২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ মাঘ ১৪৩১, ২০ রজব ১৪৪৬
`

বঞ্চনা ঘোচাতে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সাড়ে ৭ হাজার পদ সৃষ্টির উদ্যোগ

-

দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা পেশায় আসলেও বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চনার গল্প দীর্ঘদিনের। কোনো পদোন্নতি না পেয়ে যোগদান করা পদে চাকরি জীবন শেষ করতে হয়েছে অনেক কর্মকর্তাকে। স্বাস্থ্য ক্যাডার ও সার্ভিসে ৩৭ হাজার ৭৭৩ জন চিকিৎসকের বিপরীতে সহকারী অধ্যাপকের পদ ৩ হাজার ৩৮, সহযোগী অধ্যাপকের ১ হাজার ৯৬০ এবং অধ্যাপকের পদ রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৯টি। বিগত বছরগুলোতে ২০টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন করা হলেও তাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পদ সৃজন করা হয়নি। এতে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি পেলেও স্বাস্থ্য ক্যাডারের উচ্চতর বিশেষায়িত ডিগ্রিধারী কর্মকর্তারা পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই বঞ্চনা কমাতে সাড়ে ৭ হাজার সুপারনিউমেরারি পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এমন একটি প্রস্তাবনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সুপারনিউমেরারি পদ সৃষ্টির যোক্তিকতা তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দেশে সরকারি ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজ, ১টি ডেন্টাল কলেজ ও ১৮টি বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসহ ৫৬টি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় সংখ্যাক সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের সঙ্কটের কারণে মানসম্মত ও গুণগত চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের ২২৫টি বিষয়ে বর্তমান ২৮ হাজার ৯৮৪ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। তবে কিছু বিষয়ে পদোন্নতির সুযোগ তুলনামূলক সন্তোষজনক হলেও কার্ডিওলজি, গাইনি, অফথালমোলজি, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জারি, নিউরোসার্জারি, শিশু, চর্ম ও যৌন এবং কমিউনিটি মেডিসিনসহ অধিকাংশ বিষয়ে পদ সৃজন না হওয়ায় পদোন্নতির সুযোগ একেবারে অপ্রতুল। স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিপুল সংখ্যক উচ্চতর বিশেষায়িত ডিগ্রিধারী হওয়া সত্ত্বেও এসব মেধাবী চিকিৎসকগণের অনেকেই মেডিক্যাল অফিসার হিসেবেই অবসরে যেতে হচ্ছে। পদোন্নতির সুযোগ না পাওয়ায় মেধাবী এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের সামাজিক ও মানসিক হতাশা ও বঞ্চনার ফলে কর্মস্পৃহা হ্রাস পাচ্ছে।

পদের অভাবে স্বাস্থ্য ক্যাডার/সার্ভিসের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দীর্ঘদিন বিলম্বিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৩৯ সহকারী অধ্যাপক, ১ হাজার ৬৭৮ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ৮৩০ জন অধ্যাপকসহ মোট ৭ হাজার ৫৪৭ জন চিকিৎসকের বেতন স্কেল পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয়েছে। ফলে তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারের অতিরিক্ত কোনো আর্থিক সংশ্লেষ থাকবে না। চিকিৎসায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, বিপুলসংখ্যক রোগীর বিশেষায়িত সেবা প্রদান এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ক্লিনিক্যাল সেবা নিশ্চিতকরণ এবং পদোন্নতি বঞ্চিত বিপুল চিকিৎসকের পদোন্নতি নিশ্চিতকরণ, তাদের সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি এবং পদোন্নতির বঞ্চনা নিরসনে সুপারনিউমেরারি পদ সৃজন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্রুত পদোন্নতির দাবি জানায় বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম নামে একটি সংগঠন। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং বৈষম্য নিরসনে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্রুত পদোন্নতির লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানায়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের আহ্বায়ক ডা: মির্জা মো: শামসুল আরেফিন বলেন, স্বাস্থ্য প্রশাসন বিসিএস ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি না দিয়ে, ‘পদ নাই-পদোন্নতি নাই’ নীতি মেনে চলছে। আমরা দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত। অন্য ক্যাডারে থাকা আমাদের জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তারাও পদে আমাদের সিনিয়র। এটি আমাদের জন্য একটা মানসিক পীড়ার কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দীর্ঘদিন মেডিক্যাল অফিসার পদে আটকে থাকা চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবি জানাচ্ছি। এতে সরকারের আর্থিক কোনো চাপ পড়বে না। কারণ আমরা এরই মধ্যে ওই বেতন পাচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement