২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬
`

সালমান রহমানের আড়াই শ’ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক

-


বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আদালতের নির্দেশে এসব সম্পদ ক্রোক করা হয় বলে গতকাল সিআইডির সিনিয়র পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো: বাছির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ট্রেড বেইসড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে এরই মধ্যে ৮৩ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন দেশে পাচারের আভিযোগ রয়েছে সালমান এফ রহমান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের করেছে সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। মামলাগুলো বর্তমানে চলমান রয়েছে।
মো: বাছির উদ্দিন জানান, সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড ও গ্যাস কাঞ্চনপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২১টি এলসি/সেলস কন্ট্রাক্টের (বিক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে দুবাইয়ের শারজায় অবস্থিত সালমান এফ রহমানের ছেলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জজ গ্লোবাল ট্রেডিং (এফজেটই) মাধ্যমে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় দুই কোটি ৬০ লাখ ৯৮৪ ইউএস ডলারের পণ্যমূল্য রফতানি করে অর্থ পাচার করেছে। বর্তমানে বিষয়টি মানিলন্ডারিং মামলা তদন্তাধীন আছে। তিনি বলেন, এজাহারনামীয় আসামিদের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের অসদুদ্দেশ্যে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পণ্য রফতানি করে।

এজাহারনামীয় আসামিদের নামে ঢাকা জেলার দোহার থানা এলাকায় থাকা প্রায় দুই হাজার শতাংশ জমি এবং ভূমির ওপর নির্মিত স্থাপনা, গুলশানের দ্য ইনভয় নামে দু’টি বিল্ডিং সালমান এফ রহমানের ছেলে এবং এজাহারনামীয় আসামি আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে ছয় হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ নং রাস্তার, ৩১নং প্লটের ওপর নির্মিত ট্রিপ্লেটস নামীয় ৬ তলা বিল্ডিংয়ের ২য় ও ৩য় তলার বি ১/২ (ডুপ্লেক্স)), দুই হাজার ৭১৩.১০ বর্গফুটের আরো একটি ফ্ল্যাট বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৫০ কোটি।
লে-অফ প্রত্যাহার করে কারখানা চালুর দাবি জানিয়েছে বেক্সিমকোর কর্মীরা : লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সব কারখানা খুলে দেয়ার পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে বেক্সিমকোর কর্মীরা। একই সাথে কারখানা ও ব্যবসা চলমান রেখে সব বকেয়া বেতন এবং কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

গতকাল ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ)-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো ফ্যাশন লিমিটেডের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান সৈয়াদ মো: এনাম উল্লাহ, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বক্তব্য রাখেন।
সৈয়দ মো: এনাম উল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্টস ও এর সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই গুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার চাকরিজীবীকে লে-অফের আওতায় আনা হয়েছে। জনতা ব্যাংকের ঋণ সুবিধায় চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বেতন প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বিশাল জনবলকে আর কোনো প্রকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। এমন পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাবে।

তিনি বলেন, বেক্সিমকোর মত আন্তর্জাতিক মানের বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেলে ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাবে। একই সাথে তাদের সংশ্লিষ্ট প্রায় দুই লাখ পরিবারের সদস্য এবং এই শিল্প ও কর্মজীবীদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কর্মসংস্থানের আরো প্রায় আট লাখ মানুষ সমস্যায় পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কম্পোজিট গ্রুপ হওয়ায় শুধুমাত্র তুলা ও ক্যামিক্যাল ক্রয় ছাড়া গার্মেন্টস তৈরির অন্য কিছুই বাইরে থেকে ক্রয় বা আমদানি করতে হয় না। এই সব সুবিধা বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্তমান থাকায় বায়াররা কার্যাদেশ দিতে সব সময় তৎপর থাকে। করোনা মহামারী ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধকালীন বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যেও বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশন গার্মেন্টস রফতানিতে শীর্ষস্থানে ছিল। এ রকম একটি লাভজনক, সুবিধাজনক এবং শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিলে ১০ লাখ মানুষের সংসারে বিপর্যয় নেমে আসবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বেক্সিমকোর ব্যাংকিং ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা প্রদান করার দাবি জানিয়ে বেক্সিমকোর এই কর্মী বলেন, ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা ছাড়া দেশী-বিদেশী কোনো ব্যবসা বাণিজ্যই করা যায় না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ছয় মাস ধরে বেক্সিকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সব ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে। একদিকে কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই অন্যদিকে দায় দেনার পরিমান প্রচার করে তা পরিশোধের জন্য সব প্রকার চাপ অব্যাহত আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, আয় থেকে দায় শোধ-ব্যাংকিং ও ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র যদি হয়ে থাকে তাহলে বেক্সিমকো গ্রুপের সব দায়-দেনা নিয়মিতভাবে পরিশোধের জন্য এর বন্ধ রাখা প্রতিটি কারখানা খুলে দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার কোনো বিকল্প নেই।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বেক্সিমকোর যে পরিমাণ ঋণ রয়েছে তা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আদায় করা সম্ভব না। এই ঋণ আদায় করতে হলে প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু প্রস্তাবও দিয়েছি। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব ছিল ২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া। এই ঋণ চাওয়া হয় চার মাসের জন্য। এই ঋণ দেয়া হলে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করে বকেয়া ঋণও পরিশোধ করতে পারবো। সেক্ষেত্রে বছরে ৪০০ কোটি টাকার মতো বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব, এ ধরনের একটি প্লানও আমরা দিয়েছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এনাম উল্লাহ বলেন, আমরা মালিক বলতে এখন আমাদের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরী কে বুঝি। এমডি আছেন, রিসিভার আছেন। তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। এমডি মহদয় বেক্সিমকোর চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছেন। তাদের সাথে আলোচনা করেই সব ধরনের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement