বদলে যাচ্ছে ৩ বাহিনীর পোশাক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৯
পরিবর্তন হচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পোশাক। গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুলিশের সংস্কারসহ তাদের ইউনিফর্ম নিয়ে নানা দাবি-আলোচনার পর অবশেষে এই তিন বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সবার মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। সেজন্য পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নতুন পোশাক অনুমোদন হতে পারে খুব শিগগিরই। ইতোমধ্যে ১৮টি পোশাক পরা পুলিশ, আনসার ও র্যাবের প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুলিশের পোশাক হবে লোহার (আয়রন) রঙের। র্যাবের পোশাক হবে জলপাই (অলিভ) রঙের। আর আনসারের পোশাক হবে সোনালি গমের (গোল্ডেন হুইট) রঙের। কবে থেকে পোশাক পরিবর্তন হবে, জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ধীরে ধীরে পরিবর্তন হবে। পুলিশকে জনবান্ধব করতে হলে বাহিনীটির প্রশিক্ষণেও পরিবর্তন আনতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার এবং তাদের পোশাক পরিবর্তনের দাবি ওঠে।
যতবার পুলিশের পোশাক পরিবর্তন : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা সাতদিন থানায় পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় কাজে ফেরেননি তারা। এ সময় তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের দাবিও উত্থাপন করা হয়। তবে পুলিশের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল, তা হলো পোশাক পরিবর্তন। এ সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনও এই দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের প্রাথমিক সুপারিশ করেছে।
খাকি রং দিয়ে শুরু : যখন এ অঞ্চল ব্রিটিশ শাসিত ছিল তখনই পুলিশ ব্যবস্থা চালু হয়। তবে প্রথম দিকে কোনো নির্ধারিত পোশাক ছিল না। কিছু সময় পর তাদের জন্য ‘সাদা পোশাক’ দেয়া হয়। কিন্তু পোশাক নিয়েও একটা সমস্যা দেখা দেয়। পুলিশ সদস্যদের সাদা ইউনিফর্ম ডিউটি করার সময় অল্প সময়ের মধ্যে নোংরা হয়ে যেত। পরে ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ অফিসার স্যার হ্যারি লুমসডেনের পরামর্শে পুলিশের ইউনিফর্মটি হালকা হলুদ এবং বাদামি রঙে রাঙানো হয়েছিল। তারপর চা পাতা, পানি ব্যবহার করে সুতির কাপড়ের রং রঞ্জকের মতো তৈরি করে ইউনিফর্মের ওপর লাগানো হতো। যার ফলে পোশাকের রঙ খাকি হয়ে যায়। সেই বছরই পুলিশে ‘খাকি রঙের‘ পোশাক গৃহীত হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাঙালি পুলিশ সদস্যরা খাকি রঙের পোশাক ব্যবহার করেন। অনেকে অবশ্য ‘সাদা পোশাকেও’ লড়াই করেছেন পাকসেনাদের বিরুদ্ধে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২০০৪ সালে পুলিশের পোশাকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে। সেই বছর পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে মহানগরগুলোয় ‘হালকা জলপাই’ রঙের করা হয়। আর জেলা পুলিশকে দেয়া হয় ‘গাঢ় নীল’ রঙের পোশাক। এলিট ফোর্স র্যাবের ‘কালো’ ও এপিবিএন সদস্যদের পোশাক তৈরি করা হয় ‘খাকি, বেগুনি আর নীল’ রঙের মিশ্রণে। এরপর ২০২০ সাল থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। কিন্তু নানা কারণে নতুন পোশাক পায়নি বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বিদ্রোহ ঘটনার প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সে সময় বাহিনীর মনোগ্রাম এবং পোশাকেও পরিবর্তন আনা হয়।
তিন বাহিনীর পোশাক নিয়ে সারজিস আলমের প্রতিক্রিয়া : এ দিকে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাকের পরিবর্তন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। গতকাল বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক পোস্টে সারজিস লেখেন, ‘স্বভাব, চরিত্র, খাসলত পরিবর্তন না করে পোশাক পরিবর্তনে কোনো লাভ নাই। সমস্যা পোশাকে না, পুরো সিস্টেমে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে নাশকতা ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের ব্যবহারের জন্য আরো সাউন্ড গ্রেনেড ও কাদানে গ্যাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে সীমান্তে বিএসএফ কাদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে বলেও জানান তিনি। সে কারণে বিজিবির জন্য সাউন্ড গ্রেনেড ও কাদানে গ্যাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সীমান্তে এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী মাসে বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এখনো অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। দেশে এখন অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা কমে ৩৩ হাজার ৬৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ২২৬ জন। কেউ অবৈধ অভিবাসীদের দেশে থাকতে সহায়তা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৩১ জানুয়ারির পরে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।