তদন্তে রাতের ভোটকারীরা
মাঠে দুদকের টিম- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৮, আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৯
অভিযুক্ত হাসিনা, কাদের, এইচ টি ইমাম, সাবেক আইজিপি, র্যাব ডিজি, ডিএমপি কমিশনার, তারেক সিদ্দিকী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচন কর্মকর্তাসহ দেশের জেলা-উপজেলার কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ কর্মকর্তা
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দিনের ভোট রাতে করা, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচনের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ব্যাপারে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
দুদক জানায়, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করা, ব্যালট জালিয়াতি ছাড়াও কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি কাস্টিং দেখানো, ব্যাপক আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতানো ইত্যাদি নানা অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং দুদকেও কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে।
অভিযোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মহানগর, জেলা, বিভাগীয়, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন পুলিশের আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, রথ্যাবের প্রধান ড. বেনজির আহমেদ, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, তৎকালীন জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, জেলা প্রশাসক, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, থানার অফিসার ইনচার্জ, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তার যোগসাজশের কথা উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের একজন উপপরিচালকের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন ভিডিও, দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদ, নির্বাচনের ফলাফল শিট পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিতর্কিত ওই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৫৭টি আসন।
ওই সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পায় মাত্র সাতটি আসন। বেশির ভাগ ভোট নির্বাচনের আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিরোধীদের ভাষায় সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নিশি রাতের নির্বাচন’।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কে এম নুরুল হুদার কমিশনের অধীনে। সেই কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার বিদায় বেলায় সাংবাদিকদের এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অস্তিত্ব ছিল না। যদিও সিইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সিটিং এমপিদের বিষয়ে তাদের নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা সম্ভব ছিল বলে মনে করি না। ওই নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে? এভাবে না-অবাধ, না-সুষ্ঠু, না-নিরপেক্ষ, না-আইনানুগ, না-গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। সে অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই পরের তিনটি নির্বাচন হয়। প্রশ্নবিদ্ধ ওই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করে। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান একটানা প্রায় দেড় যুগ ধরে দেশ শাসন করা ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই শাসন আমলে তার বিরুদ্ধে রয়েছে গুম-খুন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন, নির্যাতনসহ সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ।