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত কার্যালয়ে হেঁটে কাজ করতে যাচ্ছেন। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলগুলো অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। হামাসের ক্ষমতা অনেক কমলেও তারা পুরো গাজায় নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস হয়তো ভবিষ্যতের প্রশাসনে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে চায়। ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার জানিয়েছেন, হামাসের শাসন ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা