বাংলাদেশে বিশ্বের দুই বৃহত্তম বন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহী
- বাসস
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৫
বিশ্বের দুই বৃহত্তম বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, ডিপি ওয়ার্ল্ড ও এপি মোলার-মেয়ার্স্ক বাংলাদেশের শিপিং শিল্পে বড় আকারের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে নতুন বন্দর নির্মাণে সহায়তা করতে এবং বাংলাদেশকে একটি প্রধান বৈশ্বিক রফতানি কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আজ দাভোসে ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম এবং এ পি মোলার-মেয়ার্স্ক চেয়ারম্যান রবার্ট মোলার উগলা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠককালে এই প্রস্তাব দেন।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের সিইও জানিয়েছেন, তারা চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট কমাতে এবং নির্গমন হ্রাস করে বন্দরটির দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে চায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক এই লজিস্টিক কোম্পানির সিইও বলেন, নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ বাংলাদেশে আরো বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এবং দূষণ হ্রাস করতে সহায়ক হবে।
সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম উল্লেখ করেন যে, ডিপি ওয়ার্ল্ড যেখানে বিনিয়োগ করেছে, সেখানেই উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেছে। তিনি আরো জানান, ২০২২ সালে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তখনকার সরকার তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম জানান, তারা চট্টগ্রাম বন্দরে একটি ডিজিটাল অনলাইন কাস্টমস পদ্ধতি চালু করতে চান, যা দুর্নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে। তিনি আরো জানান, তারা বাংলাদেশের ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোগুলোতেও বিনিয়োগ করতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা সুলতান আহমেদ বিন সুলাইমকে বলেন, বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে আরো বন্দর নির্মাণ করতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটি করতেই হবে কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে জড়িত। আমরা এটিকে অঞ্চলটির সবচেয়ে বড় বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়াতে চায়, কারণ বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের জন্য একটি আঞ্চলিক রফতানি হাব হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে, কারণ সময় হচ্ছে একটি খরচ।’
ডেনমার্ক-ভিত্তিক এ পি মোলার-মেয়ার্স্ক চেয়ারম্যান রবার্ট মোলার উগলা বলেন, তারা চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে এবং তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এটিকে একটি পরিবেশবান্ধব বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
রবার্ট মোলার উগলা জানান, তারা মরক্কো এবং ওমানেও একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। তাদের বিনিয়োগে ওমানের সালালাহ বন্দর বিশ্বের অন্যতম সেরা বন্দরে পরিণত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং এ পি মোলার-মেয়ার্স্কের কর্মকর্তাদের ঢাকায় আসার এবং বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বাংলাদেশী বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে বেশ কিছু বন্দর নির্মাণ করতে হবে যাতে আমরা আঞ্চলিক ব্যবসার একটি কেন্দ্র হিসেবে আমাদের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি।’
ফেসবুকে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে লড়াই জোরদারের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগের সাথে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনী ব্যক্তি এবং রাজনীতিবিদরা তার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের লাখ লাখ ডলারের সম্পদ লুট করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন এই ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ ব্যবহার করে বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে।’
নিক ক্লেগ ইংল্যান্ডের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী। তিনি উল্লেখ করেন-বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফেসবুক বাংলাদেশে তথ্য যাচাই এবং ডিজিটাল যাচাই কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের তথ্য যাচাই বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ এবং ইউরোপের দেশগুলোতে প্রযোজ্য হবে না।
ক্লেগ আরো বলেন, ফেসবুক বাংলাদেশে তাদের ডিজিটাল যাচাই কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এবং ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করার পথ খুঁজবে, যা উইকিপিডিয়ার কার্যক্রমের অনুরূপ। প্রায় ত্রিশ মিনিটের এই বৈঠকে নিক ক্লেগ মেটার পক্ষ থেকে সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদানের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে।’
মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, সম্প্রতি চালু হওয়া কোম্পানির ওপেন সোর্সড লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এআই, এলআইএএমএ স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন এটি বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হবে। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে এলআইএএমএ’র ওপর এক মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের তরুণদের জন্য নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে।’
জুলাই-আগস্ট নৃশংসতা সম্পর্কে জাতিসঙ্ঘ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারিতে
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত নৃশংসতা সম্পর্কে জাতিসঙ্ঘের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তা প্রকাশ করা হবে।
সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে বুধবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎকালে জাতিসঙ্ঘের হাইকমিশনার এই মন্তব্য করেন। তুর্ক বলেন, জেনেভায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার অধিকার অফিস থেকে প্রকাশিত হওয়ার আগে প্রতিবেদনটি বাংলাদেশকেও প্রদান করা হবে। অধ্যাপক ইউনূস ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধ তদন্তের জন্য জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ছয়টি প্রধান স্বাধীন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও প্রায় একই সময়ে প্রকাশিত হবে।
এই প্রতিবেদনগুলো একে অপরের পরিপূরক হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমার থেকে নতুন করে হাজার হাজার শরণার্থীর আগমনের ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরো খারাপ হওয়া রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সহায়তার জন্য জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান। পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে তুর্ক বলেন, তিনি এই বিষয়ে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করেছেন। নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমন বন্ধ করার লক্ষ্যে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কটের ওপর আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি সবচেয়ে খারাপ মানবিক সঙ্কটগুলোর একটির দিকে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করবে। তুর্ক একমত হয়েছেন যে এই ধরনের সম্মেলন সঙ্কটের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হারানো মনোযোগ ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি-বিষয়ক সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত তারেক আরিফুল ইসলামও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
দাভোসে প্রধান উপদেষ্টার ব্যস্ত সময়
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের তৃতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এর আগে বুধবার তিনি ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও বিশেষ কার্যাদির ফেডারেল মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সাবেক মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যদের সাথে বৈঠক করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা